'সব ভুলে যাও, নতুন করে জীবন শুরু কর', রবিনসন স্ট্রিট কাণ্ডে মিলল রহস্যে মোড়া চিরকুট!
কলকাতা, ১৪ জুন : রবিনসন কান্ডে একটি চিরকুট ঘিরে নতুন করে দানা বেঁধেছে রহস্য। এই চিরকুটে লেখা রয়েছে "এতদিনে যা হয়েছে সব ভুলে যাও। সব ছিক হয়ে যাবে। আবার নতুন করে জীবন শুরু কর।" প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান এই চিরকুটটি মৃত অরবিন্দ দে-র লেখা। কিন্তু কাকে উদ্দেশ্য করে এই চিরকুটটি লিখেছিলেন তিনি তা নিয়েই রয়েছে ধোঁয়াশা। [৬ মাস ধরে দিদির কঙ্কালের সঙ্গে বসবাস ভাইয়ের, খাবারও দিতেন নিয়মিত!]
এই চিরকুটে কে কাকে সব কিছু ভুলে যাওয়ার কথা বলেছেন? কী ভুলে যাওয়ার কথা বলেছেন? নতুন করে জীবন শুরু করার উপদেশ দিয়ে কী বোঝাতে চাওয়া হয়েছে? প্রশ্ন দানা বাঁধছে একাধিক।
চিঠির পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। পুলিশকে দেবযানীর এক সহকর্মী জানিয়েছেন, ২০০৮ সালে একদিন দেবযানীর বাড়িতে ফোন করলে ফোনের উল্টো দিক থেকে বলা হয় দেবযানী মারা গিয়েছেন। এদিকে অন্য এক সহকর্মীর কথায়, দেবযানীকে তিনি ২০০৮ সালের পরেও দেখেছেন। [রবিনসন স্ট্রিট কঙ্কাল কাণ্ড : একই বাড়িতে থেকে বাবা-মেয়ে-ছেলে একে অপরকে চিঠি লিখতেন?]
এদিকে আবার তদন্তে উঠে এসেছে পার্থর মাসি যোগ। একই শহরে থাকা সত্ত্বেও গত ১০ বছরে কখনও মাসির সঙ্গে যোগাযোগ করেননি পার্থ। অথচ দেবযানীর মৃত্যুর পর আচমকাই মাসিকে ঘন ঘন ফোন করে পার্থ উত্যক্ত করতেন। এমনকী মাসির মেয়ের কথাও বারবার জিজ্ঞাসা করতেন। একদিন মাসির বাড়িতেও গিয়েছিলেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। [কলকাতায় কঙ্কালের টঙ্কার: মিস্ট্রি তো ছিলই, এবার যোগ হল কেমিস্ট্রিও]
অরবিন্দ বাবুর আইনজীবীর থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে আজ কালের মধ্যেই ঠিক হওয়ার কথা ছিল, কে হবে অরবিন্দ বাবুর সম্পত্তির ট্রাস্টি। এখানেও চমক। দলিলে দেবযানীর নামও রাখা হয়েছিল। ফলে অরবিন্দ বাবুর মধ্যেও পার্থরই মতো অলৌকিক ধারণার সম্ভাবনা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। বাড়িতে মেয়ের কঙ্কালের সঙ্গে বসবাস করার পরও কীভাবে বাইরের দুনিয়ায় স্বাভাবিক ও নিরুত্তাপ থাকতেন অরবিন্দবাবু। এমনকী তিনি যে আত্মহত্যা করতে চলেছেন সে বিষয়ে টের পাননি কেউই।
অরবিন্দবাবুদের খরচাবহুল জীবনযাপনের দিকেই নজর গিয়েছে পুলিশের। শুধু নিরাপত্তারক্ষীর পিছনেই মাসে ৪০,০০০ টাকা খরচ করত দে পরিবার। এছাড়াও প্রায়শই নিরাপত্তারক্ষীকে দিয়ে শহরের নামি জামি হোটেল থেকে খাবার আনানো হতো। কিন্তু এত টাকা আসত কোথা থেকে। সূত্রের তরফে জানা যায়, অরবিন্দ বাবুর বিশাল সঞ্চয় ছিল। তার উপরে বেসরকারি সংস্থার চাকরি ছাড়ার সময় মোটা টাকা পেয়েছিলেন পার্থবাবুও। সেই টাকার সুদেই চলত এই সমস্ত খরচ। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীদের পিছনে এত টাকা কেন খরচ করা হতো তা ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।
রবিনসন স্ট্রিটের বাড়ি থেকে যে কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছে তা আদৌও দেবযানীর কিনা তা নিয়ে নিশ্চিত নন তদন্তকারীরা। সেই কারণেই কঙ্কালের ডিএনএ থেকে কার্বন টেস্ট করানো হচ্ছে। পাশাপাশি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির একটি সফটওয়্যারও ব্যবহার করা হচ্ছে। যেখানে কঙ্কালের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে দেবযানীর ছবি। [রবিনসন স্ট্রিটের কঙ্কালটা দেবযানীরই তো? ধন্দ ক্রমেই বাড়ছে]
এইসবের মাঝে পাভলভের চিকিৎসকরা অবশ্য জানিয়েছেন, আপাতত ভাল আছেন পার্থবাবু। ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া করছেন। মাঝেমধ্যে গানও গাইছেন। খুব শীঘ্রই পুলিশ পার্থবাবুর সঙ্গে কথাও বলতে চাইছেন।