তৃণমূলের ‘প্রাক্তন’ এখন বঙ্গ বিজেপির ‘প্রাণভোমরা’, ২০১৭-য় ‘মহাবিপ্লব’ মুকুলের
২০১৭ সালের বিপ্লবের মাসেই বাংলার রাজনীতিতে মহাবিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের এই প্রাক্তন ‘সেকেন্ড ইন কম্যান্ড’।
সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন মুকুল রায়। ২০১৭ সালের বিপ্লবের মাসেই বাংলার রাজনীতিতে মহাবিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের এই প্রাক্তন 'সেকেন্ড ইন কম্যান্ড'। যিনি হাতে গড়়ে দলটা তৈরি করেছিলেন, সেই তিনিই আজ অতীত হয়ে গেছেন দলে। এক ফুল ত্যাগ করে আবার অন্য ফুলের বনে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার বাসনায় এখন লড়াই চালাচ্ছেন।
বোধনেই বিসর্জনের সুর
পুজোর আগেই প্রথম ধাক্কাটা দিয়েছিলেন মুকুল রায়। পিছতে পিছতে দু'নম্বর থেকে একেবারে ২০০ নম্বরে চলে গিয়েছেন তৃণমূলে। চারিদিক থেকে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর সামনেই আজকের দু'নম্বর-রা ছড়ি ঘোরাচ্ছিলেন, আর তিনি ব্রাত্য হয়ে এক কোণে বসে থাকছিলেন। মন থেকে মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই বিদায় বাঁশি তিনি বাজিয়েই দিলেন। দেবীপক্ষের মধ্যেই বিসর্জনের সুর বাজিয়ে তৃণমূল ছাড়ার কথা ঘোষণা করে দিলেন মুকুল রায়।
তৃণমূল ছাড়ার পর ফ্রি খেলোয়াড়
প্রত্যাশা মতোই তিনি পুজোর পর তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন। প্রাথমিক সদস্যপদ-সহ সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে একেবারে ফ্রি হয়ে গেলেন। সেইসঙ্গে রহস্য সৃষ্টি করলেন, কোথায় যাবেন তিনি। কংগ্রেস, বিজেপি নাকি নতুন দল। সমস্ত সম্ভাবনাই তিনি খোলা রেখে দিলেন। বিশেষ করে নতুন দল বা বিজেপিতে যোগের সম্ভাবনাই বাড়তে লাগল।
জাতীয়তাবাদী তৃণমূল নয়, বিজেপি-ই
সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে দল ছাড়ার মাস খানেক পর বিজেপিতেই ভিড়লেন তিনি। এর মাঝখানে ঘটল নাটকের পর নাটক। নাটকের শেষ অঙ্কের দলত্যাগী তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায় বেছে নিলেন গেরুয়া উত্তরীয়। বিজেপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ বিজয়বর্গীয় তাঁর গলায় পরিয়ে দিলেন গেরুয়া উত্তরীয়। সবুজ জার্সি ছেড়ে গেরুয়াধারী হলেন মুকুল রায়।
অমিত রইলেন ঘরে, স্বাগত জানালেন প্রসাদ
বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র গাড়িতে করে দলের সদর দফতরে আসেন মুকুল রায়। এই অফিসেই তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিলেন অমিত শাহ। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মুকুল রায়। তাঁকে পদ্ম শিবিরে স্বাগত জানান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। মুকুল রায়ের সাংগঠনিক দক্ষতা কাজে লাগাতে তাঁকে সাদরে বরণ করে নেন।
প্রকৃত পরিবর্তনের ডাক মুকুলের
মুকুল রায় বিজেপিতে যোগদান করেই বললেন, বিজেপির সাহায্য ছাড়া তৃণমূল প্রতিষ্ঠা পেত না। আমি মনে করি ভারতীয় জনতা পার্টির জন্যই তৃণমূলের এই উত্থান। বিজেপি সাম্প্রদায়িক দল নয়। তিনি নিঃশর্তে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন বাংলার মানুষ হাঁপিয়ে উঠেছে। তাঁরা পরিবর্তন চাইছেন। ২০২১-এ বাংলার মানুষকে সত্যিকারের পরিবর্তন দিতে হবে।
বিজেপির সদর দফতরে পা দিয়েই ‘বোমা’
একেবারে হাতে ‘বোমা' নিয়েই ঢুকেছিলেন বিজেপির সদর দফতরে। তবে তা ফাটালেন না মুকুল। তুলে রাখলেন বিজেপিতে তাঁর আত্মপ্রকাশের মঞ্চের জন্য। বিজেপির সদর দফতরে এসে দিলীপ ঘোষকে পাশে নিয়ে তিনি বলে দিলেন- রাজ্যে আমার ক্যাপ্টেন দিলীপ ঘোষ। তারপরই বিজেপির জার্সিতে ময়দানে নামা। সামনে একের পর এক পরীক্ষা।
পদ নেই, বঙ্গ-বিজেপির মুখ মুকুল
প্রায় দু'মাস হতে চলল মুকুল রায় বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন। তবু এখনও দলে তাঁর কোনও পদ নেই। তবে দল তাঁকে মুখ করেই আগামী নির্বাচনগুলিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই পৌঁছে দিতে চায়। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছে বিজেপি। এখনও পর্যন্ত বড় কোনও ‘ব্রেক থ্রু' দিতে না পারলেও মুকুল রায় আসার পর বঙ্গ বিজেপিতে যে জোয়ার এসেছে, তা বলাই যায়।