৫ বছর কেটে গেলেও কথা রাখেননি মুখ্যমন্ত্রী, ১০ ফ্যাক্টরে এবার ফয়সালা সরকারের
৫ বছর কেটে গেলেও কথা রাখেননি মুখ্যমন্ত্রী, ভোটের আগে জবাবদিহি চাইছে মানুষ। অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে নতুন রাজ্য গড়ে উঠেছে। সেই তেলেঙ্গানা রাজ্যে মেয়াদ শেষের আট মাস আগে হঠাৎ করেই ভোটের দামামা বেজেছে।
৫ বছর কেটে গেলেও কথা রাখেননি মুখ্যমন্ত্রী, ভোটের আগে জবাবদিহি চাইছে মানুষ। অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে নতুন রাজ্য গড়ে উঠেছে। সেই তেলেঙ্গানা রাজ্যে মেয়াদ শেষের আট মাস আগে হঠাৎ করেই ভোটের দামামা বেজেছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও সরকার ভেঙে দিয়ে জনমত যাচাই করে নিতে চাইছেন তাঁর জনপ্রিয়তা। লোকসভার আগেই নয়া পরীক্ষায় কেসি আর প্রশ্নের মুখে
প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয়নি
তেলেঙ্গানা গঠনের পর অনেক আশা জাগিয়ে সরকার গঠন করলেও এই পাঁচ বছরে মুখ্যমন্ত্রী কেসি রাও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেননি। তিনি যে সমস্ত প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন, তার কপর্দকও হয়নি এতদিনে। তেলেঙ্গানার প্রথম সরকার নতুন রাজ্যের মানুষের মন পেতে ব্যর্থ। তার প্রভাব পড়বে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে। আদৌ মসৃন হবে না টিআরএসের জয়।
তেলেঙ্গানা গঠনে প্রতিশ্রুতি
সরকার গঠনের আগে প্রতিশ্রুতিরি বন্যা বইয়ে ছিলেন তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কেসিআর। কংগ্রেস তেলেঙ্গানা গঠনের পক্ষে রায় দিয়েছিল। কিন্তু তেলেঙ্গানার মানুষ কংগ্রেসকে উচিত শিক্ষা দিয়েছিল। কংগ্রেস তেলেঙ্গানার মানুষের বিশ্বাসভঙ্গ করেছিল বলেই মনে করেন তেলেঙ্গানাবাসী। পাঁচ বছর আগের তাই ভোটবাক্সে প্রতিফলিত হয়েছিল তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির জয়।
খেলা ঘুরে গিয়েছে
এবার কিন্তু ঘুরে গিয়েছে অভিযোগ। কংগ্রেস পাল্টা প্রশ্ন করছে, এই পাঁচ বছরে কী দিল তেলেঙ্গানা সরকার। নির্বাচন দুয়ারে কড়া নাড়ছে, তখন প্রশ্ন উঠছে, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি কেসিআরও। ২০১৪ নির্বাচনে প্রতিশ্রুতির বন্যা ঘটালেও কথা রাখেননি তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী। দলিতের উন্নয়ন থেকে শিক্ষা ব্যবস্থা- সর্বক্ষেত্রেই প্রতিশ্রুতিভঙ্গের ছবি স্পষ্ট।
নয়া রাজ্যে ব্যর্থ টিআরএস সরকার
শুধু শিক্ষা ব্যবস্থাই নয়, পানীয় জল থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান, অন্যান্য ক্ষেত্রেও কোনও উন্নয়ন হয়নি। জলের সঠিক ব্যবহার হয়নি, হয়নি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, অন্যান্য সম্পদের প্রভুত উন্নয়ন হয়নি নবগঠিত রাজ্যে। রাজ্যের সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ রাজ্যকে সঠিক দিকে চালিত করতে। এখনও অন্ধ্রপ্রদেশের সঙ্গে বহু ক্ষেত্রেই লড়াই বলবৎ রয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়নে ব্যাঘাত ঘটেছে বারবার। পোলাভরম জলপ্রকল্পের বাস্তবায়নে বিলম্ব ঘটেছে।
কৃষকরা ফুঁসছে ক্ষোভে
