আইপিএস রাজীব কুমারকে খুঁজে বের করা কতটা সহজ, কী বলছেন প্রাক্তন সহকর্মীরা
কলকাতার ইতিহাসে মানুষ প্রথমবার দেখছে একদল গোয়েন্দা হানা দিচ্ছেন হোটেল, রিসর্ট কিংবা সরকারি অফিসে। তাঁরা রাজীব কুমারের খোঁজ করছেন।
কলকাতার ইতিহাসে মানুষ প্রথমবার দেখছে একদল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা হানা দিচ্ছেন হোটেল, রিসর্ট কিংবা সরকারি অফিসে। তাঁরা কোনও সাধারণ নাগরিক নয়, আইপিএস রাজীব কুমারের খোঁজ করছেন। পদমর্যাদায় যিনি রাজ্যের এডিজি সিআইডি। আর বিধাননগর ও কলকাতার পূর্বতন পুলিশ কমিশনারও বটে। মঙ্গলবার এই খোঁজ চালানো পড়েছে ১২ তম দিনে। তাঁকে খুঁজে বের করা সিবিআই-এর পক্ষে কঠিন বলেই মনে করছেন প্রাক্তন সহকর্মীরা।
সিবিআই-এর পক্ষে অসম্ভব কাজ
সূত্রের খবর অনুযায়ী, একসময়ে যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছেন ৫৩ বছর বয়সী রাজীব কুমার, তাঁদেরকে জানিয়েছিলেন, সিবিআই-এর জন্য কাজ করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। এহেন রাজীব কুমারকে ইলেকট্রনিক নজরদারিতে একরকমের মাস্টার বলা চলে। কলকাতা পুলিশে তিনি এই পদ্ধতির প্রচলন করেছিলেন বলেই অনেকেই মনে করেন। লোকসভা ভোটের আগে পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্বে ছিলেন। আইআইটি রুড়কির কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার পরবর্তী সময়ে রাজ্য পুলিশের সিআইডির দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
১৯৮৯ ব্যাচের আইপিএস নজরদারির জন্য সংগ্রহ করেছিলেন ড্রোন, সিকিউরিটি ক্যামেরা, ট্র্যাকিং ডিভাইস। এছাড়াও সংগ্রহের তালিকায় রয়েছে ভিভিন্ন রকনের ইলেকট্রনিক গ্যাজেট। সবই তিনি করেছিলেন বাহিনীর জন্য, তাদের ট্রেনিং-এর জন্য।
বছরের পর বছর ধরেই খুব লো প্রোফাইল তিনি। এড়িয়ে চলেন মিডিয়া। বাম শাসনের পাশাপাশি তৃণমূল সরকারের সময়েই তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছিলেন জঙ্গি কিংবা মাফিয়াদের ধরায় সাফল্যের জন্য।
সিবিআই খুঁজছে ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে
সেই শীর্ষ অফিসারকেই সিবিআই খুঁজে বেড়াচ্ছে সারদ ও রোজভ্যালি চিটফান্ডের তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। ১৩ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্ট তাঁর রক্ষা কবচ তুলে নেওয়ার পর থেকেই এই খোঁজ শুরু হয়েছে। এরপরেই থেকেই রাজীব কুমার কিংবা তাঁর নিরাপত্তারক্ষীর মোবাইল ফোন সুইচ অফ হয়ে গিয়েছে। তাঁদের অবস্থান জানা সিবিআই-এরব পক্ষে একরকম অসম্ভব হয়ে উঠেছে। খোঁজ পাওয়া না গেলেও তাঁর আইনজীবীরা অন্তর্বর্তী জামিনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
হাইকোর্টের আইনজীবীদের একাংশের প্রশ্ন, কেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছের হিসেবে পরিচিত এক অফিসারকে এইভাবে পালিয়ে বেড়াতে হবে। এখনও সিবিআই-এর কোনও চার্জশিটেই তাঁর নাম নেই। তল্লাশি অভিযান জোরদার করতে ১৮ সেপ্টেন্বর দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশ থেকে ১২ আধিকারিক কলকাতায় আসেন। এর মধ্যে অফিসাররা রাজীব কুমারের স্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছেন ৪ বার। যিনি একজন ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিসের অফিসার। রাজীব কুমারের পৈত্তিক বাড়ি উত্তর প্রদেশের চান্দৌলিতেও গিয়েছিলেন তাঁরা।
কলকাতা পুলিশ বাহিনীর প্রিয় অফিসার
কলকাতা পুলিশের অনেক অফিসার এবং কনস্টেবল জানিয়েছেন, তাঁরা রাজীব কুমারকে ভালবাসেন এবং সম্মান করেন, তাঁর কাজের ধারা এবং পদ্ধতির জন্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, রাজীব কুমারের অধীনে কাজ করা এক পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন, তাঁরা যদি চান, তাহলে যে কলকাতা পুলিশের যে কোনও কর্মী কিংবা কোনও অফিসে কাটিয়ে দিতে পারেন। সিবিআই-এর দল শখানেক জায়গায় গেলেও, সেই জায়গার কোনও হদিশই পাবে না। আর এই পরিস্থিতিতে তিনি বন্ধু কিংবা আত্মীয়দের সঙ্গে থাকবেন না এটাই তো স্বাভাবিক। এছাড়াও লোকে তাঁকে চিনতে পেরে যাবেন এন জায়গা, হোটেল কিংবা রিসর্টেও যে তিনি যাবেন না সেটাও ধরে নেওয়াই যায়।
আর যদি তিনি কোনও ফোন ব্যবহার করেন, তাহলে তিনি সুরক্ষিত ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক থেকে কেবল ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকলের মাধ্যমেই কথা বলবেন। জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর আধিকারিক।
উল্লেখযোগ্য কাজ
দিল্লির প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার তাঁর বই 'ডায়াল ডি ফর ডন' বইটিতে উল্লেখ করেছেন, কী ভাবে সিআইডির স্পেশাল সুপার পদে থাকাকালীন ২০০২ সালে আমেরিকান সেন্টারে হামলায় অভিযুক্ত আফতাব আনসারিকে ধরেছিলেন। নীরজ কুমার এও উল্লেখ করেছেন, কীভাবে রাজীব কুমার ব্যবসায়ী পার্থ রায়বর্মণের অপহরণকারীদের ধরেছিলেন।
রাজনৈতিক অভিযোগ
২০১৮-র সেপ্টেম্বরে একটি অডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। সেই অডিও ক্লিপে কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং মুকুল রায়কে কথা বলতে শোনা গিয়েছিল। দলের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলছিলেন তারা। পরে মুকুল রায় অভিযোগ করেছিলেন এর পিছনে রয়েছেন রাজীব কুমারই।