ফিরে দেখা ২০২১: মিলখা সিং থেকে নোভি কাপাডিয়া, কেশব দত্ত থেকে ডিঙ্কো সিং - ক্রীড়াক্ষেত্র যাঁদের হারাল চিরতরে
বিশ্ব ক্রীড়াক্ষেত্রে কেউ কোভিডে আক্রান্ত হয়ে, কেউ বা নানাবিধ অসুখে চলতি বছরে পরলোকগমন করেছেন। তাতে ভারতের বিভিন্ন ক্রীড়াক্ষেত্রে ক্রিকেটের বাইরেও যেমন নক্ষত্ররা রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন বিশ্বের নানা দেশের প্রথিতযশা ক্রীড়াব্যক্তিত্ব। একনজরে সেই তালিকার দিকে নজর রাখা যাক।
মিলখা সিং ও নির্মল কৌর
ভারতীয় ক্রীড়াক্ষেত্রে ক্রীড়া-দম্পতি। দুজনেই প্রয়াত হলেন কয়েক দিনের ব্যবধানে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে। প্রথমে করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন ফ্লাইং শিখ মিলখা সিং। তাঁর পর তাঁর স্ত্রী তথা ভারতীয় ভলিবল দলের অধিনায়ক নির্মল কৌর করোনা আক্রান্ত হন। প্রায় মাসখানেক ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৮ জুন ৯১ বছর বয়সে প্রয়াত হন কিংবদন্তী স্প্রিন্টার মিলখা সিং। তাঁর প্রয়াণের পাঁচ দিন আগে প্রয়াত হন নির্মল কৌর। ১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে ৪০০ মিটার দৌড়ের ফাইনালে চতুর্থ স্থান দখল করায় অল্পের জন্য পদক হাতছাড়া হয়। সেটাই তাঁর কেরিয়ারের সেরা কীর্তি। চারবার এশিয়ান গেমসে সোনা জিতেছেন। ১৯৫৬ ও ১৯৬৪ সালের অলিম্পিকেও অংশ নেন মিলখা, ১৯৫৯ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার পেয়েছিলেন।
|
সৈয়দ শাহিদ হাকিম
প্রাক্তন ভারতীয় ফুটবলার তথা অলিম্পিয়ান সৈয়দ শাহিদ হাকিম প্রয়াত হন। তিনিও ১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার দুই দিন পর গত অগাস্টে কর্নাটকের গুলবর্গায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হাকিম। বয়স হয়েছিল ৮২। হাকিমের জন্ম হায়দরাবাদে। ১৯৬০ সালে সার্ভিসেসের হয়ে সন্তোষ ট্রফি জেতেন। ১৯৯৮ সালে তাঁর প্রশিক্ষণাধীন মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা ডুরান্ড কাপ জিতেছিল।
|
ও চন্দ্রশেখর
অগাস্ট মাসেই প্রয়াত হন ভারতের প্রাক্তন অলিম্পিয়ান ফুটবলার ও চন্দ্রশেখর। ১৯৬২ সালের এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন তিনি। নিজের বাসভবনেই ৮৫ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন। ভারতের প্রাক্তন এই ডিফেন্ডার ছিলেন ১৯৬০ সালের রোম অলিম্পিকের দলেও। ১৯৬৩ সালে মহারাষ্ট্রের সন্তোষ ট্রফিজয়ী দলেরও সদস্য তিনি।
|
লি ইভান্স
চলতি বছরের ১৯ মে প্রয়াত হন লি ইভান্স। ১৯৬৮ সালের অলিম্পিকে তিনি দুটি সোনা জিতেছিলেন। ৪০০ মিটার এবং ফোর ইনটু ফোর হান্ড্রেড মিটার রিলেতে। তিনি যে রেকর্ড গড়ে পদক দুটি জেতেন সেই রেকর্ড দুটি অক্ষত ছিল যথাক্রমে ২০ ও ২৪ বছর। পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে যেমন বর্ণবৈষম্যের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন, তেমনই বর্ণবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেও সামিল ছিলেন। অলিম্পিক প্রজেক্ট ফর হিউম্যান রাইটসের তিনি ছিলেন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।
|
ডিঙ্কো সিং
এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী বক্সার ডিঙ্কো সিং লিভার ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘদিন লড়াইয়ের পর প্রয়াত হন গত ১০ জুন। ১৯৯৮ সালে অর্জুন ও ২০১৩ সালে তিনি পদ্মশ্রী পুরস্কার পান। ১৯৯৭ সালে কিংস কাপ জেতার পাশাপাশি ১৯৯৮ সালে ব্যাঙ্কক এশিয়ান গেমসে তিনি সোনা জেতেন। ভারতীয় নৌবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল মাত্র ৪২।
|
কেশব দত্ত
হকির কিংবদন্তি কেশব দত্ত প্রয়াত হন ৭ জুলাইয ১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালে অলিম্পিকে সোনাজয়ী ভারতীয় হকি দলের সদস্য ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন বার্ধক্যজনিত অসুখে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।
|
রবিন্দর পাল সিং ও এম কে কৌশিক
১৯৮০ সালে মস্কো অলিম্পিকে সোনাজয়ী ভারতীয় হকি দলের দুই সদস্য রবিন্দর পাল সিং ও এমকে কৌশিক প্রয়াত হন একই দিনে। ৮ মে। দুজনেরই প্রয়াণ করোনা আক্রান্ত হয়ে। ১৯৯৮ সালে এমকে কৌশিক অর্জুন পুরস্কার পান। ভারতীয় মহিলা হকি দলের কোচ ছিলেন, ২০০২ সালে তিনি দ্রোণাচার্য পুরস্কারও পান।
|
নন্দু নাটেকর
গত ২৮ জুলাই প্রয়াত হন ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের কিংবদন্তি নন্দু নাটেকর। বয়স হয়েছিল ৮৮। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। পুনেতে নিজের বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
|
নোভি কাপাডিয়া
ভারতীয় ফুটবলের প্রথিতযশা পরিসংখ্যানবিদ ও ধারাভাষ্যকার নোভি কাপাডিয়ার কণ্ঠ থেমে গেল গত নভেম্বরে। দীর্ঘ রোগভোগের পর তিনি ৬৭ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন। বিরল স্নায়ুরোগে ভুগছিলেন, ভেন্টিলেনে রেখেও শেষরক্ষা করা গেল না। ৯টি ফুটবল বিশ্বকাপ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নোভি কাপাডিয়া তাঁর এই বিরল রোগের কারণে ঘরবন্দি অবস্থাতেই শেষ কয়েক বছর কাটাতে বাধ্য হন।