এমন এক গ্রাম যেখানে ‘গোখরো’ নিয়ে খেলা করে শিশুরা, প্রতিবাড়িতেই পোষ্য বিষধর
এমন এক গ্রাম যেখানে ‘গোখরো’ নিয়ে খেলা করে শিশুরা, প্রতিবাড়িতেই পোষ্য বিষধর
সাপের কথা হলেই সুকুমার রায়ের 'বাবুরাম সাপুড়ে' কবিতার কথা মনে পড়ে যায়। 'বাবুরাম সাপুড়ে, কোথা যাস বাপুরে, আয় বাবা দেখে যা, দুটো সাপ রেখে যা'। সেই ছেলেবেলায় 'কিশলয়'-এর পাঠ্যসূচিতে ছিল এই কবিতা। সেই কবিতার মতোই সাপ নিয়ে বাস এ গ্রামে। তাও আবার যে সে সাপ নয়, কোবরা। আসলে নজরুল ইসলামের লেখায় যা ধরা পড়ে, তা-ই চাক্ষুষ দেখা যায় এই গ্রামের ছবিতে। এমন গ্রাম আর কোথাও নয়, রয়েছে এই ভারতেই। ভূ-ভারতে তা আর আছে কি না সন্দেহ।
‘সাপের ঝাঁপি বুকে করে কাটাই দিবস রাতি’
নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন- চিতা বাঘ মিতা আমার, গোখরো খেলার সাথী, সাপের ঝাঁপি বুকে করে কাটাই দিবস রাতি। এ গ্রাম তেমনটাই দেখা যায়। বলা যায়, এ গ্রাম একেবারেই স্বতন্ত্র। এখানে এক থেকে একাশি'র মানুষ খেলা করে বিষধর কোবরার সঙ্গে। বিষধর সাপ দেখে ভয়ে আঁতকে ওঠে না এ গ্রামের মানুষ।
‘ফোঁস-ফাঁস করলেও এ সাপ কাউকে কাটে না’
এ গ্রামের সঙ্গে সাপের মিতালির সম্পর্ক। সাপ নিয়ে তারা খেলে, সাপ নিয়েই তাদের বাস। ফোঁস-ফাঁস বা ঢুঁশ-ঢাঁশ করলেও এ সাপ কাউকে কাটে না। শিশুদের সঙ্গে দুধ-ভাত খায়, ছোটা-হাঁটা করেই থাকে তারা। সাপের সঙ্গে অদ্ভুত এক সহাবস্থান এ গ্রামের মানুষের। গ্রামের নামটি শেঠফল বা শেটপাল।
পুনে থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে এই গ্রাম
মহারাষ্ট্রের সোলাপুর জেলার গ্রাম শেটপাল। পুনে থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে শেটপাল নামে ওই গ্রাম রয়েছে। এখানে প্রতিটি বাড়িতে কোবরা বা গোখরো বা কেউটে সাপের স্থায়ী আবাস রয়েছে। এখানে প্রতিদিন তাদের পুজো করা হয়। গ্রামবাসীরা সাপগুলির কোনওভাবে আঘাত করে না বা ক্ষতি করে না। আসলে, কোবরা এ গ্রামে থাকে পরিবারের সদস্যের মতো।
দেশের বুকে স্বতন্ত্র হয়ে উঠেছে ‘কোবরা গ্রাম’
এই শেঠফল বা শেটপাল গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে এই সাপের বাস। সেই কোবরা বা গ্রামের বাসিন্দারা কেউই একে অপরের ভয় করে না। ভারত এমন একটি গ্রাম আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ গ্রাম দেশের বুকে স্বতন্ত্র হয়ে উঠেছে কোবরা গ্রাম হিসেবে। এখানে সাপ রয়েছ প্রতি বাড়িতেই সদস্যের মতো থাকে। বিষধর সাপকে পুজো করা হয়।
সাপকে পুজো করে এবং খাওয়ায় গ্রামের মানুষ
এ গ্রামের মানুষ মনে করেন, সাপ তাদের প্রাচীন উৎস। সমস্ত সাপই নাগরাজ বাসুকির প্রতিরূপ। নাগরাজ বাসুকি হিন্দু দেবতা শিবের গলায় স্থান পেয়েছিলেন। তাই দেবতা জ্ঞানে বিবেচনা করা হয় কোবরাকে। প্রতি বছর নাগপঞ্চমী উৎসবে ভারতের গ্রামের হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ ঐশ্বরিক আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য সাপকে পুজো করে এবং খাওয়ায়।
প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে কোবরা
মহারাষ্ট্রের পুনে থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে শোলাপুর জেলার শেটপাল গ্রামে বিষধর কোবরা বা গোখরো প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে। সাপের স্থায়ী আবাস তৈরি রয়েছে ওই গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে। শুধু প্রতি বাড়িতে নয়, গ্রামের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে কোবরা। শেটপাল গ্রামের প্রটিতি বাড়িতে নিত্য পুজো হয় কোবরার!
আসলে কোবরাকে পরিবারের সদস্য হিসাবে বিবেচিত
এই শেটপাল গ্রামে সাপের চলাচলে কোনও বাধা নেই। এ গ্রামে আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষের বাস। প্রায় ২৬০০ গ্রামবাসীর মধ্যে কেউই কোবরার কোনও ক্ষতি করে না। আসলে কোবরাকে পরিবারের সদস্য হিসাবে বিবেচনা করে সবাই। তাঁকে পুজ্য এবং সম্মানের আসনে বসিয়ে রাখেন বাসিন্দারা।
প্রত্যেকেই তাদের বাড়িতে ‘দেবস্থানম’ তৈরি করেছে
শেটপাল গ্রামের বাসিন্দারা প্রায় প্রত্যেকেই তাদের বাড়িতে দেবস্থানম বা দেবতার আবাস তৈরি করেছেন সাপের জন্য। বিষধর কোবরাকে তাঁরা দেবতাজ্ঞানে সেই দেবস্থানে রাখে। ঘরের একটি বিশেষ কোণ আলাদা করে রাখা হয়েছে। যেখানে কোবরারা তাদের ইচ্ছামতো ঘোরাফেরা করতে পারে।
শিশুরা এখানে হামাগুড়ি দেয় সাপের সঙ্গে
যদি গ্রামে কেউ একটি নতুন বাড়ি তৈরি করে, তবে সে বাড়ির একটি ফাঁপা অংশকে সাপের জন্য 'দেবস্থানাম' হিসাবে উৎসর্গ করে। এই গ্রামে সাপকে পোষ্য প্রাণী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এমনকী স্কুলেও নিয়ে যাওয়া হয় কোবরাকে। শিশুরা এখানে হামাগুড়ি দেয় সাপের সঙ্গে। তারা সাপকে ভয় পায় না, কারণ তারা সাপের সঙ্গে বড় হয়ে উঠেছে!