দেশের এক সেরা পুলিশ অফিসারের কাহিনি! সারাজীবন কোন কীর্তির স্বাক্ষর রেখে গেলেন তিনি
গতমাসেই অবসর নিয়েছেন দিল্লি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার( ক্রাইম ব্রাঞ্চ) অলোক কুমার। কর্মজীবনে বহু মামলার সমাধান করেছেন খুব সহজেই।
গতমাসেই অবসর নিয়েছেন দিল্লি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার( ক্রাইম ব্রাঞ্চ) অলোক কুমার। কর্মজীবনে বহু মামলার সমাধান করেছেন খুব সহজেই। যার মধ্যে রয়েছে রাজধানী দিল্লির বুকে ঘটে যাওয়া অপরাধ সংক্রান্ত হাইপ্রোফাইল একাধিক মামলা। ১৯৯৫-এর তন্দুর হত্যা মামলা থেকে শুরু করে ২০০৮-এর সিরিয়াল বিস্ফোরণ এবং এবছরের জুলাইয়ে বুরারির পরিবারের আত্মহত্যার ঘটনা।
২০০৮ সালে দিল্লিতে সিরিয়াল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। এই হাই প্রোফাইল মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন অলোক কুমার। তিনি এবং তাঁর দলের সদস্যরা ছয় দিনেই এই মামলার কিনারা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু এর জন্য উচ্চমূল্য দিতে হয়েছিল তাঁকে।
স্ত্রীকে নিয়ে বৈষ্ণ দেবী থেকে ফেরার সময় ২০০৮-এর ১৩ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে সিরিয়াল বিস্ফোরণের খবর পান অলোক কুমার। ওই ঘটনায় ২০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আর আহত হয়েছিলেন ৯০ জনের মতো। হামলার দায় স্বীকার করেছিল ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, পরের দিনই তিনি নিজের লোধী কলোনির অফিসে যান। সেই সময় তিনি দিল্লি পুলিশের ডিসিপি (স্পেশাল সেল) ছিলেন। বিস্ফোরণের দায় স্বীকারের পরেই ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের মডিউল নিয়ে কাজ শুরু করেন তাঁরা। আর ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই বাটলা হাউসের জাকিরনগরে কয়েকজন সন্দেহভাজনের খোঁজ পান তাঁরা। ঘটনা সম্পর্কে জানিয়েছিলেন তৎকালীন ডিসিপি অলোক কুমার।
১৯ সেপ্টেম্বরের সকালে বাটলা হাউসে অলোক কুমারের নেতৃত্বেই অভিযান চালানো হয়। দশ ঘন্টা আগে এই অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে সেই এনকাউন্টারে প্রাণ যায় এক ইনস্পেক্টর এবং অপর এক পুলিশকর্মীর।
অলোক কুমার জানিয়েছিলেন, শুধু নিজের দলের নয়, ইনস্পেক্টর মোহনচাঁদ শর্মার মৃত্যুতে দিল্লি পুলিশেরও বড় ক্ষতি হয়। এর পরেই একটা বড় আঘাত আসে যখন এক জঙ্গি আতিফের পরিবারের তরফে অভিযোগ জানানো হয়, যে ইনস্পেক্টর শর্মাকে তিনিই হত্যা করেছেন। অলোক কুমার এবং তাঁর দলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। ফলে নিজের কাজের দিকে নজর দিতে পারেননি তিনি। তবে নিজের দফতর এবং পরিবার সবসময়ই পাশে ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।
সব থেকে বড় কথা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তরফ থেকে এবিষয়ে দিল্লি পুলিশকে ক্লিনচিট দেওয়া হয়। জানানো হয়, এই এনকাউন্টারের ক্ষেত্রে কোনও রকমের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাই ঘটেনি। তবে অভিযোগ ওঠায়, দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল চাপে পড়ে গিয়েছিল। সেই চাপ কাটিয়ে পুরো দমে কাজে ফিরতে দু থেকে তিন বছর লেগে যায় বলে জানিয়েছেন তিনি। ২০০৮ সালের সিলিয়াল বিস্ফোরণের ঘটনাটি এখনও বিচারাধীন।
৩৩ বছরের কর্মজীবনে অপর যেসব কুখ্যাত মামলার তদন্ত করেছিলেন অলোক কুমার তার মধ্যে রয়েছে ১৯৯৫-এর তন্দুর হত্যা মামলা এবং সাম্প্রতিককালের বুরারির গণ আত্মহত্যার ঘটনা। এর মধ্যে লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, জাতীয় রাজধানীর অপরাধের প্রোফাইলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে।
প্রযুক্তির উন্নতির কারণে পুলিশের কাজও কঠিন হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। আর অপরাধীরা যেসব পদ্ধতিতে অপরাধ করছে, তাতে তাদের চিহ্নিত করাও কঠিন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রাক্তন এই পুলিশ অফিসার।