গ্রেগ চ্যাপেলের পরামর্শে শেষ হতে বসেছিল শ্রীলঙ্কা-জয়ের নায়ক দীপক চাহারের কেরিয়ার
কোচ হিসেবে ভারতীয় ক্রিকেটের কতটা সর্বনাশ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন গ্রেগ চ্যাপেল, সে কথা সকলেরই জানা। তবে দীপক চাহারের চওড়া ব্যাট যেভাবে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচে খাদের কিনারা থেকে ভারতকে তুলে এনে সিরিজ জেতাল, তারপরই ফের সংশয় তৈরি হয়েছে গুরু গ্রেগের ক্রিকেট-বোধ নিয়েই! ভারতের কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের আস্থার মর্যাদা দিয়েছেন দীপক চাহার। দ্রাবিড়ীয় বুদ্ধিতেই বাজিমাত হয়েছে কলম্বোয়। অথচ গ্রেগ চ্যাপেলের কথাকে সিরিয়াসলি নিয়ে দীপক চাহারকে পেতই না ভারতীয় ক্রিকেট।
|
চ্যাপেলের কু-বুদ্ধি
কয়েক দিন পরেই ২৯ বছর পূর্ণ করবেন দীপক চাহার। ২০১৮ সালে দেশের হয়ে একদিনের আন্তর্জাতিকে অভিষেক চাহার শ্রীলঙ্কা সিরিজের আগে দেশের হয়ে ওয়ান ডে খেলেছিলেন মাত্র তিনটি। এই চাহারেরই ক্রিকেট জীবনের বারোটা বাজতে চলেছিল রাজস্থান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের আকাদেমিতে গ্রেগ চ্যাপেলের পাল্লায় পড়ে। ভারতীয় দলের কোচের পদ থেকে চাকরি যাওয়ার পর চ্যাপেলকে রাজস্থান ক্রিকেট আকাদেমির ডিরেক্টর করেছিলেন প্রাক্তন আইপিএল চেয়ারম্যান ললিত মোদী। তখনই চাহারের উচ্চতা দেখে তাঁকে চ্যাপেল বলেছিলেন, তোমার দ্বারা ক্রিকেট হবে না। বরং ক্রিকেট ছেড়ে অন্য কোনও কাজ খুঁজে নাও।
প্রসাদের খোঁচা
বল হাতে দুই উইকেট নেওয়ার পর কার্যত হারা ম্যাচ ভারতকে জিতিয়েছেন সেই দীপক চাহার। চ্যাপেলের পরামর্শ শুনলে ভারতীয় ক্রিকেট পেতই না শ্রীলঙ্কা জয়ের নায়ককে। ভেঙ্কটেশ প্রসাদ তাই বলেছেন, যে চাহারকে আরসিএতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন চ্যাপেল সেই ক্রিকেটারই কার্যত একার কাঁধে দলকে জেতালেন। এতে একটা বিষয় স্পষ্ট, বিদেশি কোচেদের পরামর্শ খুব সিরিয়াসলি নেওয়ার দরকার নেই। নিশ্চয়ই কিছু ভালো ব্যতিক্রম রয়েছে, তবে আমাদের দেশে যখন প্রতিভার অভাব নেই সেখানে বিভিন্ন দল ও ফ্র্যাঞ্চাইজিদের উচিত ভারতীয় কোচ বা মেন্টরদের উপরই আস্থা রাখা। অলরাউন্ডার চাহার ব্যাটিংয়ের চেয়েও বোলিংয়ে বেশি দক্ষ। কিন্তু যেভাবে ব্যাট হাতে আগ্রা-জাত রাজস্থানের এই ক্রিকেটার দেশকে জিতিয়েছেন তাতে মুগ্ধ প্রসাদ।
|
উচ্ছ্বসিত মালতী
২০১২ সালে রাজস্থান রয়্যালসে থাকলেও আইপিএল খেলতে পারেননি। