‘ফার্স্ট’ ছাড়া শব্দ নেই রাজনীতিতে, সবংয়ের ‘ক্লাস’-এ ‘ভোকাল টনিক’ মুকুলের
পদ্মশিবিরে নাম লিখিয়েই বাংলায় প্রকৃত পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন মুকুল রায়। এবার একদা তাঁর নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গদি থেকে উৎখাত করতে শুরু করে দিলেন সলতে পাকানোর কাজ।
বিজেপির উত্তরীয় গলায় জড়িয়ে বাংলায় প্রকৃত পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন সেকেন্ড ইন কম্যান্ড মুকুল রায়। এবার একদা তাঁর নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গদি থেকে উৎখাত করতে শুরু করে দিলেন সলতে পাকানো। আর তা শুরু হল পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের মাটি থেকেই। সবং উপনির্বাচনের আগে বিজেপি কর্মীদের 'ক্লাস' নিলেন তিনি। সেখানেই দিলেন ভোট-জয়ের 'ভোকাল-টনিক'।
এখনও সবং উপনির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা হয়নি বিজেপির। সব দলই তাঁদের প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করে ফেলেছে। শুধু পদ্ম-শিবিরই এখনও জানাতে পারেনি তাঁদের প্রার্থীর নাম। তা সত্ত্বেও শুরু হয়ে গেল নির্বাচনী লড়াইয়ের প্রস্তুতি। নতুন জার্সিতে সবংয়ের মাটিতে পা রাখলেন মুকুল রায়। সবং কংলেজ সংলগ্ন একটি লজে হল বিজেপির কর্মিসভা। সেই কর্মিসভায় 'শিক্ষক'-এর ভূমিকায় তৃণমূলের প্রাক্তন 'চাণক্য' মুকুল রায়।
এই সেই সবং, যেখানে বাম-আমলেও উড়েছে জাতীয় কংগ্রেসের পতাকা। ড্যাং-ডেঙিয়ে এখান থেকে জিতে ফিরেছেন মানস ভুঁইয়া। ২০১৬ সালে প্রবল তৃণমূলী হাওয়াতেও তার নড়চড় হয়নি। কিন্তু তিনি চলতি হাওয়ায় গা ভাসিয়ে শাসক শিবিরে যোগ দিয়েছেন, উপহারস্বরূপ পেয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ পদ। সেই কারণেই ফের ভোট সবংয়ে। এবার মানসের জায়গায় বিধায়ক পদপ্রার্থী মানস-জায়া। তবে কংগ্রেস নয়, তিনিও স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে ঘাসফুল প্রতীকেই নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন।
সবং চাইছে ভুঁইয়া-রাজের অবসান। আবার সবংয়ের মাটিতে এখনও কংগ্রেসি-প্রভাব রয়ে গিয়েছে। এখনও এই জায়গায় কংগ্রেসের ক্ষমতাও হেলাফেলা করার মতো নয়। এই চোরাস্রোতকেই কাজে লাগতে উঠে পড়ে লেগেছেন মুকুল রায়। তাই প্রার্থী ঠিক করার আগেই তিনি সবংয়ের গেরুয়া শিবিরের 'ক্লাস' নিতে ছুটলেন। কর্মীদের দিলেন ভোকাল টনিকও।
কী বার্তা দিলেন তিনি কর্মীদের? মুকুল সাফ সাফ বললেন, 'রাজনীতির অভিধানে দ্বিতীয় স্থানের কোনও দাম নেই। গণতন্ত্রের এই লড়াইয়ে তাঁরই জয়, যে একনম্বর হতে পারবে। অর্থাৎ ফার্স্ট হওয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনও পথ খোলা নেই। রাজনীতির ময়দানে টিকে থাকতে গেলে প্রথম হতেই হবে, বিরোধী সকলের থেকে তোমাকে এক ভোটে হলেও এগিয়ে থাকতে হবে। সেটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত দলের। আর আমাদের সেই লক্ষ্য রেখেই এগোতে হবে আজ থেকে।'
এদিন একঘণ্টা তিনি 'ভোকাল টনিক' দেন বিজেপি কর্মীদের। তাঁর সঙ্গে হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা সুরেশ পূজারী-সহ রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বের অনেক নেতা-নেত্রী। তবু তিনিই ছিলেন মধ্যমণি। তবে এদিন মুকুলবাবুর সঙ্গে ছিলেন না তাঁর 'ক্যাপ্টেন' দিলীপ ঘোষ। তিনি ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে জনসভায় উপস্থিত থাকবেন বলে জানান মুকুলবাবু। এদিন প্রতিটি বুথে কমিটি গড়ার নির্দেশ দেন নির্বাচনের 'ভারপ্রাপ্ত' মুকুল রায়।
মুকুলবাবু এদিন বলেন, এই সবংয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে প্রচুর ক্ষোভ লুকিয়ে রয়েছে। সেই ক্ষোভকেই জাগিয়ে তুলতে হবে। যেতে হবে মানুষের কাছে। বোঝাতে হবে বিজেপি তোমাদের পাশে রয়েছে। কংগ্রেস ও তৃণমূলের ক্ষোভগুলিকেই হাতিয়ার করে এগোতে চাইছেন তিনি। সেই অনুযায়ীই স্থির করলেন নির্বাচনী কৌশল।
এদিকে বিজেপি-র প্রার্থী হিসেবে সবং থেকে উঠে আসছে আরও একটি নাম। দলের অন্দরের খবর, বিজেপির প্রার্থী হতে পারেন পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য। তিনি সিপিএমের টিকিটে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাধিপতি ছিলেন। রাজ্যে রাজনৈতিক পালা বদলের পর তিনি সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে নাম লেখান।
প্রথমে এই পদে শোনা যাচ্ছিল লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নাম। তাঁর শারীরিক অবস্থার জন্যই বিকল্প নামের সন্ধানে ছিল বিজেপি। উঠে আসছিল মুকুল ঘনিষ্ঠ সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া প্রাক্তন বিধায়ক রাধাকান্ত মাইতির নাম। এখন আলোচিত হচ্ছে, রাধকান্ত মাইতি নন, অন্তরা ভট্টাচার্য হতে পারেন সবংয়ের বিজেপির প্রার্থী।