শুভেন্দুকে ঘরের মাটিতে গোহারা হারিয়ে নন্দীগ্রামের বদলা! কাঁথিতে একটা যুগের অবসান
শুভেন্দুকে ঘরের মাটিতে গোহারা হারিয়ে নন্দীগ্রামের বদলা! কাঁথিতে একটা যুগের অবসান
অধিকারী-রাজের অবসান। শুভেন্দু-গড় কাঁথিতে একটা যুগের অবসান হল। প্রায় তিন দশক কাঁথি পুরসভায় কর্তৃত্ব করেছেন অধিকারীরা। এবার অধিকারীদের ছাড়াই কাঁথি পুরসভার 'অধিকারী' হল তৃণমূল। তৃণমূল প্রমাণ করল ব্যক্তি নয়, দলই আসল। কাঁথি জিতে তৃণমূলের দাবি, শুভেন্দু অধিকারীর দর্পচূর্ণ হল পুরভোটের পরাজয়ে।
একে অপরকে নন্দীগ্রাম নিয়ে কটাক্ষ অব্যাহত
শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন। বিতর্কিত ছিল সেই জয়। আচমকাই সার্ভার বসে যাওয়া, লোডশেডিং, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জয়ী ঘোষণার পর ফের শুভেন্দুকে চূড়ান্তভাবে জয়ী ঘোষণা করা থেকে নন্দীগ্রামের ফলাফল নিয়ে বিতর্ক এখনও অব্যাহত। একে অপরকে নন্দীগ্রাম নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ে না কেউ।
শুভেন্দু পুরসভায় হারলেন, হারলেন নিজের বুথেও
সেই আঙ্গিকেই এবার ভোট হল কাঁথি পুরসভায়। কাঁথি পুরসভা বিজেপি বিধায়ক তথা বিরোধী দলনেতার ‘হোম-গ্রাউন্ড'। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নিজের হোম-গ্রাউন্ডে হারলেন গোহারা। শুধু পুরসভাতেই হারলেন না। শুভেন্দু অধিকারী তাঁর নিজের ওয়ার্ডে হারলেন, হারলেন তাঁর নিজের বুথেও।
কাঁথি পুরসভায় তিন দশক ধরে রাজত্ব অধিকারীদের
কাঁথি পুরসভায় তিন দশক ধরে রাজত্ব করছেন অধিকারীরা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পিতৃদেব শিশির অধিকারী বা তাঁর পরিবারের কেউ গত তিন দশক ধরে কাঁথি পুরসভার দায়িত্বে ছিলেন। কাঁথির কর্তৃত্ব ছিল অধিকারী পরিবারের হাতেই। ১৯৯০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন শিশির অধিকারী। তারপর ২০০৬ সালে কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান হন শুভেন্দু অধিকারী। ২০১০ সালে শুভেন্দু অধিকারী সেই পদ ছাড়লে চেয়ারম্যান করা হয় তাঁর ছোট ভাই সৌমেন্দু অধিকারীকে। ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনিই ছিলেন দায়িত্বে। তৃণমূল ছাড়ার পর তাঁকে পুর প্রশাসকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
তৃণমূল থেকে সরতেই খসে পড়ল অধিকারীদের মুকুট
হাতছাড়া হল অধিকারী পরিবারের। তৃণমূল থেকে সরে যাওয়ার পর খসে পড়ল অধিকারী পরিবারের মুকুট। একুশের বিধানসভার আগে শুভেন্দু-সৌমেন্দু বিজেপিতে যোগ দিয়েছিল। খাতায়-কলমে শিশির অধিকারী বা সেজ ছেলে দিব্যেন্দু অধিকারী তৃণমূলের সাংসদ থাকলেও, তাঁদের নিয়ে জল্পনা ছিল।
অধিকারী পরিবারের প্রতিও মানুষের অনাস্থা বলে বর্ণনা
এবার সব জল্পনা শেষ হল কাঁথিতে অধিকারী-রাজের অবসানে। যে দাপট দেখিয়ে শুভেন্দু অদিকারী নন্দীগ্রামে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন, এখন সেই দাপট উধাও। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে হারানোর পর রাজ্য রাজনীতিতে যে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন, তা এখন স্তিমিত। এবার নিজের পুরসভা, নিজের ওয়ার্ড, নিজের বুথে হেরে তিনি ধরাশায়ী। এই ঘটনাকে শুভেন্দু অধিকারীর দর্পচূর্ণ বলে দাবি করছেন তৃণমূল নেতারা। এটা অধিকারী পরিবারের প্রতিও মানুষের অনাস্থা বলে বর্ণনা করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
নিজের ঘরে তাঁকে হারিয়ে নন্দীগ্রামে হারের বদলা
কাঁথি পুরসভার ২১টি ওয়ার্ডের মধ্যে তিনটি ওয়ার্ডে শুধু বিজেপি জয় পেয়েছে। তৃণমূল জয় পেয়েছে ১৭টি ওয়ার্ডে। আর বাকি একটি ওয়ার্ড গিয়েছে নির্দলের দখলে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের একদা অনুগত সৈনিক শুভেন্দু অধিকারী এবার গড় দখলে রাখতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন কাঁথি পুরসভায়। অধিকারী পরিবারের কেউ প্রার্থী না হলেও তাঁর জয় ছিনিয়ে আনার উদ্যোগে কোনও কমতি ছিল না। তবু তিনি ব্যর্থ হলেন। বুঝতে পেরেছিলেন জয় আসবে না, তাই ভোটের দিন তিনি নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলেন। শেষপর্যন্ত হার মানতে হল শুভেন্দু অধিকারীকে। নিজের ঘরে তাঁকে হারিয়ে নন্দীগ্রামে হারের জ্বালা খানিকটা মেটালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
একুশে বাংলায় যে হাওয়া ছিল বিজেপির
একুশে বাংলায় যে হাওয়া ছিল বিজেপির, তা এখন নেই। শুভেন্দুর পালের সেই হাওয়া কাড়তে ভবানীপুর ছেড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়েছিলেন। একুশরে নির্বাচনের পুরো ফোকাশটা নন্দীগ্রামে ঘুরিয়ে কাজ হাসিল করে নিয়েছিলেন তিনি। নিজে হেরে দলকে জিতিয়ে দিয়েছিলেন রেকর্ড আসনে। তারপর থেকেই বাংলায় বিজেপির ভরাডুবি হয়েই চলেছে। বিজেপি নামতে নামতে তলানিতে পড়ে গিয়েছে। এবার পুরভোটে ২৩ শতাংশ ভোট খুইয়েছে বিজেপি। সেই প্রেক্ষাপটে কাঁথি পুরসভায় বিজেপির হার ছিল কালের নিয়ম।