পারলেন না পূজা, থমকে গেল লড়াই, একরাশ হতাশা নিয়ে সর্বহারা বেদনায় পরিবার
থমকে গেল লড়াই। পারলেন না পূজা জীবনের লড়াইটাকে টিকিয়ে রাখতে। ২৯ জানুয়ারির রাতে মাথায় গুলি লাগার পর থেকেই লড়ছিলেন বছর একুশের তরুণী। কিন্তু, বুধবার রাতেই শেষে হয়ে গিয়েছে সবকিছু।
থমকে গেল লড়াই। পারলেন না পূজা জীবনের লড়াইটাকে টিকিয়ে রাখতে। ২৯ জানুয়ারির রাতে মাথায় গুলি লাগার পর থেকেই লড়ছিলেন বছর একুশের তরুণী। কিন্তু, বুধবার রাতেই শেষে হয়ে গিয়েছে সবকিছু। মেয়ের মৃত্যুর জন্য দোষীদের ফাঁসি চেয়েছেন পূজার মা। একই দাবি প্রতিবেশিদের।
মঙ্গলবার রাত ৯টা। সোনারপুরের গোড়খাড়ার ঘোষপাড়ায় মিষ্টির দোকান থেকে সিঙ্গারা কিনছিলেন পূজা মহাজন। কেনাকাটা শেষে বাড়ির রাস্তা ধরতেই ঘনিয়ে আসে বিপদ। আচমকাই পাশে এসে দাঁড়ায় একটি পালসার মোটর বাইক। তাতে থাকা দুই জন পূজার হাত ধরে টানার চেষ্টা করে। এমনকী তাঁকে মোটর-বাইকে তোলার চেষ্টা করা হয়। পূজা বাধা দিতেই বেরিয়ে আসে পিস্তল। মোটরবাইকের পিছনের সিটে বসে থাকা একজন নেমে এসে পূজাকে মাথায় গুলি করে। গুলি মাথা এফোঁড়-ওফোঁড় করে বেরিয়ে যায়। রক্তাক্ত পূজা এরপর সেখানেই লুটিয়ে পড়ে।
ঘটনাস্থলের কাছেই একটি ক্লাব ছিল। গুলির শব্দ শুনে সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন সদস্যরা। পূজাকে প্রথমে মহামায়াতলায় হিন্দুস্থান নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, তারা পূজাকে ভর্তি করতে অস্বীকার করে। এরপর পিয়ারলেস হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পিয়ারলেস হাসপাতালে চিকিৎসা হলেও পূজার অবস্থা সঙ্কটজনক বলেই জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। সেখানেই বুধবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক যুবক জানান, পূজা ঘটনার সময় একদম বাড়ির কাছেই চলে এসেছিলেন। আচমকাই লাল রঙের একটি পালসার এসে থেমেছিল তাঁর পাশে। পূজাকে কিছু বলতে বলতে একজন বাইক থেকে নেমে এসে মাথায় গুলি করে। ওই যুবকের দাবি, এরপর বাইকে উঠে গুলি করা ছেলেটি কাউকে ফোন করে এবং জানায় কাজ হয়ে গিয়েছে। এরপরই বাইক নিয়ে পালিয়ে যায়। ওই যুবকের মতে, পূজাকে খুনের জন্য সম্ভবত সুপারি কিলার নিয়োগ করা হয়েছিল।
স্থানীয় কিছু বাসিন্দাদের দাবি, পূজার বাবা জমি-বাড়ি বিক্রির কাজ করতেন। সম্প্রতি ৪৭ লক্ষ টাকা নিয়ে কিছু গণ্ডগোল হয়। যার জেরে পূজার বাবাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছিল। এরপর থেকেই পূজার উপরে সংসারের দায়ভার এসে পড়ে। পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে একটি যাদবপুর থানার কাছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজও করছিলেন তিনি। মেধাবী ছাত্রী পূজা বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করতেন। পূজার আচার-ব্যবহারের জন্য এলাকায় যথেষ্টই জনপ্রিয় ছিলেন। স্থানীয় মন্দিরে পূজার জন্য বুধবার অনেকে প্রার্থনাও জানান। কিন্তু, সব চেষ্টা ব্যর্থ করে পূজার মর্মান্তিক পরিণতি মেনে নিতে পারছে না সোনারপুরের গোড়খাড়ার ঘোষপাড়ার বাসিন্দারা।