লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে কন্ঠের অদ্ভুত মিল ছিল বলেই কি হারিয়ে গেলেন সুমন কল্যাণপুর
লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে কন্ঠের অদ্ভুত মিল ছিল বলেই কি হারিয়ে গেলেন সুমন কল্যাণপুর
রবিবার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৯২ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন লতা মঙ্গেশকর। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে এক যুগের অবসান হল। যদিও সেই যুগের গান কোনওদিন ফিকে হয়ে যাবে না শ্রোতাদের কাছে। আজীবন গানই যাঁর ধ্যান ধারণা সেই লতা মঙ্গেশকর গত ৮ দশক ধরে শ্রোতাদের বহু গান উপহার দিয়েছেন। কিন্তু শোনা যায় একেবারে লতার মতনই গলা ছিল সুমন কল্যাণপুরের।
কে এই সুমন কল্যাণপুর
ফিল্মে প্লেব্যাক করার ইচ্ছে সে ভাবে ছিল না কোনওদিন। কিন্তু জীবনের চিত্রনাট্য তাঁর জন্য অন্য কিছু ভেবে রেখেছিল। তিনি হয়েই গেলেন বলিউডের গায়িকা। ইন্ডাস্ট্রিতে সে সময় লতা মঙ্গেশকর ও আশা ভোঁসলের দাপট। কিন্তু অপূর্ব কণ্ঠস্বর আর প্রতিভার জোরে তিনিও নিজের জায়গা করে নিলেন। তবে যতটা স্বীকৃতি পাওয়ার কথা ছিল, ততটা পাননি বলেই মনে করেন অনেকে। তার একমাত্র কারণ তাঁর সঙ্গে লতা মঙ্গেশকরের গলার অদ্ভুত মিল খুঁজে পাওয়া যেত।
গানের তালিম
কৈশোরে ভাল লাগতে শুরু করে নূরজাহানের গান। স্কুলে বা বাড়ির অনুষ্ঠানে গান গাইতেন সুমন। সেরকমই এক অনুষ্ঠানে তাঁর গান শোনেন প্রখ্যাত মরাঠি সঙ্গীত পরিচালক কেশবরাও ভোলে। তিনি কথা বলেন সুমনের বাবা-মায়ের সঙ্গে। মেয়ের প্রতিভাকে নষ্ট না করার অনুরোধ করেন। নিজেই সুমনকে তালিম দিতে শুরু করেন তিনি। কেশবরাও বুঝেছিলেন সুমনের গলা লাইট মিউজিকের জন্য আদর্শ। তাঁর পরামর্শেই লাইট মিউজিকে মনোনিবেশ করেন সুমন। কেশবরাওয়ের উদ্যোগে ১৯৫৩ সালে প্রথম রেডিওতে গান সুমনের। এরপর সাফল্য যেন তাঁর পা ছুঁয়ে ফেলে। ‘বাত এক রাত কি', ‘দিল এক মন্দির', ‘নুরজাহান', ‘দিল হি তো হ্যায়', ‘জাহান আরা', ‘পাকিজা- লম্বা হতে থাকে সুমনের সাফল্যের তালিকা। শঙ্কর জয়কিষণ, রোশন, মদনমোহন, শচীনদেব বর্মন, নৌশাদ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সমকালীন সব নামী সঙ্গীত পরিচালকের নির্দেশনায় কাজ করেছেন তিনি।
লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে গলার মিল
মনোমালিন্যের জেরে মহম্মদ রফি ও লতা মঙ্গেশকর বেশ কিছুদিন ডুয়েট করেননি। সে সময়ে রফি ও সুমন কল্যাণপুর প্রায় ১৪০ টি ডুয়েট করেন। তাঁদের ডুয়েটের মধ্যে ‘আজকাল তেরে মেরে প্যায়ার কে চর্চে', ‘না না কর কে প্যায়ার'-এর মতো চিরসবুজ গান অসংখ্য। পাশাপাশি তিনি ডুয়েট করেছেন মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। তবে লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে তাঁর কন্ঠ ও গানের আদলের আশ্চর্য মিল। শোনা যায়, সুমনের গান অনকসময়ই লতা জির গান বলে পরিচিত হয়েছে।
কেন হারিয়ে গেলেন সুমন কল্যাণপুর
শোনা যায়, অনেক সময়েই লতা কোনও গান গাইতে রাজি না হলে সে গান যেত সুমনের কাছে। প্রযোজকের বাজেট কম থাকলেও বেছে নেওয়া হত সুমনের কণ্ঠকেই। কিন্তু অনেকেই মনে করেন, এই সাদৃশ্যই সুমনের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা তৈরি করেছে। প্রতিভার উপযুক্ত স্বীকৃতি তিনি পাননি। হেমন্ত মুখোপাধ্যারে নির্দেশনায় ‘কভি আজ কভি কাল' গানটিতে ডুয়েট করেন লতা মঙ্গেশকর ও সুমন কল্যাণপুর। সুমনের কণ্ঠে বাংলায় গাওয়া ‘মনে কর আমি নেই' ‘আমার স্বপ্ন দেখা'র মতো বহু গানই আজও অমলিন। কিন্তু একই কন্ঠের দুই শিল্পী তো রাজ করতে পারেন না ইন্ডাস্ট্রিতে। আর সে কারণেই হয়ত সুমন কল্যাণপুর ধীরে ধীরে ইন্ডাস্ট্রির বাইরে চলে যেতে লাগলেন। তবে প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন লতাকন্ঠী।