
রাত নামলেই আলো ঝলমলে জঙ্গল, স্বর্গীয় সৌন্দর্যের উপলব্ধির সঙ্গে মিশে রয়েছে রহস্যও
কত না রহস্য লুকিয়ে রয়েছে এই প্রকৃতির বুকে! তার অনেক কিছুই আবার অবিশ্বাস্য মনে হয়। বিশ্বাসযোগ্য কিছু ঘটনা রয়েছে ঠিকই, কিন্তু ঋতুর ফেরে এমন কিছু অবিশ্বাস্য ঘটনা দেখা যায়, যার ব্যাখ্যা পাওয়া দুষ্কর। এমন একটা জঙ্গলের কথা এ বিষয়ে বলা যায়, যেখানে রাত নামলেই জ্বলে ওঠে আলো। আলো ঝলমলে জঙ্গল এক স্বর্গীয় সৌন্দর্যের অধিকারী হয়ে ওঠে।

প্রকৃতির রহস্য ঘেরা আলো ঝলমলে জঙ্গল
প্রকৃতির রহস্য ঘেরা এই জঙ্গল। এই জঙ্গলের রাতের ছবি যেমন আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে তুলবে, একইভাবে প্রকৃতির কোলে রহস্যময় এই জঙ্গলকে মনে হবে জাদুকরীও। সত্যিই স্বর্গের মতো সুন্দর। প্যানারোমিক পাহাড়, রিফ্রেশিং ব্যাক ওয়াটার, জ্বলন্ত তারায় ভরা রাত- আর কী চাই! সবকিছুই লুকিয়ে রয়েছে স্বর্গীয় এই জঙ্গলে।

রাতের আলোয় স্বর্গীয় চেহারা জঙ্গলের
কী করে তা সম্ভব? একটা জঙ্গল রাত নামলেই আলো ঝলমলে হয়ে যেতে পারে কী করে? প্রকৃতি বিশেষজ্ঞরা মনে করে, প্রকৃতির মধ্যে এমন কিছু বিরল জিনিস রয়েছে, যা কেবল রাতেই জ্বলে। সেগুলো ভয়ঙ্কর কিছু নয়। সোজাসাপ্টা দেখলে তা অবাস্তব বলে মনে হয়। আবার মনে হয়- এ এক স্বর্গীয় সৌন্দর্যের অধিকারী।

কোথায় রয়েছে এমন জঙ্গল
এমন এক অপরূপ সৌন্দর্যের জঙ্গল দেখা যায় মহারাষ্ট্রে। পশ্চিমঘাট পবর্তমালার পাদদেশে এমন কিছু জঙ্গল রয়েছে, যেখানে বর্ষাকালে এক অদ্ভুত চেহারা নেয় বনাঞ্চলগুলি। বর্ষার বৃষ্টিতে ভিজে গেলেই একেবারে অন্যরকম সৌন্দর্যে ধরা দেয় জঙ্গল। মহারাষ্ট্রের পশ্চিমঘাটে ভীমশঙ্কর ওয়াইল্ডলাইফ রিজার্ভে গেলেই এক অনন্য অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবেন আপনি।

ছুটে যাবেন নাকি স্বর্গীয় আনন্দ উপভোগ
রাতের জঙ্গলে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে গেলে যেতেই হবে ওই জঙ্গলে। যেখানে রাত নামলেই মোহময়ী রূপে ধরা দেয় জঙ্গল। এক বিরল দৃশ্যের সাক্ষী থাকতে গেলে রাতের বেলায় যেতে হবে জঙ্গলে। তখনই আলো ঝলমলে হয়ে থাকে জঙ্গল। এই জঙ্গলের অপরূপ শোভা আকৃষ্ট করবে আপনাকেও। মুহূর্তে ভয় ঝেড়ে ফেলে ছুটে যাবেন স্বর্গীয় আনন্দ উপভোগ করতে।

