জীবন্ত পাথর! মানুষের মতোই হাঁটা-চলা করে বাড়তেও থাকে, এমনটা কেন হয় জানেন
জীবন্ত পাথর! মানুষের মতোই হাঁটা-চলা করে বাড়তেও থাকে, এমনটা কেন হয় জানেন
বিশ্বে কত না অজানা জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তার কতটুকুরই বা হদিশ পাওয়া গিয়েছে। তবে বিজ্ঞানের কৃপায় যা জানা গিয়েছে তা-ই অনেক। এমনই একটি অমূল্য বস্তূ হল জীবন্ত পাথর। রোমানিয়ায় পাওয়া যায় এই বিশেষ শ্রেণির পাথর, যা মানুষ বা কোনও প্রাণীর মতো হাঁটাচলা করতে পারে, আবার বৃদ্ধিও পায়।
জীবন্ত পাথর, বিজ্ঞানের পরিভাষায় কী নাম
রোমানিয়ায় আবিষ্কৃত এই বিস্ময়কর বস্তুর অদ্ভুত সব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তার জন্যই এই পাথরের নাম দেওয়া হয়েছে জীবন্ত পাথর। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই পাথরের নাম হল 'ট্রোভান্ট'। ১৯৯০ সালে জিওলজিস্ট ডি এম মার্গোকি প্রথম এই পাথরটির কথা বর্ণনা করেন। তাঁর লেখা দ্য টার্সিয়ারি ওল্টিনায় গ্রন্থে পাথরটির কথা উল্লেখ রয়েছে। ওই ট্রোভান্ট নামটি তাঁরই দেওয়া।
মানুষের মতো আকারও হয় পাথরটির
তবে জিওলজিস্ট ডি এম মার্গোকিই যে এই ট্রোভান্টের আবিষ্কর্তা তা নয়। এই পাথরের আবিষ্কার হয় বহু যুগ আগে। রোমানিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা এই পাথরের দৈবিক ক্ষমতা রয়েছে বলে বিশ্বাস করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাথরের আকার আয়তন বাড়ে, তা নানা প্রাণীর মতো হয়, এমনকী মানুষের মতো আকারও হয় পাথরটির। তাঁরা এই পাথর দিয়েই তৈরি করতেন বিভিন্ন প্রাণীর মূর্তি। বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তিও।
কোনও ভৌতিক কারণ নয়, নেপথ্যে বিজ্ঞান
এ তো গেল পাথরের ইতিহাস। বা কেন এই পাথরকে জীবন্ত পাথর বলা হয়, তার কথা। কিংবা কী করে তার নাম হল ট্রোভান্ট, সেই কাহিনি। কিন্তু পাথর মানুষ বা কোনও প্রাণীর মতো বাড়ে কী করে, তার কারণ কী? কী সেই রহস্য? যে কারণে পাথর বাড়তে থাকে, নির্দিষ্ট আকার নিতে থাকে? না, কোনও ভৌতিক কারণে নয়, এর পিছনে রয়েছে বিজ্ঞান।
ট্রোভান্ট পাথরের বৃদ্ধির নেপথ্য কারণ
বৈজ্ঞানিকরা বলেন, ভূত বা ভৌতিক কোনও কারণ নয়, পাথরের বৃদ্ধির পিছনে রয়েছে ভৌত বিজ্ঞান। ট্রোভ্যান্টের আণবিক গঠনেও লুকিয়ে রয়েছে আসল রহস্য। তাঁরা বলেন, এই পাথরগুলোর একটি শক্ত কোর থাকে। তার বাইরে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট-সমৃদ্ধ বেলেপাথরের মোটা আস্তরণ থাকে। বৃষ্টির জলের সংস্পর্শে এলেই রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে তা সিমেন্টের মতো শক্ত হয়ে যায়।
১০ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে পাথরটি
