তৃণমূলে শোভন-বিচ্ছেদ আসন্ন! যে পাঁচ কারণে মমতা অসন্তুষ্ট তাঁর প্রিয় কাননের উপর
পান থেকে চুন খসলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কানন বলতে অজ্ঞান ছিলেন। এখন তাহলে মেয়র শোভনে এত বৈরাগ্য কেন। জেনে নিন পাঁচ কারণ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়াসঙ্গী হিসেবে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পরিচিতি সর্বজনবিদিত। সেই কারণেই কলকাতা পুরসভার মেয়র পদ থেকে শুরু করে রাজ্যে পরিবর্তনের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে তিনি ছিলেন 'অটোমেটিক চয়েস'। পান থেকে চুন খসলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কানন বলতে অজ্ঞান ছিলেন।
কিন্তু এমন কী ঘটল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বিষময় হয়ে উঠল। এমনকী শোভনের ব্যবহারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এতটাই রুষ্ট যে, তাঁর মুখদর্শন পর্যন্ত করতে চান না। এমনই সব রটনা এখন রাজনৈতিক মহলে ঘোরাফেরা করছে। এরই মধ্যে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর কিছু কারণ। যে সমস্ত কারণে শোভন চট্টোপাধ্যায় এখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অসন্তোষের পাত্র হয়ে উঠেছেন।
এক নজরে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক কী সেই কারণ
শোভন-রত্নার পারিবারিক বিবাদ
সম্প্রতি মেয়র ও মেয়র পত্নীর পারিবারিক সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছছে। একে-অপরের মুখ দর্শন তো বন্ধই, আদালতের দোরগোড়ায় এখন বিচারাধীন তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা। শোভন চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সম্পর্কের এই টানাপোড়েন ভালো চোখে নেননি মুখ্যমন্ত্রী। বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেও, কোনও ফল না হওয়ায় হাল ছেড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রাক্তনীর বাসভবন সংস্কার বিতর্ক
ছ'মাস আগে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বাড়ি সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী নিজের কাগজপত্রে সই করে দেন। কিন্তু মেয়র সেই কাজে আমল দেননি। এরপর মুখ্যমন্ত্রী মেয়রের এই কাজে মনক্ষুন্ন হন। তিনি সরাসরি পুর কমিশনার খলিল আহমেদকে তলব করে এই ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলেন। কিন্তু মেয়রকে কিছুই বলেননি।
দল ও প্রশাসনের কাজে গাছাড়া ভাব
পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় দল ও প্রশাসনের কাজে আগের মতো সক্রিয় হতে পারছেন না। তিনি ব্যক্তিগত কাজ নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। ফলে দলের কাজ ও প্রশাসনিক কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। উল্লেখ্য, একাধারে তিনি মেয়র, অন্যদিকে মন্ত্রী। তার উপর গুরুদায়িত্ব ছিল। তার থেকেও বড় কথা- সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তিনি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার দায়িত্বে।
নেপথ্যে নারদ মামলায় জেরা
নারদ মামলায় নাম জড়ায় কলকাতার মহানাগরিক শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। তাঁকে তলব করা হলে মেয়র-পত্মী রত্না চট্টোপাধ্যায় নিউ মার্কেট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। নারদ নিউজ পোর্টালের কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হয়। এর পর নারদ-কাণ্ডে তলব করা হয় স্ত্রী রত্নাকেও। সিবিআই-ইডি জেরাও করে তাঁদের। এরপরই সম্পর্কে জটিলতা তৈরি হয় স্বামী-স্ত্রীর।
নিরাপত্তার কোপে জে়ড প্লাস থেকে জেড
এতদিন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জেড প্লাস নিরাপত্তা ভোগ করে আসছিলেন। হঠাৎ করেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যাপাধ্যায়ের নির্দেশে নিরাপত্তা থেকে প্লাস মাইনাস হয়ে যায়। অর্থাৎ শুধু জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা বলবৎ হয়। তা নিয়েও বিস্তর জলঘোলা হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনের কঠোর মনোভাবে দল থেকে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। শোভন কোর কমিটির বৈঠকেও আসা বন্ধ করে দেন।