স্কুল-কলেজে হিন্দুত্বের প্রচারে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, নামানো হল ৭৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক
২০১৮ সাল যতই শেষ হয়ে আসছে ততই যেন স্পষ্ট হচ্ছে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের বাদ্যি। বিজেপি ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির সূচনা করে দিয়েছে। পিছিয়ে নেই অন্য রাজনৈতিক দলগুলি।
২০১৮ সাল যতই শেষ হয়ে আসছে ততই যেন স্পষ্ট হচ্ছে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের বাদ্যি। বিজেপি ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির সূচনা করে দিয়েছে। পিছিয়ে নেই অন্য রাজনৈতিক দলগুলি। আসন্ন লোকসভা নির্বাচন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ ও বিজেপি-র কাছে এক প্রেস্টিজ ফাইট। তাই এই প্রস্তুতি থেকে বাদ নেই বাংলাও।
বিজেপি-র সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তাই বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনগুলিও বাংলার বুকে নেমে পড়েছে লোকসভার নির্বাচনের প্রস্তুতিতে। এই সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের মধ্যে অন্যতম বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। কয়েক বছর আগেও বাংলার বুকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-এর প্রভাব সেভাবে দেখা যায়নি। কিন্তু, যতই দিন গড়াচ্ছে ততই যেন হরেদরে বাড়ছে এই সংগঠনটি।
তাদের সংগঠনের প্রতি বাংলার একশ্রেণির মানুষের এই বিশ্বাসকেই হাতিয়ার করে কড়া হিন্দুত্ববাদের প্রচারে নেমে পড়তে চাইছে ভিএইচপি। আর সেই জন্য পুজোর মরসুমে ভিএইচপি রাজ্যের স্কুল-কলেজে এক বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। এতে ছেলে-মেয়ে মিলে ৭৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে নামানো হয়েছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আহ্বায়ক সৌরিশ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বজরং দলের ৪০,০০০ এবং দুর্গা বাহিনীর ৩৫,০০০ স্বেচ্ছাসেবক এই অভিযানে নেমেছেন।
রাজ্যের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে গিয়ে এই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী কোথাও কোথাও ইতিমধ্যে 'লাভ জিহাদ' নিয়ে প্রচার চালাতে নেমেও পড়েছে। পড়ুয়াদের বোঝানো হচ্ছে 'লাভ জিহাদ' কী এবং এটা হিন্দুদের পক্ষে কতটা ক্ষতিকারক। পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভিএইচপি-র আহ্বায়ক সৌরিশ মুখোপাধ্য়ায় জানিয়েছেন, 'লাভ জিহাদ নিয়ে প্রচারে আমরা হিন্দু বোনেদের কাছে যাচ্ছি, তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি লাভ-জিহাদ থেকে কীভাবে তারা নিজেকে রক্ষা করবে, এর জন্য বিভিন্ন স্কুল, কলেজে যাওয়া হচ্ছে এবং লিফলেটও বিলি করা হচ্ছে।'
এক শীর্ষস্থানীয় ভিএইচপি নেতার দাবি ভিএইচপি কোনওভাবেই ভালোবাসার বিরোধী নয়। কিন্তু ভালোবাসার নামে যেভাবে হিন্দু মেয়েদের ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে তার বিরোধিতা করছেন তাঁরা। তাঁর দাবি ভিএইচপি চায় অন্য ধর্মের ছেলেরা হিন্দু মেয়েদের বিয়ে করলে তারা ধর্ম পরিবর্তন করুক। হিন্দু মেয়েদের আমরা এই বার্তাই দিতে চাই। প্রেমের ফাঁদে তাঁরা ধর্ম না বদলে পুরুষসঙ্গীটিকে ধর্ম বদলাতে জোর দিক। প্রয়োজনে হিন্দুদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে এই প্রচার চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। এতে হিন্দু কিশোর-কিশোরী থেকে তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অভিভাবকদেরও সচেতন করা যাবে বলে বিশ্বাস করছে এই কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন।
শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস থেকে শুরু করে সিপিএম, কংগ্রেস এই অভিযানের তীব্র সমালোচনা করেছে এবং ভিএইচপি-কে ধিক্কার জানিয়েছে। বাংলা জুড়ে ধর্মের জিগিড় তুলে এক অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি করার চক্রান্ত হচ্ছে বলেও অভিযোগ। বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা পরিস্কার জানিয়েছেন, 'কারোরর যদি মনে হয় তার অস্তিত্বকে সংকীর্ণ করে দেওয়া হচ্ছে, তাহলে যথাযথ তথ্য নিয়ে তারা কোনও কর্মসূচি নিতেই পারেন। এই ধরনের উদ্যোগকে অলওয়েজ ওয়েলকাম।'
এদিকে, রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী সাফ জানিয়েছেন, 'ভিএইচপি, বিজেপি ও আরএসএস গত কয়েক বছর ধরেই ধর্মের ভিত্তিতে বাংলার মানুষকে বিভাজিত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকতে এমন অভিসন্ধি সফল হতে দেবে না। '
[আরও পড়ুন: বিজেপির ভয়ে লেজ গুটিয়ে ফিরে আসেনি তৃণমূল! প্রমাণ দিতে অসমে ঝড় তুললেন ফিরহাদ ]
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেছেন, 'এটা একটা বিপদের ঘণ্টাধ্বনি। সরকারের উচিত এর বিরুদ্ধে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া।' সিপিএম নেতা তথা বিধানসভায় বামেদের মুখ্য সচেতক সুজন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, 'তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার পুরোপুরি দেখেও না দেখার ভান করায় ভিএইচপি, আরএসএস-এর মতো সংগঠনগুলি বাংলায় জমি মজবুত করছে। এমনকী এই ধরনের জিনিসের মোকাবিলাতেও তৃণমূল কংগ্রেস অনেক নরম মনোভাব নিয়েছে। সরকারের উচিত অবিলম্বে এই ধরনের সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।'
[আরও পড়ুন:চালকের উপস্থিত বুদ্ধি! কলকাতায় বড় দুর্ঘটনা এড়াল রেল]