রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেবেন সুদীপ, উপেক্ষিত তাপস-কুণালরা কোথায় আটকালেন
রোজভ্যালি-কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল কংগ্রেসের এক সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামিন ও তাঁকে সক্রিয় রাজনীতিতে ফেরানো নিয়ে দলে যে তৎপরতা দেখা গিয়েছিল, তার কিয়দংশ দেখা যায়নি তাপস পালের ক্ষেত্রে।
রাত পোহালেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। রাজ্যে রাজ্যে ভোটদানের প্রস্তুতি তুঙ্গে। প্রত্যেক দলই নিজের নিজের মতো করে 'গেমপ্ল্যান' তৈরি করেছে। এ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসে তো প্রস্তুতির মাত্রা তুলনায় বেশিই। কিন্তু সেই দলের দুই সাংসদকেই এবার ভোটদানে বিরত থাকতে হবে। একজন অভিনেতা-সাংসদ তাপস পাল। অন্যজন সাংবাদিক-সাংসদ কুণাল ঘোষ। তাঁদের ভোটদান নিয়ে আইনি জটিলতা কাটাতে কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয়নি দলের পক্ষ থেকে।
রোজভ্যালি-কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল কংগ্রেসের এক সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামিন ও তাঁকে সক্রিয় রাজনীতিতে ফেরানো নিয়ে দলে যে তৎপরতা দেখা গিয়েছিল, তার কিয়দংশ দেখা যায়নি তাপস পালের ক্ষেত্রে। একই ঘটনায় গ্রেফতার, একই দলের সাংসদ, তবু ব্রাত্য অভিনেতা তাপস পাল। তাঁকে নিয়ে কেনও আগ্রহই নেই তৃণমূলে। দু'বারের বিধায়ক, দু'বারের সাংসদকে নিয়ে তবে কি বিরক্ত দল?
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোটের প্রার্থী মীরা কুমারকে ভোট দেওয়ার 'ফতোয়া' জারি করে প্রত্যেক বিধায়ক ও সাংসদকে ইতিমধ্যে এসএমএস করা হয়েছে তৃণমূলের পক্ষ থেকে। সেইমতো তৃণমূল শিবিরে নির্বাচনের আগে বেশ কিছুদিন ধরেই সাজো সাজো রব। কিন্তু রোজভ্যালিকাণ্ডে ধৃত সাংসদ তাপস পালের ভোটদানের সংস্থান থাকলেও, দল কোনও আগ্রহই দেখাল না। ফলে দেশের সাংবাধানিক শীর্ষপদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন অভিনেতা-সাংসদ।
বর্তমানে তিনি বন্দি অবস্থায় ভুবনেশ্বর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে আদালতের অনুমোদনের জন্য আবেদন করেননি। তাঁর দলও তাঁকে নিয়ে আগ্রহ দেখাননি। কেন দলের তরফে এমন দু'মুখো নীতি? একাংশের ব্যাখ্যা তাপস পাল দলে উপেক্ষিত। সুদীপবাবু ও তাপসবাবু একইসঙ্গে গ্রেফতার হলেও প্রথমজনের গ্রেফতারি ও জামিন নিয়ে দল যতটা সরব হয়েছিল, দ্বিতীয়জনকে নিয়ে তাঁর কিয়দংশও হয়নি।
অন্য একটি সূত্রের ব্যাখ্যা তাপস পাল প্রভাবশালী নন, তা প্রমাণ করতেই দল এই উপেক্ষার কৌশল নিয়েছে। কিন্তু আদতে কারণ যাই হোক না কেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাপস পালের ভোট দেওয়া হচ্ছে না। সাংসদ হয়েও দেশের সাংবিধানিক প্রধান নির্বাচনে তাঁর কোনও যোগদান থাকছে না এবার। সৌজন্য চিটফান্ড সংস্থা 'রোজভ্যালি' কোলেঙ্কারিতে গ্রেফতারি।
একইভাবে আর এক চিটফান্ড সংস্থা 'সারদা'য় ফেঁসে তৃণমূলের সাসপেন্ডেড সাংসদ কুণাল ঘোষকেও ভোটদানে বিরত থাকতে হচ্ছে। তাঁর সমস্যা আবার একটু ভিন্নতর। তিনি বর্তমান সারদা মামলায় জামিনে মুক্ত। কিন্তু আদালতের নির্দেশে তাঁর নারকেলবাগান থানার বাইরে যাওয়ার নিয়ম নেই। ফলে তিনি ভোট দিতে বিধানসভায় যেতে পারবেন না। আদালতে তিনি আবেদন করেছিলেন ভোটদানের অনুমতি চেয়ে। কিন্তু মামলার চাপে কুণালবাবুর মামলাটি নির্দিষ্ট সময়ে শুনানি হয়নি। তাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাঁর ভোট দেওয়া আটকে গিয়েছে।
তাঁর কাছেও অবশ্য তৃণমূলের তরফে কোনও এসএমএস আসেনি। তবে তৃণমূলের এক শীর্ষনেতা তাঁকে ফোন করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটদানের কথা জানান। একজন সাসপেন্ডেড নেতাকে ফোন করে কেন ভোটদানের জন্য সুপারিশ করা হল, তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তবে যত বিতর্কই থাক রাজ্যের শাসকদলের দুই সাংসদকে মোটের উপর ভোটদানে বিরতই থাকতে হচ্ছে এবার।