দ্বিতীয় মোদী সরকারের প্রথম বাজেট: প্রান্তিক মানুষকে কাছে টানতে প্রথম থেকেই ঝাঁপালেন নির্মলা সীতারামন
কয়েকবছর আগেও অর্থনীতির প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে 'সুট-বুট কী সরকার' বলে কটাক্ষ করেছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।
কয়েকবছর আগেও অর্থনীতির প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে 'সুট-বুট কী সরকার' বলে কটাক্ষ করেছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। উপলক্ষটি ছিল প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার সঙ্গে দেখা করার সময়ে লক্ষ-টাকার সুট পরা।
দু'হাজার ঊনিশে মোদী দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করার পরে শুক্রবার, ৫ জুলাই, তাঁর নয়া অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন প্রথম বাজেট পেশ করলেন সংসদে। এবং পরিষ্কার অর্থেই, নতুন এনডিএ সরকার সর্বতোভাবে চেষ্টা করল গরিব-গুর্বোদের পাশে দাঁড়াতে।
সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ালেন মোদী সরকার প্রথম থেকেই
এবারের লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদী এবং তাঁর ভারতীয় জনতা পার্টি জানত যে যে সাধারণ মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়ে তাঁরা পাঁচ বছর আগে প্রথমবার ক্ষমতায় আসে, তাঁদের জন্যে আবারও ঝাঁপাতে হবে তাঁদের। একটি ক্ষেত্রেই সেই স্বপ্নের পুনর্নির্মাণ সম্ভব ছিল সবচেয়ে ভালো এবং তা হল অর্থনীতির ক্ষেত্রে। মোদীর প্রথম মেয়াদে এটুকু বোঝা গিয়েছিল যে বিকাশ এবং জনকল্যাণের ক্ষেত্রে তাঁর সরকার যে সকল পদক্ষেপ নিয়েছিল -- যেমন গ্রামাঞ্চলে গৃহনির্মাণ, রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি হ্রাস, টয়লেট নির্মাণ -- তা নির্বাচনী রাজনীতিতে যে খুব ভালো ফল দিয়েছে তা মোদীর বিরোধীরাও মানবেন। নানা জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের দ্বারা মোদী এবং বিজেপির একটি অনুগত ভোটব্যাঙ্ক তৈরী হয় যা জাতপাতের রাজনীতির প্রভাবকে নির্মূল করে অনেকাংশেই। বিজেপির স্ট্র্যাটেজি-মেকাররা বোঝেন যে এক এক ব্রহ্মাস্ত্র যা দিয়ে অনেক বিরোধী দলকেই ঘায়েল করা যাবে। উত্তরপ্রদেশে গত দু'টি যে নির্বাচনে তা দেখাও গিয়েছে।
সাধারণ মানুষ এখনও মোদীকে বেনিফিট অফ ডাউট দিচ্ছেন
তবুও দেশের মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্তের মধ্যে একটি হতাশা বাড়ছিলই এবং তা অর্থনৈতিক বিকাশের প্রশ্নে, চাকরির প্রশ্নে। অন্যান্য নানা কারণে (যেমন বিরোধীদের বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব) মোদীকে জনসাধারণ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এনেছেন এই জন্যেই যে গত পাঁচ বছরের অপরিপূর্ণ কাজগুলি যেন আগামী পাঁচ বছরে শেষ করতে পারে তাঁর সরকার।
এই বাজেটের মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক চালও
এবং রাজনৈতিকভাবে এই চ্যালেঞ্জটিকে শুক্রবার বেশ দক্ষতার সঙ্গে সামলালেন নির্মলা। গ্রাম, গরিব এবং কৃষকের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন প্রথমত যাতে বিরোধীদের যাবতীয় আক্রমণ ভোঁতা করে দেওয়া যায়।
নিজেদের প্রকল্প-ভিত্তিক অর্থনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে নির্মলা দেন মাস্টারস্ট্রোক। ২০২২-এর মধ্যে ঘরে ঘরে গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ; ২০২৪-এর মধ্যে প্রত্যেক ঘরে ঘরে জল পৌঁছে দেওয়া এবং প্রধানমন্ত্রী কিষান প্রকল্পের সম্প্রসারণ -- এসবের অঙ্গীকারের মাধ্যমে নির্মলা সমাজের প্রান্তিক মানুষের সমর্থন পাওয়ার পূর্ণ প্রচেষ্টা করেন।
এখন এটাই দেখার যে নির্মলার এই বাজেট কতটা মন টানতে পারে সাধারণ মানুষের।