টোঙ্গাওয়ালা থেকে স্বঘোষিত গডম্যান, ধর্ষক আসারামের জীবন হার মানাবে সিনেমার চিত্রনাট্যকেও
প্রচুর অনুগামীর ভিড়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা থেকে আবার ধর্ষণ করে জেলের অন্দরে চলে যাওয়া আসারামের জীবন কাহিনি হার মানাবে বলিউড সিনেমার চিত্রনাট্যকেও।
ষোড়শী কিশোরীকে ধর্ষণে সাজাপ্রাপ্ত আসারাম বাপুর এই মামলা অনেকদিন ধরে চলল। এদিন রাজস্থানের জোধপুর জেলের অন্দরে শুনানিতে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে আসারামকে। দারিদ্রতার চরম সীমায় থাকা আসারামের জীবন পরে বদলে যায়। হয়ে যায় স্বঘোষিত গডম্যান। প্রচুর অনুগামীর ভিড়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা থেকে আবার ধর্ষণ করে জেলের অন্দরে চলে যাওয়া আসারামের জীবন কাহিনি হার মানাবে বলিউড সিনেমার চিত্রনাট্যকেও। কেমন ছিল অতীতের জীবন এবং আসারাম বাপু হয়ে ওঠা, জেনে নেওয়া যাক।
[আরও পড়ুন: ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত স্বঘোষিত ধর্মগুরু আসারাম বাপু]
পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা
দেশভাগের পরে আসুমল(আসারামের আসল নাম)-কে নিয়ে তার বাবা তৌমল হরপলানি পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের গুজরাতে আসেন। সেইসময়ে আসুমলের বয়স ছিল ৭ বছর। উৎখাত হয়ে আসা আসুমলের পরিবার নিদারুণ দারিদ্রের মধ্যে দিন গুজরান করতে থাকে।
রাজস্থানে বসবাস
আসুমলের বাবা গুজরাতের নানা শহর ঘুরে কাজ করতেন। এরপরে এক আত্মীয়র ডাকে ১৯৬৩ সালে রাজস্থানের আজমেঢ়ে গোটা পরিবার চলে আসে। সেই আত্মীয় ছিলেন দধি উস্তাদ। তিনিও সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আসেন ও আজমেঢ়ে থাকতে শুরু করেছিলেন।
টোঙ্গাওয়ালার কাজ
কমবয়সে আসুমল আজমেঢ় শরিফ দরগায় আসা ভক্তদের টোঙ্গায় চাপিয়ে দেওয়া-নেওয়া করত। রেল স্টেশন থেকে দরগা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া ও নিয়ে আসার ফেরিরই ছিল আসুমলের কাজ। বাকী টোঙ্গায় কাঠের বসার জায়গা থাকলেও আসুমলের টোঙ্গায় গদির আসন ছিল। ফলে সকলের মধ্যে সে নজর কেড়েছিল।
ধনী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর আসুমল
আসুমলের ধনী হওয়ার স্বপ্ন ছিল। কিছুবছর টোঙ্গা চালানোর পরে আসারাম কাউকে কিছু না জানিয়ে আজমেঢ় ছেড়ে চলে যায়। তারপরে আসারাম বাপু হওয়ার আগে পর্যন্ত তার খোঁজ কারও কাছে ছিল না। আজমেঢ়ের বয়স্ক টোঙ্গাওয়ালারা এখনও আসারামকে মনে রেখেছেন। সেই ছোকরা যে এত নাম করবে তা কেউ আন্দাজ করতে পারেননি।
ধ্যান শেখা মায়ের কাছে
মায়ের কাছে ধ্যান শেখে আসুমল। ১৫ বছর বয়সে ঘর ছেড়ে বারুচে এক আশ্রমে চলে যায়। তারপরে বেশ কয়েকটি আশ্রমে ঘুরে দিন কেটেছে আসুমলের। লীলাশাহ তার ধর্মগুরু ছিলেন। তিনিই আসুমলের নাম বদলে রাখেন আসারাম বাপু।
ধর্মগুরু হিসাবে কাজ
১৯৭১ সালে আসারাম স্বঘোষিত ধর্মগুরু হিসাবে সবরমতীর তীরে এক আশ্রম থেকে যাত্রা শুরু করে। ধনী ভক্তদের সাহায্যে আহমেদাবাদের কাছে মোতেরায় ১০ একর জমিতে আসারামের আশ্রম গড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে ভারতের নানা প্রান্তে আশ্রম তৈরি হয় আসারামের। এমনকী বিদেশেও আশ্রম গড়ে ওঠে। দেশ-বিদেশ মিলিয়ে আসারামের ২ কোটির বেশি ভক্তসংখ্যা বলে জানা গিয়েছে।
বিয়ে ও সন্তান
আসারামের স্ত্রী লক্ষ্মী দেবী, পুত্র নারায়ণ সাঁই, ও মেয়ে মিলে আশ্রমের কাজ ও ব্যবসা দেখাশোনা করে। তার ট্রাস্টের মাধ্যমে অনেকগুলো স্কুল চলে, প্রিন্টিং প্রেস ও আয়ুর্বেদিক ফার্মেসি চলে। আসারামের সবমিলিয়ে সম্পত্তি এখন ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
প্রথম বিতর্ক
২০০৮ সালে আসারামের আশ্রমের বাইরে দুই কিশোরের দেহ উদ্ধার হয়। তাদের অভিভাবক আসারামের ভক্ত ছিলেন। আশ্রমের ভিতরে তন্ত্র সাধনার অভিযোগ ওঠে আসারামের দিকে। ওই দুই কিশোরকে তন্ত্রসাধনার জন্য বলি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
যে অভিযোগে সাজা
২০১৩ সালে এক ষোড়শী কিশোরী জোধপুরের আশ্রমে আসারামের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনে। পকসো আইনে পুলিশ মামলা করে। এছাড়াও তপশিলি জাতি-উপজাতির উপরে অত্যাচার বন্ধের আইন মেনেও মামলা হয়। ইন্দোর থেকে ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর আসারামকে গ্রেফতার করে জোধপুরে আনা হয়। সেই মামলার রায়েই এদিন সাজা শোনাল আদালত।
আরও দুই মামলা ঝুলে
গুজরাতেও আসারামের নামে দুটি আলাদা ধর্ষণের মামলা ঝুলে রয়েছে। দুই বোন আলাদা করে আসারামের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ, আসারাম ও তার পুত্র নারায়ণ সাঁই তাদের ধর্ষণ করে বেআইনিভাবে আটকে রেখেছিল। সেই মামলায় এখনও রায় ঘোষণা হয়নি।