ভাঙড়ে নির্দল প্রার্থীদের মিছিলে গুলি-বোমা, মৃত ১, দেখুন ভিডিও
পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে রণক্ষেত্র ভাঙড়। নির্দল প্রার্থীদের মিছিলে গুলি ও বোমাবাজির অভিযোগ।
পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল ভাঙড়। শুক্রবার বিকেলে পঞ্চায়েত নির্বাচন উপলক্ষে বের হওয়া নির্দল প্রার্থীদের মিছিলে গুলি ও বোমাবাজির অভিযোগ উঠল। এর ফলে হাফিজুল মোল্লা নামে এক নির্দল সমর্থকের মাথায় গুলি লাগে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, সেখানে কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় হাফিজুলের।
এই ঘটনায় ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছে। অভিযোগ, নির্দল প্রার্থীদের মিছিলে উপরে হামলা চালায় একদল দুষ্কৃতী। এরা সকলেই তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের লোকজন বলে অভিযোগ। মিছিল লক্ষ করে গুলি চালানোর সঙ্গে সঙ্গে বোমাবাজিও করা হয়। মিছিলের প্রায় সামনেই ছিলেন হাফিজুল মোল্লা নামে এক যুবক। গুলি সরাসরি তাঁর মাথা এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়।
ভাঙড়ের পাওয়ার গ্রিড আন্দোলনের হোতা জমি-জীবিকা-বাস্তুতন্ত এবং পরিবেশরক্ষা কমিটি এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে। নির্দল হিসাবে দাঁড়ানো তাদের প্রার্থীদের তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বারবার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছিলেন কমিটির অন্যতম শীর্ষনেত্রী শর্মিষ্ঠা চৌধুরী। বৃহস্পতিবার তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের লোকজন ভাঙড় পাওয়ার গ্রিড আন্দোলনে গুলি লেগে মৃত্যু হওয়া মাফিজুল খান-এর বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ করা হয়। এমনকী, মাফিজুলের বাবা সুকুর আলিকেও মারধরের অভিযোগ ওঠে আরাবুল এবং তাঁর ছেলে হাকিমুলের বিরুদ্ধে। এর সপ্তাহ দেড়েক আগে কমিটির এক নির্দল প্রার্থীর ছেলেদের অপহরণের অভিযোগ উঠেছিল আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে। মোবাইলে সেই নির্দল প্রার্থীকে কী হুমকি দিয়েছিল সেই কথোপকথনের রেকর্ড ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা সামনে নিয়ে এসেছিল।
শুক্রবার জমি-জীবিকা-বাস্তুতন্ত এবং পরিবেশরক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে যে নির্দল প্রার্থীদের পক্ষ থেকে মিছিল বের করা হবে তা জানত পুলিশ। এমনকী পুলিশের কাছ থেকে এই মর্মে অনুমতিও নেওয়া ছিল। অভিযোগ, শুক্রবার সকাল থেকেই নানাভাবে নির্দল প্রার্থী এবং তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলা লোকেদের উপরে দফায় দফায় হামলা হচ্ছিল।
দুপুরে মিছিল শুরু হতেই গুলি ও বোমাবাজি শুরু হয়। বাইকে আগুন লাগিয়ে দিয়ে দুষ্কৃতীরা মিছিল ভঙ্গ করারও চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ। এরপরই মিছিল লক্ষ করে সমানে গুলি চলতে থাকে। আর সে সময়ই মাথায় গুলি লাগে মাছিভাঙার যুবক হাফিজুলের।
ঘটনার তীব্র নিন্দা করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করেন সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী। তিনি ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ়-প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের কাছেও নালিশ জানান। ডিজি, পুলিশ সুপার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে তথ্য ও ছবিও পাঠানো হয়েছে। যদিও, এই ঘটনা নিয়ে আরাবুল ইসলামের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এবারের পঞ্চায়ে নির্বাচনে বারবারই বেনজির সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠছে। যার জেরে ১ মে থেকে তিন দফায় পঞ্চায়েতের ভোট গ্রহণও বাতিল হয়েছে। ১৪ মে একদফায় ২০ জেলায় পঞ্চায়েত নির্বাচন। ইতিমধ্যেই নির্বাচনী সন্ত্রাস নিয়ে বৃহস্পতিবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। তাঁর দাবি, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ছাড়াই যেভাবে এবারের পঞ্চায়েতে নির্বাচন হচ্ছে তাতে তা 'ব্লাডবাথ' হবে। কবি শঙ্খ ঘোষও রাজনৈতিক সন্ত্রাস নিয়ে কবিতা লিখেছেন। যার জেরে তাঁকে 'কোথাকার কোন কবি' বলে মন্তব্য করেছেন বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। এই রকম পরিস্থিতিতে ভাঙড়ে নির্বাচনী সন্ত্রাসের মৃত্যুর ঘটনা আতঙ্কের পরিবেশকে আরও বাড়িয়ে তুলল বলেই মনে করা হচ্ছে।