এবার কঙ্কালকাণ্ড হরিণঘাটায়, ৯ মাস মায়ের দেহ আগলে ২ ছেলে
কলকাতা, ১২ সেপ্টেম্বর : কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটের কঙ্কালকাণ্ড নিয়ে সারা দেশের সংবাদমাধ্যমে তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল। এরপরে হাওড়াতেও এমন ঘটনা সামনে এসেছিল। কলকাতা-হাওড়া হয়ে এবার নদিয়ার হরিণঘাটায় সামনে এল আর একটি কঙ্কালকাণ্ডের খবর। [৬ মাস ধরে দিদির কঙ্কালের সঙ্গে বসবাস ভাইয়ের, খাবারও দিতেন নিয়মিত!]
জানা গিয়েছে, হরিণঘাটার সিমহাটের বাসিন্দা ননীবালা সাহা (৮৬) মারা গিয়েছিলেন গত জানুয়ারি মাসে। তবে তাঁর মৃত্যুর খবর কাউকে দেওয়া হয়নি। সৎকারও করেনি দুই ছেলে। বদলে মায়ের দেহ ঘরের খাটে রেখে প্রায় ৯ মাস ধরে আগলে রেখে জীবন কাটাচ্ছিল। ['সাইকো কাণ্ড'! হাওড়ায় মেয়ের মরদেহ নিয়ে বাস মায়ের]
ননীবালা দেবীর দুই ছেলে অরুণ ও অজিত। দুজনেরই বয়স হয়েছে। অরুণবাবু প্রাইভেট টিউশন পড়াতেন। তবে এখন আর অনেকদিন পড়ান না। এদিকে অজিতবাবু বেকার মানুষ। দুজনেরই মানসিক সুস্থতা নিয়ে সন্দেহপ্রকাশ করেছে পুলিশ। [মায়ের মরদেহ আগলে তিন রাত ঘরবন্দি ছেলে]
পুলিশি জেরায় দুজনে জানিয়েছে, জানুয়ারির ঠান্ডায় ননীবালা দেবী মারা যাওয়ায় দুজনে ভেবেছিলেন কয়েকদিন পরে দেহ দাহ করবেন। কারণ সেসময়ে একজনের পায়ে ও একজনের দাঁতে ব্যথা ছিল। এই ভেবে দেহ কয়েকদিন বাড়িতে রেখে দিতেই পোকা ধরে যায়। [সল্টলেকের নির্মীয়মাণ বাড়ির জলের ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার কঙ্কাল!]
এরপরে তাঁরা আর দেহ বাড়ির বাইরে নিয়ে যাননি। এতদিন ধরে দেহ বাড়িতে রেখে দেওয়ায় কঙ্কাল বেরিয়ে গিয়েছে। বাড়িতে এই মাঝের কিছুদিনে কাউকে ঢুকতে দেননি দুই ভাই। কেউ ননীবালা দেবীর কথা জিজ্ঞাসা করলে বলতেন মা ভালো আছে। কেউ দেখা করতে চাইলে কখনও বলতেন মা অসুস্থ, দেখা করা যাবে না।
এমন জিনিস দীর্ঘদিন ধরে চলায় প্রতিবেশীদের মনে সন্দেহ জাগে। পুরসভার তরফে একজন বাড়িতে আসেন কয়েকটি সরকারি কাজের তদারকির জন্য। তাদেরও বাড়িতে ঢুকতে দেননি দুই ভাই। এরপরই সেই পুর আধিকারিক দল বেঁধে রবিবার সকালে সাহা বাড়িতে হানা দেন। সঙ্গে ছিলেন পাড়ার অন্যান্যরাও।
অন্ধকার ঘরে ঢুকতে গেলে দুই ভাই বাধা দেন। বলেন, মা অসুস্থ, ঘুমোচ্ছেন। তবে সকলে জোর করে ঢুকে দেখেন নোংরা ঘরের খাটে কম্বল জড়ানো কিছু একটা রয়েছে। কম্বল সরাতেই ননীবালাদেবীর নরকঙ্কাল বেরিয়ে আসে। তারপরই পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ননীবালাদেবীর স্বামী কুঞ্জমোহন সাহা বেঙ্গল কেমিক্যালে চাকরি করতেন। কুড়ি বছর আগে তাঁর মৃত্যু হয়। দুই ভাইয়ের মধ্যে অরুণবাবু বিএসসি পাশ। চাকরি না পেয়ে টিউশন পড়াতেন। তবে গত দশ বছর সেসবও ছেড়ে দেন তিনি। ছোট ভাই অজিত কোনও কাজকর্ম করতেন না। মানসিক ভারসাম্য হারানোর জেরে নাকি অন্য কোনও কারণে মায়ের মৃত্যু ধামাচাপা দিয়েছে দুই ভাই তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।