বাংলায় বিজেপির এমন শোচনীয় পরাজয় কেন? 'লোকনীতি-সিএসডিএসে'র সমীক্ষায় উঠে আসল চাঞ্চল্যকর তথ্য
অপ্রত্যাশিত জয় তৃণমূলের। ২০০ বেশি আসন পেয়ে পাঁচ বছরের জন্যে ক্ষমতার মসনদে ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১০০ আসনও পাড় করতে পারেনি বিজেপি। যেখানে এবার বিজেপির স্লোগান ছিল ১৯ এ হাফ ২১ সাফ।
অপ্রত্যাশিত জয় তৃণমূলের। ২০০ বেশি আসন পেয়ে পাঁচ বছরের জন্যে ক্ষমতার মসনদে ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১০০ আসনও পাড় করতে পারেনি বিজেপি।
যেখানে এবার বিজেপির স্লোগান ছিল ১৯ এ হাফ ২১ সাফ।
কিন্তু বাস্তবে যে ছবি দেখা গেল তাতে কার্যত বাংলায় পায়ের মাটি হালকা হল বিজেপির। কাজে আসল না কোনও স্ট্র্যাটেজিই। কিন্তু কেন এই অবস্থা হল বঙ্গ বিজেপির?
যেখানে গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ বিধানসভা আসনেই বিপুল ভোটে এগিয়ে বিজেপি। সেখানে কেন এমন ফল?
এই বিষয়ে সমীক্ষা করে ভোটবিন্যাস নিয়ে গবেষণা করা সংস্থা লোকনীতি-সিএসডিএস। আর তাঁদের সমীক্ষাতে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সমীক্ষা বলছে সামগ্রিকভাবে গরিব, নিম্নবর্গ এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোট এবার তৃণমূল তুলনায় বেশি পেয়েছে। একইসঙ্গে মুসলিম ভোটের সিংহভাগ তো বটেই, হিন্দু ভোটের প্রাপ্তিও বেড়েছে।
শুধু তাই নয়, সংস্থার করা সমীক্ষা বলছে এবারের নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের মাপকাঠিতে ভোট হয়নি। আর এখানেই ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির। সমীক্ষা অনুযায়ী বিজেপির সবথেকে বড় ধাক্কা হল এককভাবে হিন্দু ভোট পাওয়ার আশা পূরণ হয়নি। কারণ, হিন্দু ও মুসলিম নির্বিশেষে তৃণমূল ভোট পেয়েছে।
বর্তমান সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বলছে তৃণমূল ২০১৯ সালে পাওয়া ৩২ শতাংশ হিন্দু ভোট পেয়েছিল। কিন্তু এবার হিন্দু ভোট ৩৯ শতাংশ পেয়েছে শাসকদল। কিন্তু তৃণমূলের জয়ের আসল কারিগর গরিব, নিম্নবর্গ ও মহিলারা। এই অংশটি ঢেলে বাংলার মেয়েকেই ভোট দিয়েছে।
অনেকে বলছে, মহিলাদের মধ্যে হাথরাস সহ একাধিক ধর্ষণের ঘটনা ভয়ঙ্কর ভাবে প্রভাব ফেলেছে। আর সেই কারনেই এই সম্প্রদায়ের মহিলারা মমতাতেই আস্থা রেখেছে। ওই সমীক্ষায় বলা হচ্ছে, ২০১৯ সালের তুলনায় গরিব হিন্দু ভোট বিজেপি এবার খুইয়েছে।
আর্থিকভাবে দরিদ্রতম অংশের ভোট তৃণমূল পেয়েছে ৫০ শতাংশ। বিজেপি ৩৬ শতাংশ। নিম্নবর্গের ভোট তৃণমূল পেয়েছে ৫১ শতাংশ। বিজেপি ৩৫ শতাংশ। মধ্যবিত্ত সমর্থন তৃণমূল পেয়েছে ৪৭ শতাংশ। বিজেপি পেয়েছে ৪০ শতাংশ।
