হিন্দমোটরের ঐতিহ্যবাহী কারখানায় তালা, কাজ হারালেন ২৩০০ কর্মী
হিন্দমোটরের এই কারখানার সঙ্গে দেশের শিল্পায়নের ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। এটি ভারতের প্রথম মোটরগাড়ি তৈরির কারখানা। যখন আর্থিক উদারীকরণ হয়নি, তখন মোটরগাড়ি বলতে বোঝাত অ্যাম্বাসাডর। সেই অর্থে হিন্দমোটর ছিল দেশের আত্মসম্মানের প্রতীক।
কর্তৃপক্ষের দাবি, গত ১৫ বছর ধরে একটানা লোকসানে চলছে হিন্দুস্তান মোটরস। ফলে কর্মীদের বেতন দেওয়াই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যান্য খাত থেকে টাকা লগ্নি করেও অবস্থা সামাল দেওয়া যায়নি।আর শ্রমিকদের দাবি, কারখানার বিপুল জমি প্রোমোটারদের বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানান, ২০০৮ সালে হিন্দুস্তান মোটরস তাদের ৩১৪ একর জমি ২৮৪ কোটি টাকায় জনৈক প্রোমোটারকে বিক্রি করে দেয়।
এদিকে, হিন্দমোটরের কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার দায় সিপিএম তথা সিটুর ওপরই চাপিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন। সংগঠনের তরফে সাধারণ সম্পাদক উত্তম চক্রবর্তী বলেন, "এটা শুধু কারখানা নয়, ভারতের ঐতিহ্য। ট্রেকার, কন্টেসা, বেডফোর্ড, অ্যাম্বাসাডর এখানেই তৈরি হত। মাসে ১২০০-১৩০০ গাড়ি উৎপাদন হত। কিন্তু সিটুর দাদাগিরির জেরে গত শতাব্দীর নব্বই দশক থেকে কারখানার বেহাল দশা শুরু হয়।" এ ব্যাপারে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, "ঘটনাটা শুনেছি। ওদের সঙ্কট অনেক দিনের। মূলধনের অভাবে ভুগছিল। শ্রমিকদের মাইনে দিতে পারছিল না। সোমবার অথবা মঙ্গলবার শ্রীরামপুরের ডেপুটি লেবার কমিশনার কারখানা খোলার ব্যাপারে শ্রমিক আর মালিকপক্ষকে নিয়ে বৈঠক করবেন। আশা করি, সেখানে কিছু রফাসূত্র বেরোবে।"
এদিকে, হিন্দুস্তান মোটরসে সিটু ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুনীল সরকার বলেছেন, "আমাদের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে নিজেদের আড়াল করতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। শ্রমিক স্বার্থে আমরা গত ৮ মে কারখানার অচলাবস্থা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। ওইদিন তৃণমূল কংগ্রেসের লোকজন গুন্ডাদের নিয়ে আমাদের পথ আটকায়, হেনস্থা করে। বাধা পেয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হই। সিটু জেলা সভাপতি শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায় শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুকে ফোন করে ঘটনার কথা জানান। কিন্তু উনি কোনও ব্যবস্থা নেননি। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। গোটা ঘটনার পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে।"
কিছুদিন আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে জেসপ। এ বার হিন্দুস্তান মোটরসও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিল্পমহলে পশ্চিমবঙ্গের ভাবমূর্তি ধাক্কা খেল, সন্দেহ নেই।