কৃষকদের মধ্যেও ক্ষোভ রয়েছে। তাঁদের বিভিন্ন ইস্যুতে ক্ষোভ রয়েছে তেলেঙ্গানা সরকারের বিরুদ্ধে। সেচের জল সরবরাহে চূড়ান্ত ব্যর্থ সরকার। তেলেঙ্গানা সরকার গঠনমূলক কোনও কাজ করতে ব্যর্থ। ঋতু বন্ধু প্রকল্পের একর প্রতি কৃষকদের চার হাজার থেকে আট হাজার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করে সরকার। এর ফলে বিরাট সাবসিডির বোঝা চাপে। কিন্তু এই প্রকল্প কৃষকদের তেমন সহায়ক হয়নি। এখনও তেলেঙ্গানার ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ জমিতে চাষ হয় না।
জাতিগত-বিদ্বেষ বড় ফ্যাক্টর
তেলেঙ্গানায় জাতিগত-বিদ্বেষ একটা বড় ফ্যাক্টর এবার। এ রাজ্যে দলিত সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। যাঁরা এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে লড়বেন অন্তত ২০ শতাংশ ভোট সেদিকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। কেসিআর ভেলামা সম্প্রদায়ের। এ রাজ্যে এই সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন চার থেকে পাঁচ শতাংশ। অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মানুষ ৪০ শতাংশ। আদিবাসী রয়েছেন ১০ শতাংশ। খাম্মা ৬ থেকে ৭ শতাংশ। অন্যান্য সম্প্রদায় রয়েছে যৎ সামান্য। এই সব পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়কে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, নতুন রাজ্য হলে লাখো কর্মসংস্থান হবে।
কেন আগেভাগে নির্বাচন
তেলেঙ্গানার মানুষের বোধগম্য হচ্ছে না কেন আগেভাগে নির্বাচন। এখনও এই সরকারের মেয়াদ শেষ হতে বাকি ছিল সাত-আট মাস। তা সত্ত্বেও আট মাস আগে সরকার ভেঙে দিয়ে কেন নির্বাচনের ঘোষণা করা হল- সে প্রশ্নও করছেন তেলেঙ্গানাবাসীরা। নতুন রাজ্য গঠন হওয়ার পর ২০১৪-র প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে ১১৯ টি আসনের মধ্যে ৬৩ টি আসন দখল করেছিল তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি। অন্যদিকে রাজ্যে থাকা ১৭ টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১১ টি আসন দখল করেছিল তারা।
এনটি রামারাও ফ্যাক্টর
এনটিআর ফ্যাক্টর এখনও কাজ করবে তেলেঙ্গানায়। বিশেষ করে অনগ্রসর সম্প্রদায় ও কাম্মাস সম্প্রদায়ের কাছে এনটিআর আজও ফ্যাক্টর। কংগ্রেস রেড্ডি সম্প্রদায়ের কাছে জনপ্রিয়। আর টিডিপি জনপ্রিয় কাম্মাস ও অনগ্রসর শ্রেণির কাছে। এনটি রামারাওয়ের সূত্র ধরে টিডিপি এই সম্প্রদায়গুলিতে প্রভাব বজায় রেখেছে। কেসিআর-এর ক্ষমতায় আসার পিছনে রেড্ডি সম্প্রদায়েরে নেতাদের যোগদানের বিষয়টি ছিল। কিন্তু এবার কংগ্রেস আবার রেড্ডিদের সামনে নিয়ে আসছে।
একজোট কংগ্রেস-টিডিপি-সিপিআই
এবার তেলেঙ্গানায় কেসিআরের টিআরএসের বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছে তিন দল। কংগ্রেস, টিডিপি আর সিপিআই এবার একযোগে লড়াই করছে। কেসিআরএর মহাকুটামি গঠনের বিরুদ্ধে তাঁরা একযোগে লড়াই চালাচ্ছে। টিডিপি আর কংগ্রেস হল বৃহৎ শক্তি। তবে এখনও আসন রফার পর সমীকরণ কী দাঁড়ায় তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কংগ্রেস-টিডিপি-সিপিআইয়ের জোট বিজেপি সঙ্গ নেওয়া টিআরএসকে যোগ্য জবাব দিতে পারে এবার।
অ্যান্টি ইনকামবেন্সি ফ্যাক্টর
সর্বশেষে রয়েছে ক্ষমতায় থাকার প্রতিকূলতা। অর্থাৎ অ্যান্টি ইনকামবেন্সি ফ্যাক্টর। প্রতিটি টিআরএস বিধায়ক এ ব্যাপারে নেতিবাচর রিপোর্ট পেয়েছেন নিজের নিজের এলাকায়। বিভিন্ন প্রকল্পে ধাক্কা, সরকারে এসেও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ টিআরএস। বিশেষ করে জল সংকটের খেসারত দিতে হবে তাদের। ১০ শতাংশ প্রকল্প রূপায়নও করতে পারেনি বলে প্রচারে ঝড় তুলছে বিরোধীরা।