কেন ভারতকে ভয় পাচ্ছে চিন? জানুন লাদাখ নিয়ে বেজিংয়ের ছটফটানির নেপথ্যে মূল কারণ!
চিনের দাবি ছিল, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার এপারে ভারতের দিকে পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ বন্ধ রাখা হোক৷ যা মেনে নিতে নারাজ ভারত৷ পাল্টা ভারত সরকারের তরফে বেজিংয়ের কাছে দাবি করা হয়েছে, যাতে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর স্থিতাবস্থা বজায় রাখা হয়৷ এরপরই গতসপ্তাহে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রাণ শহিদ হন ২০ ভারতীয় জওয়ান। সেনার পাল্টা জাবাবে প্রাণ হারায় অন্তত ৪০ চিনা সৈনিকও।
ভারতীয় সেনা তাঁদের নির্মাণ কাজ জারি রাখে
তবে এই আবহতেও ভারতীয় সেনা তাঁদের নির্মাণ কাজ জারি রাখে। আর শেষ পর্যন্ত গালওয়ানের যেই ব্রিজ নিয়ে এই বিবাদ শুরু হয়, তা তৈরি করতে সক্ষম হয় সেনা। এদিকে এই ব্রিজের উপর পাল্টা নজরদারি চালাতে তৎপর চিন সীমান্ত পারে তাদের সেনা বৃদ্ধি করেছে।
প্যাংগং লেকের উত্তরে অবস্থান করছে চিনা সেনা
ইতিমধ্যেই চিনা সেনারা প্যাংগং লেকের উত্তর তীরে ফিঙ্গার -৪ থেকে ৮ পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার করতে উচু স্থান দখল করে তা নিয়ন্ত্রণ করছে। গালওয়ান উপত্যকা অঞ্চলের অবস্থান ঐতিহাসিকভাবে পরিষ্কার। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে চিনের তরফে যে পদক্ষপে করা হচ্ছে, তা রীতিমতো বাড়াবাড়ি। এই পরিস্থিতি ফের সংঘর্ষ হওয়া সময়ের অপেক্ষা বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে কেন বেজিংয়ের তরফে এই তৎপরতা?
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে বিবাদ
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা হল ৩৪৪০ কিলোমিটারের একটা চিহ্নিতকরণ এলাকা। যার মাধ্যমে ভারতীয় সেনার দখলে থাকা এবং চিনা সেনার দখলে থাকা অঞ্চলকে আলাদা করা হয়৷ যেহেতু এলএসি একাধিক জায়গায় ওভারল্যাপ করে আছে, তাই চিনা নিজেদের অবৈধ দাবি সবসময় জানায়৷ প্রায়শই বিবাদ এবং মুখোমুখি বাদানুবাদ এখানকার সাধারণ ঘটনা৷ এলএসি তিনটি অংশে বিভক্ত৷ পশ্চিম, পূর্ব ও মধ্য৷
ডাবরুক-শিয়ক-ডিবিও রোড তৈরি করে ভারত
ভারতের দিকে গত বছর তৈরি করা ২৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাবরুক-শিয়ক-ডিবিও রোড তৈরি করা নিয়েই চিনের মূল আপত্তি৷ এই রাস্তাটি তৈরির ফলে সীমান্তে ভারতীয় সেনাবাহিনীর যাতায়াত এবং নজরদারি চালানোর ক্ষেত্রে অনেক বেশি সুবিধে হয়েছে৷ তবে পরপর সংঘর্ষ ও চিনের আপত্তি সত্ত্বেও ভআরত এই রাস্তা তৈরির কাজ জারি রাখবে বলে জানা গিয়েছে।
হিমালয় অঞ্চলে ভারতের সঙ্গে আঞ্চলিক বিবাদ
হিমালয় অঞ্চলে ভারতের সঙ্গে আঞ্চলিক বিবাদ থাকা সত্ত্বেও চিন সম্প্রতি লাদাখে ঢুকে পড়েছে৷ দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে যখন চিনা সেনা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে চলে এসেছে৷ প্যাংগং সো, ডেমচক, গালওয়ান উপত্যকা এবং দৌলতবেগ ওলডিতে ভারতীয় ও চিনা সেনা মুখোমুখি বাদানুবাদে জড়িয়েছে৷ এরই মধ্যে চিন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় নিজেদের অধিকার দাবি করেছে৷
ডোকলাব বিবাদ
২০১৭ সালের জুনে এক রাস্তা নিয়ে দু'দেশের উত্তেজনা চরমে পৌঁছয়। মেরুগ লা থেকে ডোকলাম থেকে যে সড়ক চিনা সেনা বানাচ্ছিল, তা সব ধরনের আবহাওয়া সইতে পারে। অর্থাৎ, সারা বছরই ডোকলামে সেনার যাতায়াত নিশ্চিত করতে চেয়েছিল বেজিং। ইয়াতুং থেকে জেলেপ লা পর্যন্ত একই ধরনের রাস্তা বানানোর চিনা পরিকল্পনাও তখন সামনে আসে। শুধু তাই নয়, ডোকলামকে কেন্দ্র করে গাড়ি রাখার বন্দোবস্ত, হেলিপ্যাড, বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব, এমন পরিখাও তৈরি করে চিন।
আকসাই চিন বিতর্ক
১৯৫০ সাল থেকে আকসাই চিন হল ভারত ও চিনের সবচেয়ে বিতর্কিত সীমান্ত এলাকা৷ এর এলাকায় প্রায় ৩৮ হাজার কিলোমিটার৷ ১৯৫৭ সালে চিন ওই এলাকা দখল করে৷ কিন্তু ভারত বারবার দাবি করে এসেছে যে, ওই এলাকা লাদাখের অংশ৷ ১৯৬২ সালে চিন আকসাই চিন বরাবর একটি রাস্তা তৈরি করে৷
গালওয়ান উপত্যকা নিয়ে মূল বিবাদ কী?
গালওয়ান নদী বিতর্কিত আকসাই চিন এলাকা থেকে ভারতের লাদাখ পর্যন্ত বিস্তৃত৷ ১৯৬২ সালের যুদ্ধে মূল এলাকাগুলির মধ্যে গালওয়ান উপত্যকাও অন্যতম ছিল, যেখানে ভারত ও চিনের সেনার মধ্যে লড়াই হয়েছিল৷ এই নদীর নামকরণ করা হয়েছে গোলাম রসুল গালওয়ানের নামে৷ যিনি একজন কাশ্মীরি বাসিন্দা এবং লাদাখে ঘুরে বেড়াতেন৷ যখন ভারত আকসাই চিনের অধিকারের দাবি অনড় থেকেছে, তখন চিনের তরফে গালওয়ান নদীর পশ্চিম এলাকাকে নিজের বলে দাবি করা হয়েছে৷
লাদাখে যুদ্ধ পরিস্থিতি! চিনের বিপুল সেনা সম্ভারকে টেক্কা দিতে ময়দানে ভারতীয় সেনা, কী হবে গালওয়ানে?