সারদায় যোগ থাকলে আমায় ফাঁসি দিন, চ্যালেঞ্জ অভিষেকের, ঠিক যেন ঠাকুরঘরে...কলার গল্প!
৩ ফেব্রুয়ারি, কলকাতা: গ্রেফতার হওয়ার পর আদালতে দাঁড়িয়ে মদন মিত্র চিৎকার করেছিলেন, যদি প্রমাণ হয় আমি সারদা থেকে টাকা নিয়েছি তাহলে আমায় ফাঁসি দেওয়া হোক। এবার কাকার (মদন মিত্র, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিসি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য ভাই, সেই হিসেবেই অভিষেকের কাকা) পথে হেঁটেই অভিষেকও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন সারদা কেন কোনও চিটফান্ড কেলেঙ্কারির সঙ্গে এক আনাও জড়িত থাকলে তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হোক। একইসঙ্গে হুঙ্কার, সারদা বা অন্য কোনও চিটফান্ড সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে আমার পারলে প্রমাণ করুক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
আরও পড়ুন : আরও বড় মঞ্চে তৃণমূল যুবরাজের 'অভিষেক', ডাল কাটা হল 'মুকুল'-এর!
এখন বিষয়টি হল, সারদা কাণ্ডের তদন্তে নেমে একবারও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নেয়নি সিবিআই। সারদা কাণ্ডে তিনি জড়িত এমন অভিযোগও এখনও কোনও তরফে ওঠেনি। সিবিআই বা ইডি তাঁকে ডাকছে বলেও খবর নেই। তবে হঠাৎ আগ বাড়িয়ে এই মন্তব্য কেন করতে গেলেন অভিষেক? বিষয়টা কী তবে ঠাকুরঘরে কে আমি তো কলা খাইনি গোছের?
আসলে, একের পর এক তৃণমূলের বড় মাথাগুলির দিকে এগোচ্ছে সিবিআই। মদন মিত্র জেলে, মুকুল রায়কেও জেরা করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে হারে লোকজনকে জেলে পাঠানো হচ্ছে তাতে তিনিও প্রস্তুত হচ্ছেন যে কোনও দিন জেলে যাওয়ার জন্য। এমন অবস্থায় বেশ ঘাবড়ে গিয়েছেন অভিষেক। কারণ তাঁকে সিবিআই বা ইডি তলব না করলেও অভিষেকর কোম্পানি ও আয়-ব্যায়ের হিসাব তদন্তকারী সংস্থার নজরে রয়েছে।
পাঁচতারা হোটেলে অভিষেকের বিয়ে
বর্তমানে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, দিল্লিতে দুই পাঁচতারা হোটেলে অভিষেকের বিয়ের অনুষ্ঠান সিবিআই-এ নজরে রয়েছে। এই বিয়ে ও তাঁর কোম্পানির সঙ্গে সারদা বা অন্য চিটফান্ডের কোনও যোগ আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
অভিষেকের দাবি, নিজের পয়সাতেই বসন্তকুঞ্জের পাঁচতারা হোটেলে তিনি বিয়ে করেছেন। বিয়েতে সাড়ে ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল। তার পুরো রসিদ আছে। দিল্লিতে দুদিন যে দুটো হোটেলে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছিল, তার প্রথমটি শ্বশুরবাড়ির তরফে একটি হোটেলে হয়েছিল অন্যটি তিনি গ্যাঁটের টাকা খরচ করে করেছিলেন বলে দাবি। অভিষেক এও জানিয়েছেন, বিয়ের অনুষ্ঠানে ১০০ জনের মতো নিমন্ত্রিত ছিলেন। ৩৮ জন অতিথি ছিলেন যাদের জন্য ১০ হাজার টাকা করে ২০টি ঘর বুক করা হয়েছিল।
'গ্রেফতারের আগে সুদীপ্ত সেনকে গুণাক্ষরেও চিনতাম না'
গ্রেফতারের আগে সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া তো দূর, তাঁর নামও জানতেন না বলে দাবি করেছেন অভিষেক। একসইসঙ্গে বলেছেন, "আমার সঙ্গে যদি সারদা বা অন্যান্য চিটফান্ড কাণ্ডের সঙ্গে যদি আমার একচিলতে যোগও প্রমাণ হয় তাহলে আমাকে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হোক যাতে অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা চিটফাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগে পাঁচবার ভাবে।"
অভিষেকের কোম্পানিক আয় নিয়ে ধোঁয়াশা
অন্যদিকে রাজনৈতিক মহলের একাংশে অভিযোগ, অভিষেকের কোম্পানি লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের আয় নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। সেই বিষয়ে মন্তব্য রাখতে গিয়ে অভিষেক বলেন, মোট ৩৭ লক্ষ টাকা দিয়ে অংশীদারী ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ২০১৩ সালের মার্চে রেভেনিউ ২ কোটি ৯৭ লক্ষ ২৪ হাজার ৮৩২ টাকায় পৌছয়। যা অস্বাভাবিক নয় বলেই দাবি তৃণমূল সাংসদের।
অভিষেকের দাবি, কোম্পানি থেকে ৩৬ লক্ষ টাকা মাইনে তুলেছেন তিনি। এছাড়া শেয়ার রয়েছে। ২০১২-১৩ আর্থিক বর্ষে সব মিলিয়ে তাঁর আয় হয়েছে সাড়ে ৪৪ লক্ষ টাকার কিছু বেশি। তার পুরো হিসাব আয়কর রিটার্নে রয়েছে, নির্বাচন কমিশনের কাছেও জানানো হয়েছে।
কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, সিবিআই বা ইডি যখন তাঁর বিরুদ্ধে এখনও কোনও অভিযোগ আনেনি, তাকে ডাকেওনি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাহলে এখন সাততাড়াতাড়ি এত চ্যালেঞ্জ ট্যালেঞ্জ করছেন কেন। তাঁর সঙ্গে সারদার কোনও যোগ নেই তা প্রমাণ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন কেন। চওড়া ছাতির আড়ালে কী ঢাকতে চাইছেন অভিষেক। এতো পুরো ঠাকুর ঘরে কলার গল্প।