শিলচরে কবি শ্রীজাত-র অনুষ্ঠানে ধুন্ধুমার, হোটেলে পড়ল ঢিল
শিলচরে শনিবার (১৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বিজেপির সমর্থকরা কবি শ্রীজাতর উপর হামলা চালায়।
শনিবার সন্ধ্যায় অসমের শিলচরে বিজেপির হাতে আক্রান্ত হলেন কবি শ্রীজাত। 'এসো বলি' নামে এক সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। জানা গিয়েছে তাঁর একটি কবিতা নিয়ে আপত্তি তোলে বিজেপি। শ্রীজাত 'তৃণমূলের দালাল' এবং তাঁকে পরিকল্পিতভাবে অসমে পাঠানো হয়েছে বলেও দাবি করে গেরুয়া-বাহিনী।
অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল একটি বেসরকারি হোটেলে। প্রায় ২০০ জন মানুষ উপস্থিত ছিলেন সেই অনুষ্ঠানে। সেখানে বর্তমান সময়ে বিবেকানন্দের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করছিলেন শ্রীজাত। সেই সময় হঠাৎই হোটেলটি ঘিরে ফেলে গেরুয়া-বাহিনীর সদস্যরা। বাইরে থেকে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানায়। অভিযোগ শ্রীজাতর হাত থেকে মাইকও কেড়ে নেওয়া হয়।
উপস্থিত অতিথি ও শ্রোতা-দর্শকদের মধ্যে উৎকন্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। তবে জানা গিয়েছে এরপর অনেকেই বিজেপি কর্মীদের আচরণের প্রতিবাদ করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে এরপর আচমকাই হোটেলে ইঁটবৃষ্টি শুরু হয়, সঙ্গে ছিল 'জয় শ্রীরাম' স্লোগান। হোটেলের ভিতর অতিথি ও শ্রোতা-দর্শকদের প্রায় পণবন্দীর মতো অবস্থা হয়। তাঁদের অভিযোগ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেও অসম পুলিশ, ও সিআরপিএফ নীরব দর্শক হয়ে ছিল।
জানা গিয়েছে মূল সমস্য়ার মূলে শ্রীজাতর লেখা একটি কবিতা। 'কন্ডোম' নামের সেই কবিতাটি নিয়ে বস্তুত বেশ কিছুদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। জানা গিয়েছে অনুষ্ঠান চলাকালীন শিলচরের বিজেপি নেতা বাসুদেব শর্মা শ্রীজাতকে প্রশ্ন করেছিলেন 'মহাদেবের ত্রিশূলের মাথায় কন্ডোম'-এর মতো লাইন তাঁর কলম থেকে বের হল কী করে? তাঁর এই ধরণের প্রশ্ন তোলা নিয়ে আপত্তি জানান অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাকিরা।
এরপর বাসুদেব অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরই হামলা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশাল পুলিশ-বাহিনী নামানো হয়। তবে রাত পর্যন্ত এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। ওই হোটেলেই শ্রীজাতর রাত্রীবাসের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। আপাতত হোটলটিকে ঘিরে পুলিশ-বাহিনী রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত জেলা শাসকও ঘুরে গিয়েছেন। তবু স্বস্তি পাননি আয়োজকরা।
এই ঘটনা নিয়ে শ্রীজাত জানিয়েছেন যেহেতু তাঁর লেখা কবিতা ঘিরেই অশান্তি ছড়িয়েছে তাই এই ঘটনায় দায়ও তাঁরই। তবে শিলচরের মানুষ তাঁকে 'আগলে' রেখেছিলেন বলেও জানিয়েছেন কবি। আয়োজকদের পক্ষেও এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যা ঘটেছে তা শিলচরের লজ্জা। কিন্তু তারপরেও যেভাবে শহরের মানুষ শ্রীজাতর পাশে দাঁড়িয়েছেন তাতে গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার জয় হয়েছে।