কী কারণে রাতের বেলা আলো জ্বলে ওঠে জঙ্গলে
প্রকৃতি বিজ্ঞানীরা বলেন, এই যে জঙ্গল রাত নামলেই আলো ঝলমলে হয়ে যায়, তার প্রধান কারণ হল এক প্রকারের ব্যাকটেরিয়া। মাইসিনা নামে এক প্রকারের ব্যাকটেরিয়ার কারণেই রাত নামলে জঙ্গল আলোকময় হয়ে ওঠে। এই ব্যাকটেরিয়া ভিন্ন প্রজাতির। মাইসিনার এমনই গুণ আর্দ্র পরিবেশ হলেই জ্বল জ্বল করে। বনাঞ্চলে বিভিন্ন গাছের কাণ্ড, শাখা ও পাতায় পাতায় ওই ব্যাকটেরিয়া বসতি গড়ে তোলে আর গোটা জঙ্গলকে করে তোলে আলোকিত।

জাদুকরী বনাঞ্চল, বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় বায়োলুমিনিসেন্স
ভারী বৃষ্টির পরেই ওই জঙ্গল রাত নামলেই আলো ঝলমলে হয়ে ওঠে। দিনের থেকেও স্পষ্ট দেখা যায় জঙ্গলের রাস্তা। আর বিভিন্ন রঙের আলোয় গোটা জঙ্গলের গাছ-পাতা এক স্বর্গীয় আলোকময় পরিবেশ তৈরি করে। মুহূর্তে জাদুকরী হয়ে ওঠে বনাঞ্চল। এই ঘটনাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় বায়োলুমিনিসেন্স।

ভারতের বুকে কিছু ঊজ্জ্বল সৈকতেও তার উপস্থিত
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ওই মাইসিনা নামক ব্যাকটেরিয়া শুধু যে জঙ্গলে বা ভূমিতে রয়েছে তা নয়, ওই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায় জলাশয়েও। ভারতের বুকে কিছু ঊজ্জ্বল সৈকতেও তার উপস্থিতি রয়েছে। আর সেই সৈকতও রাতের বেলায় আলো ঝলমলে হয়ে ওঠে মাইসিনা ব্যাকটেরিয়ার সৌজন্যে।

কখন এই জঙ্গল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
বর্ষায় সময় ভীমশঙ্কর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের এই জঙ্গলটি জাদুকরী হয়ে ওঠে। তবে এই দৃশ্য যে প্রতিদিন ঘটবে তা কিন্তু নয়। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের আবহাওয়ায় জঙ্গল সাধারণ আলো ঝলমলে থাকে রাতের বেলায়। এই সময়ই ওই জঙ্গল ভ্রমণের উপযুক্ত। তবে স্বর্গীয় দৃশ্যের সাক্ষী থাকতে পারবেন।

১৩১ কিলোমিটার বর্গক্ষেত্র জুড়ে এই জঙ্গল
১৯৮৪ সালে ভীমশঙ্কর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণাগার তৈরি হয় পুনের খেদ ও আম্বেগাঁও এলাকায়। ১৩১ কিলোমিটার বর্গক্ষেত্র জুড়ে এই জঙ্গলের বিস্তার। ৯টি উপজাতীয় গ্রাম এই সংরক্ষণের আওতায় পড়ে। বিপন্ন হয়ে পড়া কাঠবেড়ালির প্রজাতির সুরক্ষার জন্য তা তৈরি করা হয়েছিল। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে। এই বনের ঘন জঙ্গলে বার্কিং হরিণ, বুনো শুয়োর ইত্যাদি দেখা যায়।

জঙ্গলের আকর্ষণ মোহময়ী আলোর পরিবেশ
আর সবথেকে এই জঙ্গলের আকর্ষণ হল মোহময়ী আলোর পরিবেশ। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী মানুষদের জন্য এ এক আদর্শ বনাঞ্চল। বনের পথ, শিবির, তারপর জলপ্রপাত-সহ আকর্ষণীয় দৃশ্য উপভোগ করা যায়। আর প্রকৃতির অপরূপ শোভা দেখতে এই বর্ষার মরশুমকেই বেছে নেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
চিনের সবথেকে শক্তিশালী রকেটে বিধ্বস্ত হবে পৃথিবী! কিন্তু আছড়ে পড়বে কোথায়