এনআরসি বা অসমের জাতীয় নাগরিকপঞ্জী নিয়ে খুঁটিনাটি জানুন একনজরে
অসমের জাতীয় নাগরিকপঞ্জী নিয়ে একনজরে দেখে নেওয়া যাক বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয়।
দিন কয়েক আগে অসমের জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশের পর ৪০ লক্ষের বেশি মানুষের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বিরোধী নেতৃত্ব গর্জে উঠেছেন কেন্দ্র ও রাজ্য বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে। আসলে জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর নামে বাঙালি খেদাও অভিযানে নেমেছে বিজেপি। শীর্ষ আদালতও নিজেদের পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশ জানিয়েছে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয়।
এনআরসি কী
জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা দ্য ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স (এনআরসি) হল অসমের নাগরিকদের তালিকা। ১৯৫১ সালে এর পথ চলা শুরু হয়েছিল। ১৯৭১ সালের পর দীর্ঘ পথ পেরিয়ে বর্তমানে একটি চূড়ান্ত নাগরিকত্বের তালিকা তৈরি হয়েছে। যা নিয়ে শুরু বিতর্ক। প্রায় ৪০ লক্ষের বেশি মানুষের নাম বাদ পড়েছে। জনগণনা হওয়ার কথা কয়েকবছর অন্তরে। অসমে তা নিয়ে নানা বিতর্ক হয়। অভিযোগ, সেই ফাঁকে ঝাঁকে ঝাঁকে বাংলাদেশি নাগরিক বছরের পর বছর ধরে ঢুকে পড়ে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের আগে-পরের সময়ে। যার ফলে অসম জুড়ে শুরু হয় এক নতুন আন্দোলন।
[আরও পড়ুন:সড়কপথে অসম থেকে কি মেঘালয় যাচ্ছেন, সাবধান! এমন বিপদে আপনিও পড়তে পারেন]
ছাত্র-যুবদের আন্দোলন
আশির দশকে ছাত্র-যুবদের সেই আন্দোলন অনেক বড় হয়ে ওঠে। অসম ছাত্র ইউনিয়ন বিদেশিদের চিহ্নিতকরণে এগিয়ে আসে। দাবি ওঠে মুক্তিযুদ্ধের সময় অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২৫ জানুয়ারির পরে যাঁরা অসমে এসেছেন তাঁদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
[আরও পড়ুন:ত্রিপুরায় এনআরসি হলে সবার আগে ফল ভুগবেন বিপ্লব দেব! স্যোশাল মিডিয়ায় শুরু বিদ্রুপ]
এগিয়ে আসে কেন্দ্র
কেন্দ্র এই দাবির জেরে শেষ অবধি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়। অনুপ্রবেশ ও উদ্বাস্তু ইস্যুতে আলাদা বোর্ড তৈরির কথা হয়। তবে সেইসময়ে এগিয়ে এসেও শেষ অবধি বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। বহুবছর পরে ২০০৫ সালে কেন্দ্র, অসম সরকার ও অসম ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যে বৈঠক হয়। সেইসময়ে কেন্দ্র ও অসম রাজ্যে কংগ্রেস সরকার ছিল। তারপরও কাজ বিশেষ এগোয়নি। ২০১০ সালে ফের কাজ শুরু হলেও থমকে যায়।
আদালতে মামলা
এভাবে চলতে চলতে শেষ অবধি অসমের এক স্বেচ্ছ্বাসেবি সংস্থা শীর্ষ আদালতে বিষয়টি নিয়ে যায়। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের দীর্ঘ টালবাহনার কথা জানালে আদালত ভর্ৎসনা করে। সুপ্রিম কোর্টের তরফে কমিটিও তৈরি করে দেওয়া হয়। শীর্ষ আদালতের তরফে নির্দেশ যায়, ২০১৬ সালের আগেই নাগরিকপঞ্জী সংশোধনের কাজ শেষ করতে হবে। তারপরও কাজ এগোয়নি। ফের কেন্দ্র আদালতে ভর্ৎসিত হয়। অবশেষে গত বছরের শেষদিনে নাগরিকপঞ্জীর প্রথম তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে ১ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষের নাম ছিল না।
নতুন পঞ্জী
শেষ অবধি জুলাই মাসের শেষে দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে মোট ৩.২৯ কোটি মানুষের মধ্যে ৪০.০৭ লক্ষ মানুষের নাম বাদ গিয়েছে। যার পরে ফের বিতর্ক উসকে উঠেছে। অসমে বাঙালি খেদাও অভিযান চলছে বলে বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন। যেভাবে নাগরিকপঞ্জী বলবৎ হওয়ার কথা ছিল, বিজেপি সরকার তা করতে পারেনি বলে কংগ্রেসও অভিযোগ করেছে।
সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ
এই মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ, বাদ যাওয়া নাম নিয়ে কোনওরকম কড়া পদক্ষেপ করা যাবে না। কেন্দ্রকে এসওপি তৈরি করে তা আদালতের কাছে জমা দিতে হবে। তারপরে অনুমোদন পেলে তার ভিত্তিতে কাজ করা যাবে। কাউকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার নিয়ম যেন স্বচ্ছ্ব ও সুষ্পষ্ট হয়। যারা তালিকায় জায়গা না পেয়ে বিরোধিতা করেছেন, তাঁদের জন্য শুনানির ব্যবস্থা করতে হবে। পর্যাপ্ত সুযোগ দিতে হবে। এমনটাই জানিয়েছে আদালত।