ইভ টিজিং এড়াতে মহিলাদের জন্য বিধাননগর পুলিশের উদ্ভট উপদেশাবলী!
না এ আমার কথা নয়, একথা বলছে খোদ পুলিশ। সুরক্ষিত ও নিরাপদ থাকতে মহিলাদের এমনই এক ডজন পরামর্শ দিয়েছে বিধাননগর পুলিশ। রাজ্যে ইভটিজিং ধর্ষণের সংখ্যা প্রবল হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে একদল যেমন চেঁচামিচি শুরু করেছে তাতে তো আর হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না পুলিশ। তাই ওয়েবসাইটে এই নির্দেশিকা লাগিয়ে দিয়েছে বিধাননগর কমিশনারেট।
অযৌক্তিক বললেও যাকে কম বলা হয় তেমন এক তালিকায় পুলিশের দেওয়া শিরোনাম হল "ইভ টিজিং প্রতিরোধে কিছু টিপস"। সেই করণীয়-না করণীয়র তালিকায় যা যা রয়েছে তা শুনলে আপনার চোখ কপালে উঠবে।
একঝলকে তালিকাটি
- ১. ভদ্র পোশাক পরুন
- আপনার ফোনে জরুরিকালীন স্পিড ডায়েল নম্বর রাখুন।
- আত্মরক্ষা।
- আপনারে চারিপাশের লোকজন সম্পর্কে চোখ খোলা রাখুন।
- রাতে দেরি করে ঘোরা ফেরা এড়িয়ে চলুন।
- পেপার স্প্রে সঙ্গে রাখুন।
- ভদ্র ব্যবহার করুন।
- দলে চলাফেরা করুন।
- ভিড় বাসে ও ট্রেনে যাতায়াত করবেন না।\
- নির্জন জায়গায় যাওয়া এড়িয়ে চলুন।
- পর্যাপ্ত আলো আছে যে রাস্তায় সেখান দিয়ে চলাফেরা করুন।
- 'স্ট্রিটস স্মার্ট' অর্থাৎ কইয়ে বলিয়ে হোন।
এই তালিকার প্রথমেই রয়েছে পোশাক। অর্থাৎ ভদ্র পোশাক পরুন। ভদ্র পোশাক? বিষয়টি অত্যন্ত আপেক্ষিক। পুলিশের চোখে ভদ্র শাড়ি আমার চোখে অশালীন। শাড়িতে মেয়েদের পেট-কোমর বেরিয়ে থাকে। পিঠ দেখা যায়। কে ঠিক করবে ভদ্র পোশাক কোনটি?একটি মেয়ে স্বাধীন রাজ্যে থাকতে গেলে কী ধরণের পোশাক পড়বে, তার আয়তন কতটা হবে দৈঘ্য কতটা হবে তাও কী ঠিক করবে রাজ্যের পুলিশ? একটি ৪ বছরের শিশুকে যখন ধর্ষণ করা হয় তখন কী তার পোশাকে উত্যক্ত হয়ে কোনও 'পুরুষ' ধর্ষণ করে?
তারপর ধরুন রাতে দেরি করে ঘোরাফেরা এড়িয়ে চলুন। আজকাল বহু মহিলাই মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করেন। কাজের চাপে বাড়ি ফেরার সময়ের ঠিক থাকে না। তবে কী সেই মহিলার উচিত চাকরি ছেড়ে দেওয়া? মহিলাদের উচিত সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ঢুকে পরা। পাছে কেউ ইভ টিজিংয়ের শিকার হতে হয়। পরে রইল নাইট লাইফ অর্থাৎ পাব-ক্লাব। ও আচ্ছা ভুলে গিয়েছিলাম সে তো খালি পুরুষ মানুষের জন্য। পার্কস্ট্রিট গণধর্ষণ কাণ্ডের সময় তো এই মহিলা মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর মহিলা সাংসদ (কাকলি ঘোষদস্তিদার) নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করেই দিয়েছেন।
সবচেয়ে হাস্যকর যে বিষয়টি এই নির্দেশিকায় দেওয়া হয়েছে তা হল ভিড় বাসে ট্রেনে যাতায়াত করবেন না। তবে কী ফাঁকা বাসে ইভ টিজিং বা ধর্ষণের কোনও সম্ভাবনা নেই? ফাঁকা বাসে মহিলারা কতটা নিরাপদ? তালিকা প্রকাশের আগে একবারও ভেবে দেখেছেন পুলিশ কর্তারা। তাও নয় ছেড়েই দিলাম। কিন্তু কলকাতার রাস্তা থেকে ক্রমেই বাস কমছে। অফিস টাইমে কলকাতার রাস্তায় গুঁতোগুঁতি করে বাসে ওঠা ছাড়া আর কোনও উপায় আছে? ভিড় বাসে ট্রেনে না উঠলে কী গন্তব্যে পৌছতে আমরা তহে পুলিশ ভ্যানে ভরসা রাখব?
সল্টলেক কলকাতার অভিজাত এলাকা। কিন্তু দেশের প্রত্যন্ত গ্রামের খাপ পঞ্চায়েত বা শালিশি সভার নির্দেশের থেকেই বা কম কোন অংশে বিধাননগর কমিশনারেটের এই মহিলাদের নিরাপদে থাকার পরামর্শ তালিকা? সেই তো একই কথা, যে দেশে মেয়েদের সমান অধিকারের দাবি করা হয়, সেখানেই মহিলার পোশাক কী হবে কখন বাড়ি থেকে বেরবেন কীভাবে কথা বলবেন তা নির্দেশিকা জারি করে মেপে দেওয়া হচ্ছে।
যদিও এই নির্দেশিকায় কোনও ভুল দেখছেন না বিধাননগরে সম্প্রতি ডেপুটি কমিশনারের পদে নিযুক্ত কঙ্করপ্রসাদ বারুই। তাঁর কথায় আপনি যেখানে রয়েছেন সেখানকার নিয়ম অনুযায়ী একজনের ব্য়বহার, জীবনযাপন হওয়া উচিত। তেমনই কয়েকটি বিষয় ওই তালিকায় দেওয়া হয়েছে। যা নির্দেশিকা নয়, শুধুমাত্র সতর্কতা অবলম্বনের পন্থা।
কঙ্করবাবু আপনাকে একটাই প্রশ্ন, সল্টলেকে যে দিনে রাতে, চুরি ছিনতাই বেড়ে গিয়েছে তার জন্য কাদের এবং কীভাবে সাবধান হওয়া উচিত তার তালিকাটা কবে পাওয়া যাবে?