ঝড়ে মাঝ নদীতে উল্টাল নৌকা, দুদিন গাছের ডালে ঝুলে প্রাণরক্ষার কাহিনি গায়ে কাঁটা দেয়
দুদিন গাছের ডালে ঝুলে প্রাণরক্ষার কাহিনি গায়ে কাঁটা দেয়
নৌকা তখন মাঝ নদীতে। হঠাৎ উঠেছিল প্রবল ঝড়। সেই ঝড়ের প্রকোপে মাঝ নদীতেই উল্টে গিয়েছিল নৌকা। আর কোনও খোঁজ মেলেনি মৎস্যজীবীদের। তিন দিন আগের সেই ঘটনার পর প্রায় সবাই-ই ধরে নিয়েছিলেন মাঝ নদীতে সলিল সমাধি হয়েছিল ৯ মৎস্যজীবীর। কিন্তু মিরাকেল যে অনেকভাবেই ঘটতে পারে, তা শোনা গেল এই কাহিনিতে।
প্রবল ঝড়ে তাঁদের নৌকা মাঝ নদীতে উল্টে গিয়েছিল
সবাই যখন ধরে নিয়েছেন ৯ মৎস্যজাবী আর বেঁচে নেই, মাঝ নদীতে হারিয়ে গিয়েছেন তাঁরা, মঙ্গলবার সেই ৯ মৎস্যজীবী অসম সাহসের পরিচয় দিয়ে ফিরে এসেন সুন্দরবনের গ্রামে। আর শোনালেন তাঁদের বেঁচে ফিরে আসার রোমহর্ষক কাহিনি। প্রবল ঝড়ে তাঁদের নৌকা মাঝ নদীতে উল্টে গিয়েছিল। তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন উত্তাল নদীতে। তারপরের ঘটনা গায়ে কাঁটা দেবে।
তীরের কাছাকাছি আনার চেষ্টা বৃথা, মাঝ নদীতে ঝাঁপ
বিজয়া দশমীর পরের দিন শনিবার বিদ্যাধরী নদীতে মাঝ ধরতে গিয়েছিলেন তাঁরা। তাঁরা যখন সুন্দরবনের চাঁদদোয়ানি জঙ্গলের কাছে মাঝ ধরছিলেন, তখনই আকাশ কালো করে দুর্যোগ নামল। সঙ্গে ঝড়ে। ঝড়ের তেজ এত ছিল নৌকার হাল ধরে রাখা যাচ্ছিল না। সেইসঙ্গে নদী উত্তাল। প্রবল ঢেউয়ে নৌকা যে কোনও মুহূর্তে উল্টে যাবে। বলতে বলতেই নৌকা উল্টে গেল। তীরের কাছাকাছি আনার চেষ্টা বৃথা হল তাঁদের।
গাছের ডালে ঝুলে, মাথার উপরে বৃষ্টি, নীচে বাঘের ভয়
উল্টে যাওয়া নৌকা থেকে ঝাঁপ দিয়ে নদীতে পড়ছিলেন তাঁরা ৯ জনেই। শুরু হয়েছিল জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার লড়াই। প্রাণে বাঁচার অদম্য ইচ্ছায় সাঁতার কেটে তাঁরা উঠেছিলেন তীরে। চারিদিকে জঙ্গল। তীরে উঠে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছিলেন গাছের ডালে। মাথার উপরে বৃষ্টি, নীচে বাঘের ভয়। সসেমিরা হয়ে তাঁদের রাত কেটেছে। দিনের আলো ফুটলেও ঘন জঙ্গলে তো ঢোকা যাবে না। তাহলে কী করবেন তাঁরা ভেবে কূল-কিনারা পাচ্ছিলেন না।
দুদিন ভর গাছের ডালই আশ্রয়, উপায় মেলেনি কিছুই
৯ মৎস্যজীবী ঝড়ের মুখে সবকিছু হারিয়েছিলেন। না আছে খাবার, না পানীয় জল, নৌকাও নেই যে তাঁরা ফিরবেন। আর যোগাযোগ করার উপায়ও পাচ্ছিলেন না। রবিবার সারাদিন কেটে গিয়েছে। রাতে তাঁরা ফের গাছের ডালে আশ্রয় নিয়েছেন। শেষে সোমবার তাঁরা অন্য এক মৎস্যজাবীদের সাহায্যে যোগাযোগ করতে সম্ভবপর হন।
প্রাণ বাঁচানো লড়াই, সাহসিকতার নির্দশন ৯ মৎস্যজীবীর
এরপর বাড়ির লোকেরা স্বস্তি ফিরে পান। তাঁরা স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে বিদ্যাধরী নদীর ধারের চাঁদদোয়ানির ঘন জঙ্গল থেকে তাঁদের উদ্ধার করেন। এই প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁরা যেভাবে প্রাণ বাঁচাতে লড়াই করেছেন, যেভাবে সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে ফিরে এসেছেন কোনও প্রশংসাই তাঁদের জন্য যথেষ্ট নয়।
প্রতীকী ছবি