ব্যবধান শুধু ২৫ বছরের, শান্তিনিকেতনকে কাঁদিয়ে একইদিনে না ফেরার দেশে পাড়ি লতার
ব্যবধান শুধু ২৫ বছরের, শান্তিনেকতনকে কাঁদিয়ে একইদিনে না ফেরার দেশে পাড়ি লতার
সেটাও ছিল ৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতের সুর সম্রাজ্ঞীকে দেশিকোত্তম পুরস্কারে ভূষিত করেছিল বিশ্বভারতী। ১৯৯৭ সালে শান্তিনিকেতনে সেদিন চাঁদের হাট বসেছিল। আজও সেই ৬ ফেব্রুয়ারি। সালটা ২০২২। অর্থাৎ ব্যবধান মাত্র ২৫ বছরের। সুরসম্র্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর চলে গেলেন না ফেরার দেশে। বিশ্বের সুরের জগৎ ছেড়ে তিনি অন্য সুরলোকে পাড়ি দিলেন।
২৫ বছর আগে শান্তিনিকেতনে দেশিকোত্তম লতা
মুম্বইয়ে ব্রিচ কান্ডি হাসপাতালে রবিবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন লতা মঙ্গেশকার। নিভে যায় ভারত বিখ্যাত শিল্পীর জীবন-প্রদীপ। এই আজকের দিনেই ২৫ বছর আগে সেজে উঠেছিল শান্তিনিকেতন। দেশিকোত্তমে ভূষিত হবেন লতা মঙ্গেশকার। বিশ্বভারতীয় উপাচার্য চাঁর হাতে তুলে দেন এই পুরষ্কার। তারপর কেটে গিয়েছে ২৫ বছর। সেই ৬ ফেব্রুয়ারির সকালেই শান্তিনিকেতনে এল লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণের খবর। বিষাদের সুর নেমে এল সেই সঙ্গে।
লতা মঙ্গেশকর-কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় গল্পে মাতোয়ারা
লতার বিয়োগ বেদনায় শোকের আবহেই শান্তিনিকেতন থেকে স্মরণ করা হয় তাঁর দেশিকোত্তম পাওয়ার দিনের কথা। সেদিন মঞ্চে বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠেছিলেন লতা মঙ্গেশকর। গানের গল্পে গল্পে তিনি শান্তিনিকেতনের অ্যান্ড্রুজ পল্লিতে চলে গিয়েছিলেন কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে মোহরদির বাড়িতে।
রবীন্দ্র সঙ্গীতের অ্যালবাম তৈরির ইচ্ছা অপূর্ণই
সেদিন কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি রবীন্দ্র সঙ্গীতের অ্যালবাম বের করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন লতা। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি বলেছিলেন, তুমি যদি রাজি হও একসঙ্গে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইব। রবীন্দ্র সঙ্গীতের অ্যালবাম তৈরির খুব ইচ্ছা ছিল লতার। কিন্তু তা অধরাই রয়ে যায়। কারণ সেই অনুষ্ঠানের কিছুদিন পরই কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম আর করে হওয়া ওঠেনি। সেই আশা অপূর্ণই রয়ে যায়।
লতার প্রয়াণে প্রিয়জনকে হারানোর বেদনায় ব্যাথাতুর শান্তিনিকেতন
কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু হল ২০০ সালে। অর্থাৎ লতার দেশিকোত্তম পুরস্কার পাওয়ার তিন বছর পরে। সেদিনের অনুষ্ঠানের স্মৃতি আজও অনেক আশ্রমিকের কাছে অম্লান হয়ে রয়েছে। বিষাদের এই ঘটনা ঘটল সেই ৬ ফেব্রুয়ারি। আনন্দঘন অনুষ্ঠানের স্মৃতির সঙ্গে এবার সহাবস্থান হয়ে গেল বিষাদ-বেদনার। একই দিনে লতার প্রয়াণে প্রিয়জনকে হারানোর বেদনায় ব্যাথাতুর শান্তিনিকেতন।
বাংলা বিনম্র চিত্তে চিরকাল স্মরণ করবে লতা মঙ্গেশকরকে
বাংলার সঙ্গে লতার সম্পর্ক তো এক দিনের নয়। তাঁর বাংলার প্রতি অনুরাগ ছিল সঙ্গীত জীবনের প্রথম থেকে। তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে বাংলায় এসেছিলেন। তাঁর কাছে শিখেছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত। বাংলা সাহিত্যের প্রতি, রবীন্দ্র-সাহিত্যের প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিল। তিনি মারাঠি অনুবাদ পড়েছেন বাংলা সাহিত্যের। বাংলা সংস্কৃতির প্রতি তিনি ছিলেন শ্রদ্ধাশীল। সেই কারণেই বাংলা তাঁকে বিনম্র চিত্তে স্মরণ করবে চিরকাল।