সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূল থেকে ফিরছে বামে, বালিগঞ্জে হাওয়া ঘোরার আভাস রাজ্য-রাজনীতিতে
একুশের নির্বাচনের পর থেকেই সিপিএম কামব্যাকের রাস্তা খুঁজছিল। উপনির্বাচন ও পুরসভা নির্বাচনে বিজেপিকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিবল সিপিএম।
একুশের নির্বাচনের পর থেকেই সিপিএম কামব্যাকের রাস্তা খুঁজছিল। উপনির্বাচন ও পুরসভা নির্বাচনে বিজেপিকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিবল সিপিএম। আর ফিরে আসার এই আভাস পেয়েই সংখ্যালঘু ভোট ফেরাতে নিয়েছিলেন বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ। তা যে বৃথা যায়নি, বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলই তার প্রমাণ।
সিপিএম হারানো ভোটব্যাঙ্ক ফেরাতে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহ করেছে। সংগঠনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি তাদের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ফরে কলকাতার বুকে সিপিএমকে ফেরার রাস্তা দেখিয়েছে। সেই রাস্তা ধরেই বিজেপিকে টপকে সিপিএম হয়ে উঠেছে তৃণমূলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসিয়েই সিপিএম আবার বাংলায় প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে চলেছে।
কলকাতা পুরসভা ভোটে সিপিএম কামব্যাকের রাস্তা খুঁজে পেয়েছিল। একইসঙ্গে তারা লক্ষ্য করেছিল বিজেপিতে যাওয়া ভোট আবার তাদের দিকে ফিরে আসছে। এরপর হারানো সংখ্যালঘু ভোটে যদি তাদের দিকে কিছুটা ফেরানো যায়, তাহলেই তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ দিতে পারবে তারা। বিজেপির প্রতি মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে, তারা বিকল্প খুঁজছে। এই অবস্থায় তৃণমূলের বিকল্প হয়ে ওঠার লড়াইয়ে সিপিএম অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে।
বিজেপির স্বীকারোক্তি সিপিএমের কাছে পাথেয় হতে চলেছে। কলকাতায় যে বিজেপি সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল, তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি মানছেন কলকাতায় সাংগঠনিকভাবে দুর্বল তারা। কিন্তু সাংগঠনিক দুর্বলতাই যে হারার কারণ, তা মানছে না বিজেপি। সুকান্ত মজুমদারের কথায় বালিগঞ্জ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বিধানসভা কেন্দ্র। এখানে প্রায় ৪৫ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। এই ভোট পুরোটাই তৃণমূলের দখলে ছিল।
সুকান্ত মজুমদারের কথায়, এখন যদি তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে পাটল ধরে, সেটা যে সিপিএম তথা বাম বা কংগ্রেসের দিকে যাবে, বলাই যায়। সেই ভোট কখনই বিজেপির দিক আসবে না। তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক ধস নামতে শুরু করেছে, তাই সিপিএম সেই ভোট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বলে সুকান্ত মজুমদারের ব্যাখ্যা।
সম্প্রতি সিপিএমের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও সংখ্যালঘু মুখকে দলের প্রধান করা হয়েছে। মহম্মদ সেলিম হয়েছেন রাজ্য সিপিএমের সম্পাদক। তারপর থেকে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় বিশেষভাবে নজর দিয়েছে সিপিএম। সংখ্যালঘু ইস্যু হলে, তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। যেমন আনিস খান রহস্যমৃত্যু বা রামপুরহাটের বগটুইকাণ্ড, সিপিএম ছুটে গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে সিপিএম।
আর বালিগঞ্জে সংখ্যালঘু ৪৫ শতাংশ ভোট বাড়ি বাড়ি প্রচারে গিয়ে মানুষকে তারা বুঝিয়েছেন। বাবুল সুপ্রিয়ের বিজেপি-যোগ টেনে আনা হয়েছে যেমন, তেমনই সিপিএম সায়রা হালিমের মুখকে ব্যবহার করে মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছে বালিগঞ্জে। ফলে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটে ভাগ বসাতে সফল হয়েছে বামেরা। যে ভোটটা বাম থেকে তৃণমূলে গিয়েছিল, সেটা আবার বামে ফিরে এসেছে, তাও বলা যায়।
সংখ্যালঘু ভোট বামেদের দিকে ফিরতে থাকায়, বাম বা সিপিএম আশাবাদী হতেই পার। তারা ফেরে পুরনো জৌলুষ ফিরে পেতে পারে। ফের বাংলায় সিপিএম বনাম তৃণমূল লডড়াইয়ের আবহ তৈরি হচ্ছে। বিজেপি ক্রমশন পিছিয়ে পড়ছে বাংলায়। সংখ্যালঘু এলাকা তো বটেই, সংখ্যাগুরু এলাকাতেও বিজেপির পালের হাওয়া কাড়ছে সিপিএম তথা বাম।