নেই ওষুধ–অক্সিজেন, করোনায় বেহাল রাজ্য, তাও কর্নাটক সরকারের মুখে ‘অল ইজ ওয়েল’
করোনায় বেহাল কর্নাটক
বেঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি হাসপাতালে গত সপ্তাহে ভর্তি হল কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত এক তরুণী। চিকিৎসকরা তাঁকে ইটোলিজুমাব ১০০ এমজি বা টোকিলিজুমাব ৪০০ এমজি দ্রুত দেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু তরুণীর পরিবার ভিভিআইপি থেকে শুরু করে ফার্মেসি কোথাও এই দু’টি ওষুধ পাননি। এরই মাঝে তরুণীর অবস্থাও ক্রমে খারাপের দিকে এগোচ্ছিল। তরুণীর ভাই বলে, 'এই ২টি ওষুধের মজুত শেষ হয়ে গিয়েছে হাসপাতালে এবং তারপর আর সরবরাহ হয়নি।’
রাজ্যে ওষুধ–বেড ও অক্সিজেনের অভাব
এই ২টি ওষুধের খোঁজ নেওয়ার জন্য কর্নাটক সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রী কে সুধাকর এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী সিএন অশ্বথ নারায়ণ সহ সরকারি একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি কিছুই বলতে পারেন না। একমাত্র দক্ষিণ বেঙ্গালুরুর সাংসদ তেজস্বী সূর্য জানান যে তিনি চেষ্টা করছেন। কোভিড আক্রান্ত তরুণীর এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি উদাহরণ গোটা রাজ্য জুড়ে করোনায় আক্রান্ত পরিবার ও চিকিৎসকদের বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে। তার কারণ ওষুধ, অক্সিজেন ও বেডের ঘাটতি রয়েছে হাসপাতালগুলিতে।
সরকারি হাসপাতালে অবস্থা আরও বাজে
সূত্রের খবর, রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের চিত্র আরও খারাপ। কোলাম ও পেরিয়াপাটনামের (মাইসুরু) স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে মেডিক্যাল অক্সিজেনের অভাবে গত ২দিনে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে রাজ্য সরকার ক্রমাগত এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিকে গোপন রেখে জানিয়ে গিয়েছে যে 'সব ঠিক আছে।' সরকারের পক্ষ থেকে জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে হাসপাতাল যথেষ্ট বেড উপলব্ধ এবং অক্সিজেন ও ওষুধের সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে।
মে মাসে ১২ দিন বন্ধ থাকবে ব্যাঙ্ক, একনজরে ছুটির দিনের তালিকা
সরকার ও বাস্তব চিত্রে ফারাক
শনিবার সুধাকর দাবি করেছেন যে কেন্দ্র সরকার রাজ্যের রেমডেসিভিরের বরাদ্দ ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৫০ হাজার থেকে ১.২ লক্ষ করে দিয়েছে। এর পাশাপাশি, প্রতিদিনের বরাদ্দ অক্সিজেনও ৩০০ মেট্রিক টন থেকে বাড়িয়ে ৮০০ মেট্রিক টন করে দেওয়া হয়েছে। একটি টুইটে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই দাবিকে সমর্থন জানিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পা জানান বরাদ্দ বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে মহামারির বিরুদ্ধে রাজ্যের লড়াই আরও শক্তি পেয়ে গেল। যদিও সরকারের এই দাবির সঙ্গে বাস্তব চিত্রের কোনও মিল পাওয়া যায়নি। মানুষ এখনও বেডের অভাবে, অক্সিজেন, ওষুধ ও অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে এদিক ওদিক দৌড়ে মরছে। এর পাশাপাশি কবরস্থানে সমাধিস্থ করার জায়গা নেই এবং শ্মশানে দেহ দাহ করার লম্বা লাইন পড়ে গিয়েছে।
উদাসীন কর্নাটক সরকার
সরকারের এমন মনোভাব অনেকেরই চোখে খটকা লেগেছে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমাগত বেড, অক্সিজেন, ওষুধ, প্লাজমা সহ বিভিন্ন বিষয় চেয়ে পোস্ট দেখার পরও সরকার উদাসীন। এই পরিস্থিতির মধ্যেই কিছু কিছু বেসরকারি হাসপাতালে করোনা টেস্ট করতে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত এক সপ্তাহে কমপক্ষে ১২টি প্রতারণার মামলা হয়েছে এ রাজ্যে, সবই কোভিড-১৯ সংক্রান্ত।