লতা না গাইলে সেদিন বিশ্বজয়ী কপিলদের সম্বর্ধনাও দিতে পারত না বোর্ড
লতা না গাইলে সেদিন বিশ্বজয়ী কপিলদের সম্বর্ধনাও দিতে পারত না বোর্ড
ভারত বিশ্ব জয় করে এল ১৯৮৩ সালে। সারা দেশ আনন্দে আত্মহারা। এদিকে তখন ফক্কা পকেট বিসিসিআই-এর। মনে অনেক আনন্দ কিন্তু তা সেলিব্রেট করবার মতো ক্ষমতা তখন বোর্ডের নেই। কীভাবে বিশ্বজয় করে আসা ক্রিকেটারদের বিশেষ পুরস্কার দেবে বোর্ড? এগিয়ে আসেন লতা মঙ্গেশকর।
বোর্ড প্রধান কেন্দ্রীয় মন্ত্ৰী এনকেপি সালভে। তাঁর কাছে রাজ সিং দুঙ্গারপুর যান। বলেন লতা মঙ্গেশকরকে দিয়ে একটা অনুষ্ঠান করাবেন। তাহলে যা অর্থ হবে তা দিয়ে ক্রিকেটারদের বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হবে। সুর সম্রাজ্ঞীকে বলতেই তিনি রাজি হয়ে যান। ক্রিকেট তাঁর খুব প্রিয় খেলা , ভারত বিশ্ব জয় করেছে। তিনি গান গাইবেন না হতেই পারেন না। অনুষ্ঠান হবে দিল্লিতে।
তিনি এক রেডিও ইন্টারভিউতে জানিয়েছিলেন, 'আমি রাজি হয়ে যাই। ১৭ আগস্ট দিল্লিতে পৌঁছে যাই। আমি , সুরেশ ওয়াদেকর, নীতিন মুকেশ ওই অনুষ্ঠানে সাহায্য করেন। রাজীব গান্ধী উপস্থিত ছিলেন সেই অনুষ্ঠানে' লতা সেদিন গেয়েছিলেন ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের সুর করা 'ভারত বিশ্ব বিজেতা' বলে একটি গান। কপিল, গাভাস্কাররাও গলা মেলান ওই গানে। কনসার্ট থেকে উঠে আসে ২০ লক্ষ টাকা। সেই সময়ে যা বিশাল ছিল। প্রত্যেক ক্রিকেটার পান এক লক্ষ টাকা করে। লতা নিজে এক টাকাও নেননি। ক্রিকেট প্রেমী লতা বিনা পয়সায় গান গেয়ে যান। এটাই তাঁর মহানত্ম। আজকের কোনও এমন পরিস্থিতি এলে ক'জন পারফর্মার এমন বিনা পয়সায় গান করে যাবেন তা বলা মুশকিল। হয়তো কেউ করবেই না। সম্রাজ্ঞী শুধু সুরে নয়। মানবিকতাতেও।
প্রয়াত
হয়েছেন
কিংবদন্তি
গায়িকা
লতা
মঙ্গেশকর
শনিবার
থেকেই
তাঁর
অবস্থার
অবনতি
হতে
শুরু
করে।
।
কোভিড-১৯
ধরা
পড়ার
পর
তিনি
মুম্বইয়ের
ব্রিচ
ক্যান্ডি
হাসপাতালে
গত
৮
জানুয়ারি
থেকে
ভর্তি
ছিলেন।
তাঁকে
আইসিইউতে
রেখে
চিকিৎসকদের
পর্যবেক্ষণে
চিকিৎসাও
করা
হচ্ছিল।
কিন্তু
শেষ
রক্ষা
আর
হল
না।
রবিবারই
তিনি
মারা
যান।
মৃত্যুকালে
তাঁর
বয়স
হয়েছিল
৯২
বছর।লতা
মঙ্গেশকরের
মৃত্যুর
খবর
শোনা
পর
শোকস্তব্ধ
গোটা
দেশ
তথা
হিন্দি
ফিল্ম
ইন্ডাস্ট্রি।
প্রসঙ্গত
কিছুদিন
আগেও
তাঁর
স্বাস্থ্যের
উন্নতি
হচ্ছিল।
সকলেই
তাঁর
সুস্থতার
জন্য
প্রার্থনা
করছিলেন।
তাঁর
নিউমোনিয়া
ধরা
পড়েছিল।
হাসপাতালে গত ২৭ দিন ধরে লড়াইয়ের পর রবিবার তাঁর মৃত্যু হয়। সঙ্গীত জগতে লতা মঙ্গেশকরের অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর সাত দশকের দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন অবিস্মরণীয় কিছু গান। যার মধ্যে অ্যায় মেরে ওয়াতন কি লোগো, ইয়ে কাহা আ গয়ে হাম, প্যায়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া সহ অসাধারণ কিছু গান। তাঁর এই প্রতিভায় মুগ্ধ ছিলেন গোটা বিশ্বের শ্রোতা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক গানের জগত।
'হেমন্তদা’র জন্যই আনন্দমঠে 'বন্দেমাতরম’ গেয়েছিলেন লতা, তারপর ইতিহাসে তাঁদের জুটি
তাঁর এই প্রতিভার জন্য তাঁকে ভারত রত্ন, পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ ও দাদাসাহেব ফালকে সহ বহু সম্মানে ভূষিত করা হয়। শনিবার থেকেই লতা জির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করায় তাঁকে ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে দেখতে আসেন বোন আশা ভোঁসলে। তিনি যদিও জানিয়েছিলেন যে তাঁর দিদি স্থিতিশীল রয়েছেন। আশা ভোঁসলের পাশাপাশি হাসপাতালে আসেন পরিচালক মধুর ভাণ্ডারকর, সুপ্রিয়া সুলে, রাজ ঠাকরে ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূশ গোয়েল। কিছুদিন আগেই লতা জির ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল।
হাসপাতালে চিকিৎসার পর তিনি পুরোপুরি নিজেকে ঘরবন্দী করে নিয়েছিলেন। জানুয়ারি মাসে তাঁর কোভিঢ-১৯ ধরা পড়ে এবং তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাঁর নিউমোনিয়াও ধরা পড়ে। চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে আইসিইউতেই চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু কোনওভাবেই বিশ্বের কোকিল কন্ঠীকে ধরে রাখা গেল না। লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যু সংবাদ শুনে গানের জগতে নেমেছে শোকের ছায়া।