মুকুলই এক নম্বর বাজি, ২০২১-এর আগে বাংলার কুর্সি দখলে মাস্টারস্ট্রোক মোদী-শাহের
মিশন একুশে বিজেপির পক্ষে বাজিমাত করতে মুকুল রাকেই বাজি ধরেছে বিজেপি। তাই মোদী-শাহদের বঙ্গ-বিজয়ের পরিকল্পনায় মুকুল রায় ছাড়া কাউকেই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।
মিশন একুশে বিজেপির পক্ষে বাজিমাত করতে মুকুল রাকেই বাজি ধরেছে বিজেপি। তাই মোদী-শাহদের বঙ্গ-বিজয়ের পরিকল্পনায় মুকুল রায় ছাড়া অন্য কাউকেই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকী, মুকুল রায়কে গুরুত্বের আসনে বসাতে ৪০ বছর ধরে গেরুয়া রাজনীতি করা রাহুল সিনহাকে অন্তরালে পাঠাতেও দ্বিধা করেনি বিজেপি।
বিজেপিতে যখন আদি-নব্য-তৎকাল দ্বন্দ্ব
বঙ্গ বিজেপিতে দীর্ঘদিন ধরেই বাসা বেঁধেছিল গোষ্ঠীকোন্দল। দিলীপ-রাহুল গোষ্ঠীর লড়াই তো ছিলই, বিগত তিন বছর ধরে সেই লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিল মুকুল রায় গোষ্ঠী। অর্থাৎ যাঁরা মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন বিশেষত যাঁরা তৃণমূল ছেড়ে যাচ্ছেন, তাঁরা একটা পৃথক গোষ্ঠী হয়ে গিয়েছিলেন বিজেপিতে।
মুকুল রায়ই বিজেপির পয়লা নম্বর বাজি
বঙ্গ বিজেপিতে যখন ত্রিধারা বইছে, তখনই মোদী-শাহের তরফ থেকে মাস্টারস্ট্রোকটা দেওয়া হয়। মুকুল রায়কে বিজেপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি করে দেওয়া হয়। একপ্রকার মুকুলের হাতে বাংলার নির্বাচনের ব্যাটন তুলে দিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মোদী-শাহরা জানেন বাংলায় বাজিমাত করতে মুকুল রায়ই তাঁদের পয়লা নম্বর বাজি হতে পারেন!
দিলীপ-রাহুলদের পেরিয়ে মুকুলই বাজিগর
সেই কারণেই মুকুল রায়কে গুরুত্ব দিতে গিয়ে দিলীপ ঘোষ বা রাহুল সিনহাদের কথা ভাবেননি মোদী-শাহরা। এক কলমের খোঁচায় দিলীপ গোষ্ঠীর নেতাদের চুপ করিয়ে দিয়েছেন। দিলীপ ঘোষকেও ট্যাঁ-ফুঁ করতে দেননি মোদী-শাহরা। আর রাহুল সিনহা তো গর্জে উঠেই চুপসে গিয়েছেন। কোনও পদক্ষেপই নেই তাঁর।
মুকুল রায়ই বিজেপির সেনাপতি একুশে
২০২১-এর নির্বাচনে মুকুল রায়ই বিজেপির সেনাপতি হচ্ছেন। তাঁর কাঁধে ভর করেই বিজেপি বাংলার ভোট বৈতরণী পার করতে চাইছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কেননা ২০১৮-র পঞ্চায়েত বা ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে মুকুল রায়ই ছিলেন কাণ্ডারি। তাই এবার যখন তাঁর গুরুত্ব বাড়ানো হল, তাঁকে যে বঙ্গ-ভোটের দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা নিশ্চিত।
মমতাকে কুর্সি থেকে হটানোই যখন লক্ষ্য
মুকুল রায়ের এই গুরুত্ব বৃদ্ধিতে আদৌ খুশি নন দিলীপ ঘোষ ও রাহুল সিনহার অনুগামীরা। কেউ প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করছেন, কেউ আড়ালে, আর কেউ চুপ করে রয়েছেন কিছু বলতে না পেরে। ফলস্বরূপ আদি নেতারা মুকুলের এই ভূমিকা কতটা মেনে নেন, তার উপরই নির্ভর করবে বিজেপির ভাগ্য। বিজেপি মূল লক্ষ্য ২০২১-এর নির্বাচনে জয়লাভ করে মমতাকে কুর্সি থেকে হটানো।
দিলীপ-রাহুলরা ভাঙবেন না, মুকুল ভাঙাতে পারেন
মোদী-শাহ-নাড্ডারা বাংলায় বাজিমাতের কথা চিন্তা করেই মুকুল রায়কে সামনে রেখে ঝাঁপাচ্ছে ২০২১-এর নির্বাচনে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করেন, দিলীপ-রাহুলের সঙ্গে থাকা নেতারা সবাই বিজেপি অন্ত প্রাণ। তাঁরা ক্ষুব্ধ হলেও বিজেপি ছাড়তে দু-বার ভাববেন। কিন্তু মুকুল রায়কে সামনে এগিয়ে দিয়ে তৃণমূলকে যদি ভেঙে দেওয়া যায় বা মুকুল রায় তৃণমূল নেতাদের ভাঙিয়ে আনতে পারেন, তাতে আখেরে বিজেপিরই লাভ।
তৃণমূল বনাম তৃণমূল যুদ্ধ লাগিয়ে ফায়দা বিজেপির
মোদী-শাহরা একুশে মুকুলকে দিয়ে তৃণমূলকে ভাঙার পরিকল্পনাতেই এগোচ্ছে। ঠিক যেমন ২০১৯-এ মুকুল রায়কে দিয়ে বিজেপি তৃণমূল ভাঙাতে সক্ষম হয়েছিল। তৃণমূল ভাঙিয়ে দলত্যাগীদের প্রার্থী করে কাজ হাসিল করেছিল বিজেপি। তৃণমূল বনাম তৃণমূল যুদ্ধ লাগিয়ে বাংলায় ফায়দা লুটেছিল গেরুয়া শিবির। সেই অঙ্কেই ২ থেকে বেড়ে ১৮ হয়েছে, তাহলে একুশে জয় অসম্ভব কোথায়!