ফারাক গড়ে দিলেন মমতাই, বিজেপির ‘আহত’ সমর্থকরা যোগ দিতে চলেছেন তৃণমূলে
মেদিনীপুরে নরেন্দ্র মোদীর সভায় গিয়ে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন, তারপর থেকেই ওঁরা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। কোনও বিজেপি নেতাকে দেখা যায়নি, পাশে দাঁড়াতে। কিন্তু সব কাজ ফেলে ছুটে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
ফারাক গড়ে দিলেন সেই মুখ্যমন্ত্রীই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মানবিক মুখের কাছে পরাস্ত হল বিজেপির রণনীতি। মেদিনীপুরে নরেন্দ্র মোদীর সভায় গিয়ে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন, তারপর থেকেই ওঁরা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। কোনও বিজেপি নেতাকে দেখা যায়নি পাশে দাঁড়াতে। কিন্তু সব কাজ ফেলে ছুটে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, আহতদের হাতে সাহায্য তুলে দিয়েছিলেন।
তারই প্রতিদান দিতে শনিবার আহত বিজেপিকর্মীরা উপস্থিত হচ্ছেন মেদিনীপুরে তৃণমূলের পাল্টা সভা মঞ্চে। মুখ্যমন্ত্রীর মানবিকে মুখে মুগ্ধ হয়ে তাঁরা যোগ দিতে চলেছেন তৃণমূলে। মুখ্যমন্ত্রীর মানবিক মুখের সন্ধান পাওয়া আহত কর্মীদের কথায়, প্রধানমন্ত্রী চোখের দেখা দেখতে এসেছিলেন ঠিকই, কিন্তু এলাকার একজন বিজেপি নেতাকেও পাওয়া যায়নি।
তাঁরা বলেন, বরং মুখ্যমন্ত্রী এসে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা, চিকিৎসা খরচ দিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি এলাকার নেতাদের বার্তা দিয়ে গিয়েছেন, আহতদের পাশে দাঁড়াতে। তাঁদের সমস্ত অসুবিধায় পাশে থাকতে। মুখ্যমন্ত্রীর এই মানবিকতা বোধ তাঁদের চোখ খুলে দিয়েছে। তাই বিজেপি নয়, তাঁরা তৃণমূলের ছত্রছায়াতেই থাকবেন এই বার্তা দিয়েছেন।
আহতরা এমনও বলেছেন, যে সমস্ত আহতরা জনসভায় যাওয়ার মতো অবস্থায় নেই, তাঁদের পরিবারের লোকজন যাবেন তৃণমূলের সভায়। মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে বিরোধী দলের সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও মানবিক মূল্যবোধের নিদর্শন রেখেছেন, তাতে বিজেপি লোকসভা ভোটের আওয়াজ তুলতে গিয়ে তৃণমূলের কাছে দশ গোল খেয়ে বসে থাকলেন।
এবার বিরোধী দলের সমর্থকদের তৃণমূলে ফিরিয়ে সেই মাস্টারস্ট্রোক দিতে চাইছে তৃণমূল। পাল্টা সমাবেশে শুধু জনসমাগম ঘটানোই লক্ষ্য নয়। পঞ্চায়েত ভোটে যেভাবে জঙ্গলমহলে উত্তরণ ঘটেছে বিজেপির, তারপর তাদের সংগঠনের কোমর ভেঙে দেওয়াও লক্ষ্য তৃণমূলের।
উল্লেখ্য, ১৬ জুলাই নরেন্দ্র মোদীর সভায় শামিয়ানা ভেঙে পড়ে আহত হন ৯০ জন সমর্থক। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পরেই প্রধানমন্ত্রী দেখতে যান আহতদের। তার তিনদিন পর মেদিনীপুর সফরে গিয়ে সটান হাসপাতালে ঢুকে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আহতদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের সাহায্যের আশ্বাস দেন।
[আরও পড়ুন: জাতীয় পঞ্জীকরণের চূড়ান্ত খসড়া! কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে অসম]
সেই আশ্বাস যে কেবল আশ্বাস নন, তার প্রমাণ মেলে পরদিনই মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল থেকে চিকিৎসার জন্য আহতদের ১ লক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা সাহায্য করা হয়। স্বল্প সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা করে হাসপাতালে গিয়ে তা বণ্টন করে আসেন সরকারি আধিকারিকরা। সাহায্যের চেক পেয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি অনেকে। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি প্রকাশ্যেই আনুগত্য প্রকাশ করে বসেন।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন সুমিত্রা মাহাত, শকুন্তলা মাহাতো, কৌশিক মাহাতোরা। তাঁরা বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর অবদান ভোলার নয়। তিনি যেভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা তুলনাহীন। আমরা সুস্থ হয়ে উঠলে শনিবার তৃণমূলের সভায় যাব। আমরা না পারলেও আমাদের পরিবারের সদস্যরা যাবেন। একই মত পোষণ করেন সুখদা মাহাতো, সূর্যকান্ত চন্দ্র, উত্তম দাস-রা।