মহাকরণে সাক্ষাৎ ভূতের সামনে পড়েছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়! স্মৃতিপটে সেই হাড়হিম করা গল্প
মহাকরণে সাক্ষাৎ ভূতের সামনে পড়েছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়! স্মৃতিপটে সেই হাড়হিম করা গল্প
সাতের দশকে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভার কনিষ্ঠতম প্রতিনিধি ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ছিলেন তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের মন্ত্রী। তারপর দীর্ঘ বাম জমানায় বিরোধী রাজনীতিতে হাত পাকানো রাজনীতিবিদ সুব্রত মুখোপাধ্যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ দফতরের সফল মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি আজ আর নেই। তাঁর স্মৃতি আজও অমলিন। সেই স্মৃতির প্রেক্ষাপট হাতড়াতেই উঠে আসে সেই হাড় হিম করা গল্প।
বঙ্গ রাজনীতির এক বর্ণময় চরিত্র সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ছিল প্রচণ্ড ভূতের ভয়। এমনকী তিনি নাকি ভূতও দেখেছিলেন। জলজ্যান্ত সাক্ষী ছিলেন ভূতুড়ে কাণ্ডের। সেই ঘটনা তিনি শুনিয়েছিলেন তাঁর পরিচিত মহলে। তাঁর আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মীরা সবাই জানতেন সেই ঘটনার কথা। খুব রসিক লোক ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ভূতের সেই গল্প বেশ রসিয়েই তিনি বলেছিলেন সবাইকে। তা আলাদা মাত্রাও পেয়েছিল সুব্রতর মুখে।
মহাকরণে ভুতুড়ে কাণ্ড কারখানা দীর্ঘদিন ধরেই প্রচলিত। আর সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মহাকরণের সঙ্গে যোগ প্রায় ৫০ বছরের। ফলে তিনি সেই ঘটনার সাক্ষী থাকবেন না, তা তো হতেই পারে না। তখন জরুরি অবস্থা চলছে। সংবাদপত্রকে পাতা তৈরি করে ছারাতে দেওয়ার আগে সরকারি প্রতিনিধিদের দেখাতে হত সরকারি সিলমোহর লাগানোর জন্য।
খোদ মন্ত্রী ও সরকারি আধিকারিকরা তা দেখে সিলমোহর দিতেন। তারপর তা ছাপাতে যেত। তেমনই একদিন ভিআইপি লিফটে করে তিনতলায় উঠছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। লিফট থেকে বেরিয়েই টানা অলিন্দ। সেখানে থাকেন পুলিশ আধিকারিকরা। স্বাভাবিকভাবে তাঁরা মন্ত্রীকে দেখলে স্যালুট করেন। লিফট থেকে নেমেই এক পুলিশকে দেখতে পান সুব্রতবাবু। তারপরই চক্ষু চড়কগাছ তাঁর।
ভাইফোঁটায় বোনেদের কাছে নাড়ু খাওয়া হল না, গান স্যালুটে শেষ কৃত্যের প্রস্তুতি কেওড়াতলায়
সুব্রত মুখোপাধ্যায় দেখতে পান একজন পুলিশ আধিকারিক দাঁড়িয়ে আছেন। মাটি থেকে ফুট খানেক উপরে ভাসছেন তিনি। হাওয়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন তিনি। তা দেখে হাড় হিম হয়ে যাওয়ার জোগাড়। গলা শুকিয়ে আসে। তড়িঘড়ি নিজের ঘরে ঢুকে যান তিনি। তিনি ডাক দেন সেন্ট্রাল গেটের পুলিশ অফিসারদের। তারপর তিনি জানতে পারেন, সেইদিন তিনতলায় কোনও আধিকারিককে পোস্টিং দেওয়া হয়নি। সেই থেকে রাতে আর কোনওদিন মহাকরণে আসেননি সুব্রতবাবু।
সেই ভূতের ভয় তিনি বহন করে চলেছেন সারাজীবন। ২০১৭ সালের জুন মাসে দার্জিলিংয়ে হয়েছিল ক্যাবিনেট বৈঠক। সেই বৈঠকে যোগ দিয়ে পাহাড়ে গিয়েছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তার থাকার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল একটা আলাদা ঘরে। তিনি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে বলেছিলেন তিনি একা থাকবেন না। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, সুব্রতদা খুব ভয় করতেন ভূতের। আর তাঁর কাছে ছিল ভূতের গল্পের ডালি। সেই গল্প আর শোনা যাবে না। শেষ হয়ে গেল একটা অধ্যায়ের।
শুধু জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকই নন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও জানান সুব্রতদার ছিল অসম্ভব ভূতের ভয়। সুব্রতদা কোনওদিন অন্ধকার ঘরে শুতেন না। আলো জ্বেলেই তিনি ঘুমোতেন। আর একদিন সবাই মিলে গাড়িতে করে যাচ্ছি। গাড়ি আলো নেভাতে দিতেন না। আবার একটা সময় সুব্রতদা বলে ওঠেন, গরুটার চার পা উধাও, হাওয়ায় ভাসছে।