জেসপ, হিন্দমোটরের পর ঝাঁপ ফেলল শালিমার পেন্টস, কর্মহীন ২৫০ জন

পশ্চিমবঙ্গে শিল্পের ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল নাম হল শালিমার পেন্টস। ১৯০২ সালে হাওড়ায় এর গোড়াপত্তন করেছিল ব্রিটিশরা। তখন নাম ছিল শালিমার পেন্টস কালার অ্যান্ড ভার্নিশ কোম্পানি। ১৯৬৩ সালে নাম বদলে হয় শালিমার পেন্টস। হাওড়া ব্রিজ, বিদ্যাসাগর সেতু, যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন কিংবা হাওড়া স্টেশন, এক সময় এইগুলি রাঙিয়ে তুলেছিল হাওড়ার শালিমার কারখানায় তৈরি রং। বয়স্ক বাঙালিদের অনেকের কাছে আজও শালিমার পেন্টস হল নস্টালজিয়া। শেষ পর্যন্ত বন্ধই হয়ে গেল কারখানাটি। যদিও শালিমার পেন্টসের বাকি দু'টি কারখানা, যথাক্রমে মহারাষ্ট্রের নাসিক ও উত্তরপ্রদেশের সিকান্দ্রা রমরম করে চলছে। চলতি মাসেই চেন্নাইয়ে আরও একটি কারখানা খুলছে তারা।
কেন বন্ধ হল শালিমার পেন্টস? চলতি বছরের ১২ মার্চ বিধ্বংসী আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় কারখানার একটি বড় অংশ। তার পর থেকেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল উৎপাদন। শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের তরফে প্রবীণ আস্থানা বলেন, কারখানা মেরামতি করতে যে পরিমাণ অর্থ দরকার, তা নেই। এক্ষুণি এই খাতে ১২ কোটি টাকা দরকার ছিল। তাই বন্ধ করে দিচ্ছে হচ্ছে কারখানা। কবে খুলবে, তা বলতে পারেননি তিনি।
হাওড়া ব্রিজ, বিদ্যাসাগর সেতু, যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন একদা রাঙিয়েছিল শালিমার
শ্রমিকরা বলছেন, চক্রান্ত করে কারখানা বন্ধ করা হল। এআইটিইউসি নেতা পরিতোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, "১২ মার্চ ইচ্ছা করে কারখানায় আগুন লাগানো হয়। কারণ যে দিন আগুন লাগে, সেই দিন কারখানার ৪৫ হাজার লিটারের ট্যাঙ্কে এক ফোঁটা জলও ছিল না।" তৃণমূল কংগ্রেস নেতা দেবাশিস সেন বলেন, "রাজ্য সরকারকে হেয় করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারখানা মেরামতির টাকা নেই, এটা অজুহাত।"
ওয়াকিবহাল মহল বলছে, সমস্যাটা অন্য জায়গায়। সারা দেশে রঙের বাজার হল ৩০ হাজার কোটি টাকার। এর ৩২ শতাংশই পশ্চিম ভারতে। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে হল যথাক্রমে ২৬ ও ২৮ শতাংশ। সেখানে পূর্ব ভারতে মাত্র ১৪ শতাংশ। কেন এই অবস্থা? এক কথায়, শিল্প নেই। কারখানা বা যন্ত্রপাতি রাঙাতে যে রং লাগে, তার চাহিদা নেই। আবার, শিল্প থাকলে কর্মসংস্থান হবে। কর্মসংস্থান হলে রিয়েল এস্টেট মানে আবাসন শিল্প গড়ে উঠবে। তাতেও রং লাগে। পশ্চিমবঙ্গে কর্মসংস্থানের হার তথৈবচ হওয়ায় আবাসন শিল্পেও রঙের চাহিদা কম। এই অবস্থায় শালিমার পেন্টস মনে করছে, নাসিক বা সিকান্দ্রার কারখানা থেকে রং এনে পশ্চিমবঙ্গে বিক্রি করাটা লাভজনক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিল্পপতির রসিক মন্তব্য, "পশ্চিমবঙ্গে শিল্পের ছবিটা বিবর্ণ। তাই রং কারখানা বন্ধ হওয়াটা একটা প্রতীকী ব্যাপার।"