পাত্রের বয়স ১৩, পাত্রীর ২৩! এই বিয়ে উসকে দিচ্ছে 'পেহরাদার পিয়া কি'-র স্মৃতি
মরণাপন্ন মায়ের ইচ্ছেপূরণে অন্ধ্রপ্রদেশে এক ১৩ বছরের বালকের সঙ্গে ২৩ বছরের যুবতীর বিয়ে দেওয়া হল।
'পেহরাদার পিয়া কি' সিরিয়ালটির কথা মনে আছে? ১৮ বছরের মেয়ে দিয়া মৃত্যুপথযাত্রী মান সিং-এর অনুরোধ ফেলতে না পেরে বিয়ে করেছিল তার ছেলে ৯ বছরের রতন সিং-কে। গত বছর জুলাইতে সোনি টিভিতে সম্প্রচার শুরু হয়েছিল সিরিয়ালটির। তারপর সিরিয়ালটিতে বাল্য বিবাহে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে বলে, দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়। অনলাইনে এক লক্ষেরও বেশি মানুষ সিরিয়ালটি বন্ধ করে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে পিটিশন দাখিল করেন। আগস্ট মাসেই সিরিয়ালটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, সিরিয়ালে দেখানো সেই কাহিনী যে একুশ শতকের ভারতবর্ষে বাস্তব হয়ে উঠবে তা কে জানত?
অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুল জেলার উপ্পারাহাল গ্রামে ঠিক এরকমই একটা ঘটনা ঘটেছে বলে শনিবার জানিয়েছে অন্ধ্র পুলিশ। এক্ষেত্রে এক ১৩ বছরের বালকের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে এক ২৩ বছরের যুবতীর। স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন, ছেলেটির মা মরণাপন্ন, হয়তো খুব তাড়াতাড়িই বিদায় নেবেন পৃথিবী থেকে। তাই, তার আগে তাঁর নাবালক সন্তানের দেখভাল ও সংসারের কাজ কর্ম করার জন্য ছেলের সঙ্গে একজন প্রাপ্তবয়স্কার বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি।
ঘটনাটি অবশ্য গত মাসের। ২৭ এপ্রিল হয়েছে বিয়ে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানতেন, ঘটনাটি বেআইনি। তাই অত্যন্ত গোপনে সারা হয় সবটা। কিন্তু সোশাল মিডিয়ায় ভরা বাজারে কী এসব চেপে রাখা যায়? বিয়ের ছবি ছড়িয়ে পড়তেই সক্রিয় হয়েছে পুলিশ ও প্রশাসন। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে জেলার নারী ও শিশু কল্যান আধিকারিক শারদা ও তহশিলদার শ্রীনিবাস রাও-এর নেতৃত্বে সরকারি আধিকারিকদের একটি তদন্তকারী দল উপ্পারাহাল গ্রামে যায়। মেয়েটির বাড়ি পাশের চানিকানুর গ্রামে। কিন্তু দুটি জায়গাতে গিয়েই হতাশ হয়েছে তাঁদের। ঘটনার কথা জানাজানি হতেই চম্পট দিয়েছেন দুই পরিবারের সদস্যরাই। তাদের মোবাইল ফোনগুলিও বন্ধ করা আছে।
তবে আশ্চর্যের হল, গ্রামবাসীরাও এতে অন্যায় কিছু দেখছেন না। তাদের বক্তব্য দিন আনা দিন খাওয়া, কৃষিজীবি ওই পরিবারের মহিলা মরণাপন্ন এবং তাঁর স্বামী মদ্যপ। তাই মহিলা সংসারের হাল ধরার জন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের সঙ্গে বড়ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। তাদের আরও একছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। মহিলা মারা গেলে তাদের দেখাশোনা করার কেউ থাকবে না। কাজেই বিষয়টা বেআইনি হলেও আর্থ-সামাজিক দিক থেকে যুক্তিযুক্ত বলেই তারা মনে করছেন।
তবে তহশিলদার শ্রীনিবাস রাও পরিষ্কার জানিয়েছেন, 'বিয়েটি ভেঙে দেওয়া হবে, কারণ এটা আইনের চোখে বৈধ নয়। যদি বাবা-মায়েরা ওই বর-বউকে দুদিনের মধ্যে জেলা প্রশাসনের হাতে তুলে না দেয় তবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবো'।