ওই রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে ওই পাথরের আয়তনও বেড়ে যায়। প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে পাথরটি। ছোট ছোট পাথরগুলিও এক হাজার বছর ধরে বৃদ্ধি পেতে পারে ৪-৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। শুধু আয়তন বৃদ্ধিই যে হয় ওই পাথরের তা নয়, পাথরটি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যেতে পারে নিজে থেকেই।
একা একা হাঁটাচলাও করতে পারে ট্রোভান্ট
অর্থাৎ পাথরটি একা একা হাঁটাচলাও করতে পারে। তা কী করে সম্ভব? বৈজ্ঞানিকদের ব্যাখ্যায়, জলের সংস্পর্শে এলে যে একেবারে পুরো পাথর বৃদ্ধি পেতে থাকে তা নয়। বিভিন্ন খাঁজ থেকে পাথরের বিভিন্ন অংশের সৃষ্টি হয়। গাছের ডাল যেমন করে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে, এই পাথরও তেমনই শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে জলের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়ায়। এইভাবে শাখা-প্রশাখা বৃদ্ধির ফলে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে ট্রোভান্ট বা জীবন্ত পাথর।
গাছের গুঁড়ি কাটলে যেমন দেখায়
বৈজ্ঞানিকরা বা গবেষকরা পাথর কেটে পরীক্ষা করে দেখেছেন ট্রোভান্টের বৈশিষ্ট্যগুলির যৌক্তিকতা। এবং এই কাজে নামে তাঁরা বেশ অবাকও হয়েছেন। ওই পাথরের ভিতরে রয়েছে চক্রাকার দাগ। একেবারে গাছের গুঁড়ি কাটলে যেমন দেখা যায়, ঠিক তেমনই চক্র রয়েছে পাথরের অভ্যন্তরে। ভিন্ন ভিন্ন বর্ণ ও ঘনত্বের স্তর রয়েছে। তবে তা কেন, সেই ব্যাখ্যা এখনও দিতে পারেননি গবেষকরা। তাঁরা এখনও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রোভান্টকে নিয়ে।
ট্রোভান্ট বা জীবন্ত পাথরের ইতিবৃত্ত
ভূতত্ত্ববিদরা এই পাথর নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলেছেন। এই পাথরগুলি পরীক্ষা করে তাঁরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছেন যে, ওই ট্রোভান্ট বা জীবন্ত পাথরগুলি ৬০ লক্ষ বছর আগে তৈরি। আগ্নেয়গিরির বিশেষ ধরনের লাভা থেকে তা তৈরি হয়েছে বলেই মনে করছেন তাঁরা। তারপর তা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে।
ওই পাথর আসলে ভিনগ্রহী! বিশ্বাস
পাথরগুলি কালের নিয়মে বহু খণ্ডিত হয়েছে বলেও ভূতত্ত্ববিদরা মনে করছেন। ফলে এই পাথরের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়ছে। বড় পাথর খণ্ডিত হয়ে ছোটো প্রস্তরখণ্ডে পরিণত হয়েছে। বৈজ্ঞানিকরা এ কথা বললেও, স্থানীয় মানুষেরা বিশ্বাস করেন, এই পাথর আসলে ভিনগ্রহী। সেই লোককথার প্রতি আজও বিশ্বাস অটুট।
স্থানীয়দের বিশ্বাসে জীবন্ত পাথর
স্থানীয়দের কথায়, রোমানিয়ার গ্রাম ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোথাও এই পাথরের অস্তিত্ব মেলে না। যদি লাভা থেকেই ওই পাথরের সৃষ্টি হবে, তা হলে কি অন্য কোথাও তা হত না। তাহলে রোমানিয়া ছাড়া অন্যত্র ওই জীবন্ত পাথর নেই কেন। আসলে রোমানিয়ার উপরই মহাজাগতিক কোনও বস্তু বা উল্কাপাত হয়েছিল। তা থেকেই জীবন্ত পাথরের সৃষ্টি বলে বিশ্বাস মানুষের।