নবান্নে 'আত্মসমর্পণ' কেন, ক্ষোভ বামফ্রন্টেই, রাগে দল ছাড়লেন সিপিএম নেতা
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁরা গিয়েছিলেন এটা বলতে যে, রাজ্যে বাম কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। সেই আর্জিতে সাড়া তো তিনি দিয়েইছেন, পাশাপাশি বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়তে বামেদের সহায়তা চান। গদগদ বাম নেতারা সেই আশ্বাসও দেন। সদয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিএম নেতা রবীন দেবকে বলেন, রাজারহাটে জ্যোতি বসুর নামে গবেষণাকেন্দ্র গড়তে জমি দেবে রাজ্য সরকার। শাসক দলের কাছে এভাবে 'আত্মসমর্পণ' করায় বিস্তর প্রশ্ন ওঠে বামফ্রন্টের অন্দরেই। গতকাল সন্ধেয় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সাংবাদিকরা বিমানবাবুকে এ নিয়ে প্রশ্ন করলে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে তিনি বলেন, "১৯৭২ সালে আপনারা অনেকে জন্মাননি। ইতিহাসটা জানলে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলতেন না। ১৯৭২ সালে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন জ্যোতি বসুও তাঁকে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন। কারণ সেই সময়ও বাম কর্মীদের ওপর নানা জায়গায় হামলা হচ্ছিল।"
কিন্তু বিমানবাবুর এই তত্ত্ব অসাড় বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। প্রথমত, জ্যোতি বসু কিন্তু বিমানবাবুদের মতো ফিশফ্রাই, চা খেয়ে কার্যত আত্মসমর্পণ করে আসেননি। খুব দৃঢ়ভাবে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়কে নিজের দাবির কথা বলেছিলেন। দ্বিতীয়ত, বিমানবাবুকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধমকির সুরে বলেছেন, "কেন আপনার দল ছেড়ে লোকে বিজেপি-তে যাচ্ছে? আগে ঘর সামলান।" এ কথা জ্যোতি বসুকে শুনতে হয়নি। বলা ভালো, তাঁর এমনই ব্যক্তিত্ব ছিল যে, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় পর্যন্ত সমীহ করে চলতেন। তৃতীয়ত, বিজেপি-কে ঠেকাতে রাজ্য সরকার তথা তৃণমূল কংগ্রেসকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বিমান বসু। অর্থাৎ একটি রাজনীতিক ইস্যুতে চরম বিরোধী দু'টি শক্তি আঁতাঁত তৈরি করল। জ্যোতি বসু কিন্তু কোনওদিন তৎকালীন শাসক দল কংগ্রেসকে এ ভাবে মাটি শক্ত করতে সাহায্য করেননি। কারণ তিনি জানতেন, শাসক দলকে ঘর গোছাতে সহায়তা করার অর্থই হল ভবিষ্যতে নিজেদের অস্তিত্ব বিপন্ন করা।
রাগে-হতাশায় দলে দলে সিপিএম কর্মী যোগ দিতে তৈরি বিজেপি-তে
ঠিক এই কারণে ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক উদয়ন গুহ ফেসবুকে লিখেছেন, "এর নাম নীতি-আদর্শ? এরা কাদের উত্তরসূরী? এ তো রাজনীতিক দেউলিয়াপনা।" অন্যদিকে, উক্ত বৈঠকের কারণে রাগে সিপিএম ছেড়ে দিয়েছেন কৃষ্ণনগর শহর লোকাল কমিটির সদস্য অরূপ দাস। তিনি ডিওয়াইএফআইয়ের জোনাল কমিটির সদস্যও ছিলেন। বলেছেন, "যে দল এভাবে আত্মসমর্পণ করে, তাতে থাকাটা সম্মান খোয়ানোর শামিল।"
সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত দুই নেতা আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা এবং প্রসেনজিৎ বসু খোলা চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, "পশ্চিমবঙ্গের স্বৈরাচারী ও জনবিরোধী সরকারের সামনে রাজ্যের বিরোধী দল নির্লজ্জ আত্মসমর্পণ করল।" খুব খারাপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে বর্ধমান, হুগলী, বাঁকুড়া, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা এবং মেদিনীপুরে। হুগলী জেলার আরামবাগ, ধনেখালির সিপিএম কর্মীরা বলছেন, "আমরা মার খাচ্ছি আর উনি খাচ্ছেন ফিশফ্রাই। এর পর আর আমাদের পিঠ বাঁচবে?" জান-মান বাঁচাতে এঁদের অনেকেই বিজেপি-তে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। সিপিএমের হুগলী জেলা কমিটির এক বয়স্ক নেতা বললেন, "সিপিএমের কফিনে শেষ পেরেকটা পুঁতে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সাহায্য করলেন বিমান বসু। আজ যদি জ্যোতিবাবু থাকতেন, তা হলে হয়তো এমন দিন দেখতে হত না।" সিপিএমের পাশাপাশি সিপিআই, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লকেও এমন ক্ষোভ ধূমায়িত হয়েছে।