বাংলায় মাত্র ৭৭টি আসন পেয়েছে বিজেপি। আর তাতেই সন্তুষ্ট তাঁরা। যদিও এই ফলাফলের পরেই বিজেপির অন্দরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সমীক্ষা বলছে যে ভোট পেয়েছে বিজেপি তাঁদের বেশিরভাগ অংশই মধ্যবিত্ত এবং ধনী সম্প্রদায়ের মানুষ।
এই দুই শ্রেণির ভোট বিজেপি কিছুটা বাড়িয়েছে। তবে মধ্যবিত্ত ভোট এখনও সিংহভাগ তৃণমূলের দখলে। ধনী ও উচ্চবিত্তদের ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে বিজেপি। আর তৃণমূল পেয়েছে ৪০ শতাংশ। ২০১৯ সালে কিন্তু ধনীদের ৫১ শতাংশ ভোট তৃণমূল পেয়েছিল বলে লোকনীতি সিএসডিএস সমীক্ষা জানাচ্ছে।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে উচ্চবর্ণের ভোটের চরিত্র বিশ্লেষণ করে সিএসডিএস, লোকনীতি দেখেছে, উচ্চবর্ণের মহিলারা আবার পুরুষদের তুলনায় তৃণমূলকে বেশি ভোট দিয়েছে। আদিবাসী মহিলারাও তৃণমূলকে বেশি ভোট দিয়েছে। কিন্তু বিজেপির কাছে উদ্বেগজনক হল, তৃণমূলের হিন্দু ও মুসলিম দুই ভোটব্যাঙ্কই ক্রমবর্ধমান।
মুসলিম ভোটের সিংহভাগ তো তৃণমূল পেয়েছেই। পাশাপাশি বেড়েছে হিন্দু ভোটও। স্থিতাবস্থা, উন্নয়ন এবং সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের যোগফল হল এই ভোটের গতিপ্রকৃতি।
সমীক্ষা অনুযায়ী প্রকাশিত খবর জানাচ্ছে ২১ এর ভোটে গরিব মহিলাদের ভোট তৃণমূল পেয়েছে ৫২ শতাংশ। নিম্নবর্গের মহিলাদের ভোট পেয়েছে ৫৫ শতাংশ। মধ্যবিত্ত পরিবারের মা ও বোনেদের ভোট পেয়েছে ৪৫ শতাংশ।
অন্যদিকে, অমিত শাহের তরফ থেকে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে কেন বিজেপির প্রথমসারির যেমন বাবুল সুপ্রিয়, লকেট চট্টোপাধ্যায়, স্বপন দাশগুপ্ত, অনির্বান গাঙ্গুলির মতো প্রার্থীরা হেরে গেলেন। এব্যাপারে বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
সূত্রের আরও খবর, শুরুতেই হারের কারণ হিসেবে বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা উঠে এসেছে। পাশাপাশি বিজেপির রাজ্য তথা জেলার নেতাদের আত্মতুষ্টির কথাও উঠে এসেছে, নিচুতলার কর্মীদের সঙ্গে কথোপকথনে। এছাড়াও নিজেদের শক্তির থেকেও কেন্দ্রের ওপরেই বেশি নির্ভর করেছিলেন বিজেপির রাজ্য নেতারা।
জানা গিয়েছে, অনেক জায়গায় বুথস্তরের সংগঠন এতটাই খারাপ ছিল যে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার স্লিপটাও বিলি করতে পারেনি বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্ব।শুধু নিচুর তলার কর্মীদের থেকেই নয়, আলাদা করে বিধানসভার দায়িত্বে থাকা নেতাদের থেকেও কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে।
স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি বাইরের রাজ্যের নেতাদেরও বিধানসভা ভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কেন বাংলায় এমন ফল হল? তাদের কাছ থেকেও রিপোর্ট নেবেন অমিত শাহ। এমনটাই সূত্রে জানা যাচ্ছে।