'ছবি তোলার জন্য জামা খুললে নিজেই ছবি হয়ে যাবেন', অধীরকে কটাক্ষ মমতার
কলকাতা, ১৮ আগস্ট : সবং কলেজে ছাত্র খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে নৈরাজ্যের যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তার বিরোধিতাতেই আজ রাজ্যজুড়ে ১২ ঘন্টার বনধ ডেকেছিল কংগ্রেস। আর এই বনধকে কেন্দ্র করেই উত্তাল হয়ে উঠল বহরমপুর। চলল পুলিশের লাঠিচার্জ, নজিরবিহীনভাবে জামা খুলে বিক্ষোভ দেখালেন অধীর চৌধুরি। আর তা নিয়ে কটাক্ষ করে মমতার মন্তব্য, ছবি তোলার জন্য জামা খুললে নিজেই ছবি হয়ে যাবেন। [দুঃস্বপ্নের স্মৃতি ফিরল : পশ্চিম মেদিনীপুরে কলেজের মধ্যেই পিটিয়ে ছাত্র খুন]
সকাল ৬ টা থেকে শুরু হয় এই বন্ধ। বন্ধ সমর্থনকারীরা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। ভূমি ও ভূমি সংস্কার কর্মীদের অফিসে ঢুকতে বাধা দেয় বনধ সমর্থনকারীরা। বনধ সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি চালায় পুলিশ, আর এই পুলিশের লাঠির আঘাতে জখম হন ৫ জন। [(ছবি) ভারতের ১০ অসংবেদনশীল রাজনীতিবিদ]
এই খবর পেয়ে এলাকায় এসে বিক্ষোভে সামিল হন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরি। তাঁকে গুলি করার জন্য চ্যালেঞ্জও করেন পুলিশকে। এরপরই শার্ট খুলে স্যান্ডো গেঞ্জি গায়েই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তিনি। সাংবাদিকদের জানান, জোর করে বনধ বানচালের চেষ্টা চালাচ্ছে মমতা।
এই কথা শুনে পাল্টা উত্তর দিতে ছাড়লেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মিচকে হাসি মুখে নিয়ে কটাক্ষের সুরে মমতার জবাব, "ছবি তোলার জন্যই জামা খুলে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। জামা খোলা সৌরভকেই মানায়। সৌরভকে যা মানায় অন্যদের তা মানায় না। জামা খুলে ছবি তুলতে গেলে নিজেই ছবি হয়ে যাবেন।" [মমতার 'বাচ্চা মেয়ে' আর মুলায়মের 'ছোট ছেলেরা' ক্রমশই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে ভারতের জন্য!]
শুধু অধীর বা কংগ্রেস নয় একযোগে বিরোধী দলগুলোকে নিশানা করে মমতার তোপ, গণতন্ত্র না থাকলে নাটক করতে পারতেন। বনধের নামে প্রহসন মানব না রাজ্যে। ধ্বংসাত্মক নয়, গঠনমূলক রাজনীতি চাই।
এদিকে মমতার ছবি করে দেওয়ার মন্তব্যের পাল্টা চ্য়ালেঞ্জ ছুঁড়েছেন অধীর। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেন, "উনি তো অনেককেই ছবি করেছেন। তবে কী আমাকে খু করার হুমকি দিচ্ছেন? ক্ষমতা থাকলে ছবি করে দেখান।" [(ছবি) একনজরে দেখে নিন মুখ্যমন্ত্রী মমতার কিছু বিতর্কিত মন্তব্য]
পাশাপাশি মমতাকে আক্রমণ করে অধীর বলেন, "বিরোধী দল বনধ ডাকলেই মুখ্যমন্ত্রী জোর করে সরকারি বাস চালিয়ে বনধ বানচাল করার চেষ্টা চালান। বনধ সমর্থনকারীদের উপর বাস চালানোর চেষ্টা করা হয়, সেই কারণেই বাস ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটেছে।"
এই গোটা ঘটনায় অবশ্য আপাতত মুখে কুলুপ এঁটেছে কংগ্রেসেই অধীরের বিরোধী আব্দুল মান্নান গোষ্ঠী। মমতার বিরোধিতায় বা অধীরের সমর্থনে একটাও কথা বলেননি মান্নান নিজেও। কংগ্রেসের একাংশের মতে মান্নান বনাম অধীর গোষ্ঠীর লড়াইটা এখন আর ঢাকাচাপা নেই। অধীর মমতার তরজা বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছেন মান্নান সমর্তকরা। [সোয়াইন ফ্লুয়ের আসল কারণ 'মশার কামড়', এবারও বক্তা মমতাই!]
এদিকে কংগ্রেসের আর এক সূত্রের দাবি, আসলে , মমতা যা বলেছেন, তা তো আর একেবারে মিথ্যা নয়। জামা খুলে বিক্ষোভ করে খবরে আসতে চেয়েছেন অধীর, এবং সবাইকে এবং মান্নানকে দেখাতে চেয়েছেন মাঠে নেমে লড়াই করার ক্ষমতা ও সাহস দুই তার রয়েছে। তিনি শুধু ঘরে বসে দলের কথা বলা নেতাদের মতো নন। [প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির ঘরে ভাঙন, স্ত্রী চললেন তৃণমূলে়]
এদিকে বনধ ঘিরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষিপ্ত অশান্তি দেখা গেলেও মহানগরীতে এর কোনও প্রভাবই পড়েনি। এই ঘটনা আরও একবার কংগ্রেসকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল গ্রামাঞ্চলে কংগ্রেসের নিজের জোর কিছুটা হলে ধরে রাখতে পারলেও শহরাঞ্চলে দল পুরোপুরিভাবেই প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে।