ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়ার ভয়! কুণালকে ঠেলে ফেলে পুলিশি দাওয়াই
আরও পড়ুন: জেল হেফাজতে কি আদৌ নিরাপদ সুদীপ্ত সেন, উঠছে প্রশ্ন
সারদা গোষ্ঠী থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সুবিধা সবচেয়ে বেশি পেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, গত শনিবার এই মন্তব্য করেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাসপেন্ডেড সাংসদ কুণাল ঘোষ। এর জেরে তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। তার পর থেকেই কুণালবাবুকে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে না দিতে তৎপর হয় বিধাননগর পুলিশ। অবশ্যই ওপর মহলের নির্দেশে।
সোমবার সিবিআই দফতরের সামনে তিনি পুলিশের গাড়ি থেকে নামতেই খাঁকি উর্দিধারীরা কুণালবাবুকে ছেঁকে ধরে। সাদা পোশাকেও কয়েকজন ছিলেন। শুধু ছেঁকে ধরাই নয়, ধমক দিয়ে বলা হয়, মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলবেন না। কিন্তু তিনি এই ধমক অগ্রাহ্য করে কথা বলতে যেতেই শুরু হয় পুলিশি দাওয়াই! বিধাননগর দক্ষিণ থানার ওসি তাঁকে ধাক্কা মারেন বলে অভিযোগ। তিনি পড়ে যান। কপালে, মাথায় ও হাতে চোট লাগে। কুণাল ঘোষ যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকেন। সেই অবস্থাতেই টি-শার্টের কলার চেপে ধরে হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় সিবিআই অফিসে।
পুলিশ ইচ্ছে করেই এই গণ্ডগোল বাধাচ্ছে কি না, সেই অভিপ্রায় নিয়েও প্রশ্ন বিরোধীদের
সারদা-কাণ্ডে তদন্ত শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে বিধাননগর পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তা অর্ণব ঘোষ শাসক দলকে 'তুষ্ট' করায় তাঁকে নদীয়ার পুলিশ সুপার বানিয়ে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, এই অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। কুণাল ঘোষ আগেই বলেছিলেন, পরিকল্পিতভাবে সব তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করছে বিধাননগর পুলিশ। এখন তাদের সেই অতি সক্রিয়তা দেখে অনেকেই বলছেন, ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।
কুণালবাবুর আইনজীবী সৌমজ্যিৎ রাহা বলেছেন, "আমি ওঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। ওঁর চোট লেগেছে। ওষুধ খেয়েছেন।" বিশ্বস্ত সূত্রে খবর, হাত কেটে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে যাওয়ায় টেট ভ্যাক নিতে হয়েছে তাঁকে।
কুণাল ঘোষ সিবিআই হেফাজতে থাকলেও কেন পুলিশের এই আচরণ? ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, সিবিআই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে, এটা ঠিক। কিন্তু তাঁকে লক-আপ থেকে নিয়ে যাওয়া, নিয়ে আসা ইত্যাদি দায়িত্ব রয়েছে রাজ্য পুলিশের হাতে। মজার ব্যাপার, দু'দিন আগেই পুলিশকর্তারা দাবি করেছিলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে যাতে তিনি না পারেন, সে জন্য সিবিআই-ই অতিরিক্ত নিরাপত্তার আবেদন জানিয়েছিল। তাই সল্ট লেকের সিজিও কমপ্লেক্সে বিপুল পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে কুণাল ঘোষকে নিয়ে আসার সময়। কিন্তু সিবিআই মুখপাত্র কাঞ্চন প্রসাদ বলেছেন, "এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।" অর্থাৎ রাজ্য পুলিশের বক্তব্যে সত্যতা নেই। বরং পুলিশের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট সিবিআই দিল্লিতে অভিযোগ পাঠাচ্ছে।
একই আশঙ্কা বিরোধীদেরও। যদি গোলমালের সুযোগে কুণাল ঘোষের কিছু হয়, তা হলে সারদা-কাণ্ডে তদন্ত ধাক্কা খাবে। রাঘববোয়ালদের ব্যাপারে গোপন তথ্য চিরতরে চাপা পড়ে যাবে। পুলিশ ইচ্ছে করেই এই গণ্ডগোল বাধাচ্ছে কি না, সেই অভিপ্রায় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলি। মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর এ বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার হুমকি দিয়েছে।