ইতিহাসের নিরিখে রাজ্যে দ্বিতীয়! রথযাত্রার প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে
মাঝখানে কয়েকটা দিন। তারপরেই রথযাত্রা। সারা দেশে পুরীর রথযাত্রা যেমন বিখ্যাত ঠিক তেমনই রাজ্যে বিখ্যাত মাহেশের রথযাত্রা। মাহেশের পরেই রয়েছে মহিষাদলের রথের খ্যাতি।
মাঝখানে কয়েকটা দিন। তারপরেই রথযাত্রা। সারা দেশে পুরীর রথযাত্রা যেমন বিখ্যাত ঠিক তেমনই রাজ্যে বিখ্যাত মাহেশের রথযাত্রা। মাহেশের পরেই রয়েছে মহিষাদলের রথের খ্যাতি। এই রথের পুরোটাই কাঠের তৈরি। আর প্রস্তুতির দিক থেকে এবারের রথের প্রস্তুতিও প্রায় সম্পূর্ণ হওয়ার পথে।
পুরীর রথ দেখেই মহিষাদলের প্রজাকুল এবং স্থানীয় মানুষজনদের জন্যই আজ থেকে প্রায় ২৪০ বছর আগে মহিষাদলে রথ চালু করেছিলেন রাজপরিবারের তৎকালীন রানি জানকীদেবী।
এক সময় কাঠের তৈরি ১০০ ফুট উঁচু এই রথ পৃথিবীর সবথেকে বেশি উচ্চতা সম্পন্ন ছিল। দ্বিতীয় ছিল বাংলাদেশের ৬২ ফুটের রথ। কালে কালে মহিষাদলের রথের উচ্চতা অনেকটাই কমেছে। উচ্চতা হিসেবে বাংলাদেশের ওই রথের পরেই এই রথটির অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। যদিও একটা সময় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বাংলাদেশের রথটি পুরো ভেঙে গুড়িয়ে গিয়েছিল। পরে নতুন করেই গড়ে তোলা হয়। সেই হিসেবে মহিষাদলের রথটিকে বেশ কয়েকবার পরবর্তীকালে সংস্কার করা হলেও, ২৪০ বছর আগে তৈরি মহিষাদলের এই রথটির কিন্তু আদি রূপই এখনও রয়ে গিয়েছে।
এক সময় মহিষাদলের এই রথের আদলে মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে সেখানকার মানুষের জন্য মহিষাদলের রাজারা তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই রথ ছিল অবিকল মহিষাদলের রথের মতোই। এখানকার রাজাদের গুরুভাই জিয়াগঞ্জে থাকতেন। মূলত তাঁর জন্যই এই রথটি গড়েছিলেন মহিষাদলের তৎকালীন রাজা সতীপ্রসাদ গর্গ।
মহিষাদলের রথের বিশেষত্ব হল, এখানে জগন্নাথ দেব রথে থাকেন না। থাকেন রাজবাড়ির কূলদেবতা মদনগোপাল জিউ।
প্রতিবছরেই বহু পর্যটক যান মহিষাদলের রথ দেখতে। তবে তাঁদের আর্জি রাজবাড়ি এবং তার ইতিহাসের সঙ্গে প্রাচীন রথের কথাও প্রচার করা হোক।
এদিকে, মহিষাদলের প্রাচীন এই রথযাত্রার প্রচার তেমনভাবে হয়না বলে আক্ষেপ করেছেন মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির কর্মকর্তারা। এক সময় রাজারাই এই রথ চালনা করলেও, বর্তমানে রাজাদের আর্থিক বৈভব কমে যাওয়ায় রথ পরিচালিনায় হাত লাগান স্থানীয় পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি। তাতে সহযোগিতা করেন এলাকার বেশকিছু সেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সাধারণ মানুষ। রাজাদের রথ এখন তাই সাধারণই।
মহিষাদলের রথের মেলা বাংলার সমাজ জীবনের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। সেখানে মেলাও বসে। টানা একমাস ধরে চলে সেই মেলা।