বাদুড়–করোনা ভাইরাস লক্ষ বছর ধরে একসঙ্গে বিকশিত হচ্ছে, দাবি নতুন গবেষণায়
চিনের উহান শহর থেকে এই করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি হলেও তা কোথা থেকে এসেছে তা নিয়ে গোটা বিশ্বে কম জল্পনা–কল্পনা হয়নি। অবশেষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তথা হু জানিয়েছে যে করোনা ভাইরাস আসলে কোথা থেকে এসেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের এই বিশেষ সংস্থা জানিয়েছে, তাদের হাতে আসা সব প্রমাণ বিশ্লেষণ করে তারা জানতে পেরেছে, বাদুড় থেকেই এর উৎপত্তি হয়েছে। বিভিন্ন গোষ্ঠীর বাদুড়ের করোনা ভাইরাস বহনের নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে। এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, করোনা ভাইরাস বহনকারী এই বাদুড়ের পরিবার এমনই, এই উড়ন্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী ও করোনা ভাইরাস এদের একসঙ্গে লক্ষ লক্ষ বছরের সম্পর্ক।
৩৬ প্রজাতির বাদুড় করোনার জীবাণু বহন করে
জার্নাল সায়েন্টিফিক রিপোর্টে এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে বাদুড় গাছকে পরাগিত করতে, রোগ-বাহিত কীট-পতঙ্গ খেয়ে ও গ্রীষ্ণকালিন অরণ্যের গাছের বীজ ছড়িয়ে দেওয়ার মতো বিশ্বে অনেক ভালো কাজের সঙ্গে এটাও সত্যি যে বাগুড় প্রাকৃতিকভাবে করোনা ভাইরাস বহন করে। আমেরিকার শিকাগো ফিল্ড মিউজিয়ামের বিজ্ঞানীরা বিচিত্র এই ভাইরাস বহনকারী প্রাণীকে বোঝার জন্য পশ্চিম ভারতীয় সাগর ও আফ্রিকা সংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী ৩৬ প্রজাতির বাদুড়ের সঙ্গে তুলনা করেছে, এরা সকলেই করোনার জীবাণু বহন করে। শিকাগো ফিল্ড মিউজিয়ামের স্টিভ গুডম্যান যিনি এই গবেষণার সহ-লেখক, তিনি বলেন, ‘বাদুড় ও করোনা ভাইরাসের মধ্যে গভীর বিবর্তনীয় ইতিহাস রয়েছে বলে আমরা জানতে পারি।' তিনি আরও বলেন, ‘করোনা ভাইরাসগুলি কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে সে সম্পর্কে আরও ভাল বোঝার জন্য আমাদের ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্য কর্মসূচী গুলি সহায়তা করতে পারে।'
করোনা বাদুড়দের মধ্যে থাকলেও তা তাদের জন্য ক্ষতিকর নয়
গবেষকদের মতে, বিভিন্ন ধরনের করোনা ভাইরাস রয়েছে, বাদুড় প্রজাতির মধ্যে সম্ভাব্য বহনকারী অনেকে, যদিও তাদের বেশিরভাগই অজানা প্রজাতির এবং তারা মানুষের সংস্পর্শে আসে না তাই তাদের থেকে ঝুঁকি কম। কোভিড-১৯-এর পেছনে কে রয়েছে এবং বাদুড় করোনা ভাইরাস বহন করছে গবেষণায় এই দু'টি বিষয়ই আলাদা। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ভাইরাস বহনকারী এই বাদুড়গুলি কিভাবে মহামারি ভাইরাসে পরিণত হল তা বুঝতে সহায়তা করবে। গবেষকরা জানিয়েছেন, সমস্ত প্রাণীর ভেতরেই ভাইরাস রয়েছে এবং অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের চেয়ে বাদুড় প্রাকৃতিকভাবে করোনা ভাইরাসের জীবাণু বহন করে। যদিও তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একটাই বেশি যে তাদের মধ্যে থাকা করোনা ভাইরাস কোনও ভাবেই বাদুড়দের ক্ষতি না করলেও তা অন্য প্রাণীদের জন্য ক্ষতিকর, যদি তা প্রাণীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার সুযোগ পায়, জানিয়েছেন গবেষকরা।
১০০০ বাদুড়ের নমুনা সংগ্রহ
সমীক্ষাতে গবেষকরা করোনা ভাইরাসের বিভিন্ন ক্ষমতা এবং তারা যে প্রাণীতে বাস করে তার মধ্যে জিনগত সম্পর্ককে মূল্যায়ন করছেন। গুডম্যান ও তাঁর সহকর্মীরা পশ্চিম ভারতীয় সাগর ও আফ্রিকার দেশ মোজামবিক উপকূলবর্তী এলাকায় বসবাসকারী ৩৬ প্রজাতির ১০০০ বাদুড়ের সোয়াব ও রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তাঁরা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে ৮ শতাংশ বাদুড়ের নমুনাতে করোনা ভাইরাস রয়েছে। গবেষকরা বলেন, ‘এটি সংক্রমিত বাদুড়ের অনুপাতের একটি খুব মোটামুটি অনুমান।' ডে লা রিইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রোগ পরিবেশবিদ ক্যামিলি লেবারবেঞ্চন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাদুড়ের মধ্যে মরশুমের তারতম্য অনুযায়ী এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার একাধিক প্রমাণ রয়েছে, এই সংখ্যাটি বছরের সময় অনুসারে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হতে পারে।'
বিশ্বের বহু রোগের বহনকারী হিসাবে পরিচিত বাদুড়
প্রসঙ্গত, গত বেশ কয়েক বছর ধরে গবেষণায় দেখা গিয়েছে প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত হয় এমন বেশ কিছু ভাইরাসের উৎস বাদুড়। এর মধ্যে রয়েছে রাবিস, মারবুর্গ, নিপা এবং হেন্ড্রা ভাইরাস। ২০০২ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে সারা পৃথিবীতে যে সার্সের প্রকোপ হয়েছিল তাতে মারা গিয়েছিলেন ৮০০-রও বেশি মানুষ। এরও উৎস ছিল সেই বাদুড়ই। ২০০৭ সালে আমেরিকান সোসাইটি অফ মাইক্রোবায়োলজির এক গবেষণায় সার্সের মত করোনা ভাইরাস মহামারির ফের উদ্ভূত হবার আশঙ্কা ব্যক্ত হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা লিখেছিলেন, ‘করোনা ভাইরাস জিনের পুনর্সমন্বয় ঘটাতে পারে, যার জেরে নতুন জেনোটাইপ ও প্রকোপ ছড়াতে পারে। হর্স শু প্রজাতির বাদুড় সার্স-কোভি২ ভাইরাসের অন্যতম আধার এবং দক্ষিণ চিনে এই বাদুড় খাবার হিসেবেও চালু। দুয়ে মিলে পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগের। ফলে মারাত্মক পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকা জরুরি।'