বিজেপিতে চওড়া হচ্ছে ভাঙন-রেখা, মুখ্যমন্ত্রী বদলে বিদ্রোহের আগুন জ্বলছে ত্রিপুরায়
বিজেপিতে চওড়া হচ্ছে ভাঙন-রেখা, মুখ্যমন্ত্রী বদলে বিদ্রোহের আগুন জ্বলছে ত্রিপুরায়
ত্রিপুরায় ক্ষমতা ধরে রাখতে কৌশলী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। মেয়াদ ফুরনোর ১০ মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী বদল করা হয়েছে। এরপর প্রশ্ন উঠেছে এই মুখ্যমন্ত্রী বদলই না বিজেপির বুমেরাং হয়। নতুন মুখ্যমন্ত্রী বেছে নেওয়ার পর থেকে যেভাবে বিজেপিতে বিদ্রোহ শুরু হয়েছে, তাতে স্পষ্ট বিভাজন। বিজেপিতে ভাঙন জল্পনা উসকে দিয়েছেন বিদ্রোহী মন্ত্রী-বিধায়করাই।
ত্রিপুরায় হাতাহাতিতে জড়ালেন মন্ত্রী-বিধায়করা
ত্রিপুরায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের মেয়াদ ফুরনোর আর ১০ মাস বাকি ছিল। তার আগে রাতারাতি সিদ্ধান্ত হয়ে গেল। অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকের পরদিনই তিনি ইস্তফা দিলেন। এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গে নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেওয়া হল মানিক সাহাকে। তারপরই শুরু হল বিজেপিতে বিক্ষোভ। শুধু বিক্ষোভ নয়, হাতাহাতিও। হাতাহাতিতে জড়ালেন মন্ত্রী-বিধায়করা।
নতুন মুখ্যমন্ত্রীকে বেছে নেওয়ার পরই বিদ্রোহ
শাসকদলের মন্ত্রী-বিধায়কদের এই হাতাহাতি অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বিজেপির বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতৃত্বে ছিলেন মন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল। তাঁকে অনেক মন্ত্রী ও বিধায়ক সমর্থন করেন। কারণ তাঁদের দাবি ছিল, পরিষদীয় দলের বৈঠক ডেকেও কোনও আলোচনা ছাড়াই নতুন মুখ্যমন্ত্রীকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এমন একজনকে শেষ ১০ মাসের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে, যিনি বিধায়ক নন। তার প্রতিবাদেই সরব হন রামপ্রসাদ পালরা।
বিপ্লবের ইস্তফার পর মানিকের আগমনে বাঁধ ভাঙে
তিনি প্রতিবাদ জানিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি। এদিনের ঘটনার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, মনে হচ্ছে বিজেপির ইউনিটটাই এবার ভেঙে পড়বে। রামপ্রসাদ পাল বরাবরই বিপ্লব দেবের বিরোধী গোষ্ঠীর বিধায়ক ছিলেন। সুদীপ রায় বর্মন ঘনিষ্ঠ এই বিধায়ককে মন্ত্রিত্ব দিয়ে বিদ্রোহ ঠেকিয়ে রেখেছিলে বিপ্লব দেব। এবার বিপ্লবের ইস্তফার পর মানিকের আগমনে সেই বাঁধ ভেঙে যায়।
উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেব বর্মনও বিদ্রোহীদের দলে
শুধু মন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল একা নন, ত্রিপুরার উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেব বর্মনও বিদ্রোহীদের দলে রয়েছেন। তিনিও বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চাপিয়ে দেওয়া এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ। তিনি প্রকাশ্যে সরাসরি মুখ খোলেননি, কিন্তু তিনি এদিন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মানিক সাহার শপথ বয়কট করবেন বলেই সূত্রের খবর। বয়কট করবেন রামপ্রসাদ পাল-সহ অনেকেই। এখন দেখরা এই গরহাজিরার তালিকায় কারা কারা থাকেন।
বিজেপিতে ভাঙন চওড়া হওয়ার সম্ভাবনা
বিজেপির পরিষদীয় দলের বৈঠকে হাতাহাতির পর উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেব বর্মনের বাড়িতে বিক্ষুব্ধরা একটি বৈঠক করেন। তাঁরা কী সিদ্ধান্ত নেন, তার উপর নির্ভর করবে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার ভবিষ্যৎ। নির্ভর করবে বিজেপির ভবিষ্যৎও। বিজেপির একাংশে ভাঙন ধরেছে ইতিমধ্যেই। সুদীপ রায় বর্মন ফিরে গিয়েছেন কংগ্রেসে। তিনি কংগ্রেসকে ফের সঙ্ঘবদ্ধ করছেন। তাঁর অনুগামীরা এখনও বিজেপিতে রয়েছেন, যে কোনও দিন তারা বিজেপি ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারেন। আবার বিধায়ক আশিস দাস যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। এখন বিজেপিতে সেই ভাঙন আরও চওড়া হয় কি না, তা-ই দেখার।
মুখ বদলে ক্ষমতা ধরে রাখার প্রয়াস বিজেপির
ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচনের আর বাকি নেই এক বছরও। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের ভাবমূর্তি বিগত তার বছরে তলানিতে নেমেছে। তাই মুখ্যমন্ত্রী বদল করে গড় রক্ষা করতে চাইছে বিজেপি। কিন্তু বিজেপি কি পারবে শুধু মুখ বদল করে ত্রিপুরার ক্ষমতা ধরে রাখতে? সেই প্রশ্নে তোলপাড় রাজনৈতিক মহল। আবার প্রশ্ন উঠেছে, যেভাবে ভাঙন রেখা স্পষ্ট হয়ে উঠছে, তাতে বিজেপি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে কি?
বিজেপিতে মুখ্যমন্ত্রী বদলের রেয়াজ রয়েছে
শুধু ত্রিপুরাই নয়, একাধিক রাজ্য মুখ্যমন্ত্রী বদল করে বিজেপি এর আগে সাফল্য পেয়েছে। তার মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করতে হবে উত্তরাখণ্ডের নাম। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে একই মেয়াদে দুজনকে সরিয়ে বসানো হয়েছিল পুষ্কর ধামীকে। রাজ্যে প্রায় পরাজয়ের মুখে থাকা বিজেপি এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে রাজ্যে জিতেও যায়। তারপর কর্নাটকেও বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বদল করে। ফলে বিজেপিতে মুখ্যমন্ত্রী বদলের রেয়াজ রয়েছে। এখন দেখার ত্রিপুরায় কী আছে বিজেপির কপালে!
মে মাসেই বন্যায় ভাসছে অসম, রাস্তা দিয়ে বইছে জল, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন কার্বি আংলং