নজরে 'পানামা নথি', ঐশ্বর্য ছাড়াও তথ্যে রয়েছে কোন কোন ভারতীয় হেভিওয়েটের নাম?
পানামা নথি কাণ্ডে সোমবার দিল্লির লোকনায়ক ভবনে ইডির দফতরে প্রায় ছয় ঘণ্টা ম্যারাথন জেরার পর ফের খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে এই কেস। ফরেন এক্সচেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট (ফেমা) লঙ্ঘন করে বিদেশে সম্পদ লুকিয়ে রাখার অভিযোগ রয়েছে ঐশ্বর্য রাই বচ্চনের বিরুদ্ধে। আর তাই তাঁকে এবিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু ঐশ্বর্য রাই বচ্চন একাই নন জিনি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ভারতের আরও অনেক নামজাদা বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আছেন যাঁদের বিরুদ্ধেও দেশের কর ফাঁকি দিয়ে বিপুল পরিমান সম্পত্তি বিদেশে লুকিয়ে রাখার অভিযোগ আছে।


কার কার নাম আছে পানামা নথিতে?
পানামা নথি কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত যেসব ধনী এবং বিখ্যাত ভারতীয়দের নাম এসেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন বিলিয়নেয়ার ব্যারন কুশল পাল সিং, বিলিয়নেয়ার গৌতম আদানির ভাই বিনোদ আদানি এবং বিলিয়নেয়ার রিয়েল এস্টেট ম্যাগনেট সমীর গেহলউট। এছাড়াও তালিকায় রয়েছে বলিউডের বেশ কিছু মেগা তারকার নাম। আর সেই নামের মধ্যে অন্যতম বিগ-বি অমিতাভ বচ্চন ও তাঁর পুত্রবধূ ঐশ্বর্য রাই বচ্চন।

অমিতাভ বচ্চন
ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী অমিতাভ বচ্চন ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ এবং বাহামাসে প্রতিষ্ঠিত চারটি শিপিং ফার্মের ডিরেক্টর ছিলেন। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, শিপিং কোম্পানি গুলির অনুমোদিত মূলধন ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার মার্কিন ডলারের মধ্যে থাকলেও মিলিওন ডলারের ব্যবসা করেছে তারা। তাহলে এত বিপুল পরিমান অর্থ তারা পেল কোথাথেকে?

অজয় দেবগণ
ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত মেরিলেবোন এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেডের বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার হিসেবে পানামা নথিতে অভিনেতা অজয় দেবগনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত এই ফার্মের মূল শেয়ারহোল্ডার ছিলেন হাসান এন সায়ানি। এরপর অজয় দেবগন একই দিনে সমগ্র শেয়ারহোল্ডিং কিনেছিলেন। অবশ্য তিনি বলেছিলেন যে সংস্থাটি আইনত আরবিআই নির্দেশিকা মেনেই প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।

কে পি সং
ডিএলএফ-এর প্রতিষ্ঠাতা, ভারতের বৃহত্তম রিয়েল এস্টেট ডেভলপার কেপি সিং ও তাঁর স্ত্রী যৌথ ভাবে ২০১০ সালে ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে একটি কোম্পানি অধিগ্রহণ করেছিলেন বলে নথি থেকে জানা গিয়েছে। এরপর ২০১২ সালে তাঁর পুত্র রাজীব সিং এবং কন্যা পিয়া সিং আরও দুটি কোম্পানি স্থাপন করেন। যার মোট সম্পত্তির পরিমান প্রায় ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সমীর গেহলট
রিয়েল এস্টেট ফার্ম ইন্ডিয়াবুলসের মালিক সমীর গেহলটের নামও উল্লেখ রয়েছে নথিতে। মূলত পারিবারিক সংস্থার মাধ্যমে লন্ডনে কর্নাল, দিল্লি, বাহামা, জার্সির মত সংস্থায় বিপুল বিনিয়োগ করেন। এই লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রাক্তন বিধায়ক তথা হরিয়ানা মহিলা কংগ্রেসের প্রধান সুমিতা সিং ও তাঁর স্বামী জগদীপ সিং ভির্কের নামও সামনে এসেছে।
তালিকায় অন্তর্ভুক্ত অন্যরা হলেন সান গ্রুপের হেড নন্দ লাল খেমকার ছেলে শিব বিক্রম খেমকা, অ্যাটর্নি জেনারেল সোলি সোরাবজির ছেলে জাহাঙ্গীর সোরাবজি, দিল্লি লোকসত্তা পার্টির প্রাক্তন নেতা
অনুরাগ কেজরিওয়াল, মেহরাসন জুয়েলার্সের মালিক নবীন মেহরা, আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন ইকবাল মির্চির স্ত্রী-এর নামও।

পানামা নথি কী?
পানামার বিখ্যাত আইনি প্রতিষ্ঠান 'মোস্যাক ফনসেকা' গ্রাহক নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার নাম করে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে অর্থপাচার, নিষেধাজ্ঞা এড়ানো এবং কর ফাঁকিতে সহযোগিতা করেছে বলে অভিযোগ সামনে আসে। আর এই বিপুল পরিমান অর্থ সম্পদ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে ১ কোটি ১৫ লক্ষ গোপন নথি ফাঁস হয়, যা পানামা নথি নামে পরিচিত। মূলত কর ফাঁকি দেওয়ার জন্যই বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বিদেশে প্রচুর সম্পত্তি গচ্ছিত রেখেছেন বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে এই নথি থেকে। প্রথম পর্বের পানামা নথির ভিত্তিতে সরকার ১১৪০ কোটি টাকার অঘােষিত সম্পত্তি চিহ্নিত করতে পেরেছে ভারত সরকার।