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টসে দুই মরশুম খেলা দীপক চাহার এখন চেন্নাই সুপার কিংসে রয়েছেন। ২০১৮ সালে তাঁকে নিয়েছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। চেন্নাই জার্সি গায়ে সেই বছরই ১২ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে চাহার চমকে দেন, সেই বছরই ভারতের হয়ে ওয়ান ডে ও টি ২০ অভিষেকও হয়। দীপক চাহারের বোন মালতী ধোনির বড় ভক্ত। দীপক ও রাহুল চাহার শ্রীলঙ্কা সফরের দলে রয়েছেন। দীপকের খুড়তুতো ভাই রাহুল খেলেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে। তাই মুম্বই ও চেন্নাইয়ের আইপিএল ম্যাচে মালতী রাহুলের সাফল্য কামনা করলেও চান ধোনির সিএসকে-ই জিতুক। দাদা দীপক চাহার যেভাবে দেশকে জিতিয়েছেন তাতে উচ্ছ্বসিত মালতী একের পর এক টুইট করেছেন। দাদার জন্য যে তিনি গর্বিত এবং বাবা সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন সে কথা জানিয়েছেন চাহারের বোন মালতী।
|
চাহারের কেরিয়ার
গ্রেগ চ্যাপেলের ধারণাকে হেলায় উড়িয়ে ২০১১-১২ মরশুমে রাজস্থানের হয়ে অভিষেকের প্রথম মরশুমেই দুরন্ত পারফরম্যান্স করেন চাহার। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ১০ রানে ৮ উইকেট নিয়ে চমক দেন। সেই মরশুমে তিনি পান ৪০ উইকেট। চোট বা অসুস্থতা তাঁর কেরিয়ারকে ব্যাহত করেছে, তবে অদম্য মনোভাবে চিড় ধরাতে পারেনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪৫ ম্যাচে তিনি রান করেছেন ৯৬৫, সর্বাধিক ৫৭, উইকেট রয়েছে ১২৬টি। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ৪৮টি ম্যাচে রান ৪৫৫, সর্বোচ্চ কলম্বোর অপরাজিত থেকে ম্যাচ জেতানো ৬৯। টি ২০ খেলেছেন ১০৩টি, ২৬৫ রান করেছেন, সর্বাধিক অপরাজিত ৫৫, উইকেট রয়েছে ১২০টি। আইপিএলে ৫৫টি ম্যাচে রান করেছেন ৭৮, সর্বাধিক ২০১৮ সালে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে ৩৯টি। আইপিএলে ৫৩টি উইকেট নিয়েছেন। এ বছরের আইপিএলে ৭ ম্যাচে তাঁর উইকেটসংখ্যা ৮। ২০১৮ সালে ১০টি, ২০১৯ সালে ২২টি এবং ২০২০ সালের আইপিএলে দীপক চাহার ১২টি উইকেট নেন। ২০১৬-র আইপিএলে দুটি ম্যাচে কোনও উইকেট না পেলেও ২০১৭ সালে আরপিএসের হয়ে ১টি উইকেট পেয়েছিলেন।
দেশের হয়ে
ভারতীয় এ দলে দীপক চাহারের দক্ষতা বুঝে তাঁকে ভুবনেশ্বর কুমারের আগে ব্যাট করতে পাঠান কোচ রাহুল দ্রাবিড়। মাঝে রাহুল চাহারের মাধ্যমে দিয়েছিলেন মূল্যবান পরামর্শ, ড্রেসিংরুম থেকে ডাগআউটে এসে রাহুলকে পাখি পড়ার মতো করে রণকৌশল বুঝিয়ে দেন। অথচ রবি শাস্ত্রীও চাহারকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেননি। ২০১৮ সালে দেশের হয়ে অভিষেক হওয়া চাহার আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একটি ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দুটি ম্যাচে সুযোগ পান। তিন ম্যাচে দুটি উইকেট পেয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কা সফরে দুটি ম্যাচেই ২টি করে উইকেট পেয়েছেন এবং আগের ম্যাচেই দেশকে জিতিয়েছেন। ভারতের হয়ে চাহার এখনও অবধি ১৩টি টি ২০ আন্তর্জাতিক খেলেছেন, ১৮টি উইকেট রয়েছে। ২০১৯ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৭ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট তুলে হয়েছিলেন ম্যাচের সেরাও।