সততায় বাধা নয় দারিদ্র, এক লক্ষ টাকা ফেরত দিয়ে প্রমাণ করলেন নদিয়ার ছাত্রী
‘হে দারিদ্র তুমি মোরে করেছো মহান...।’ কবির সেই ‘বাণী’ই ফের সত্য প্রমাণ করলেন নদিয়ার ফুলিয়ার এক ছাত্রী।
নদিয়া, ২০ মার্চ : 'হে দারিদ্র তুমি মোরে করেছো মহান...।' কবির সেই 'বাণী'ই ফের সত্য প্রমাণ করলেন নদিয়ার ফুলিয়ার এক ছাত্রী। ফের আর একবার এই ছাত্রী বুঝিয়ে দিলেন সততার পথে বাধা হতে পারে না দারিদ্র। দোকানের সামনে থেকে কু়ড়িয়ে পাওয়া এক লক্ষ টাকা তিনি ফিরিয়ে দিলেন বস্ত্র ব্যবসায়ীকে। তাঁর এই সততায় গর্বিত পরিবার, গর্বিত এলাকাবাসী।
নদিয়ার শান্তিপুরের ফুলিয়ার বাসিন্দা কুহেলি বসাক। শান্তিপুর কলেজের বায়ো সায়েন্সের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। অভাবের সংসার। বাবা টোটো চালক। সেই কারণেই কন্যাশ্রীর টাকা পেয়ে পাড়াতেই একটা মোবাইল রিচার্জ ও জেরক্সের দোকান করেছিলেন তিনি। এই দোকান চালিয়েই পড়াশোনার খরচ জোগাড় করেন কুহেলি।
এদিন নিয়মমতো দোকানে এসেছিলেন। হঠাৎ লক্ষ্য করেন দোকানের বাইরে পড়ে রয়েছে একটি লাল ব্যাগ। তাতে এক লক্ষ টাকা রয়েছে, রয়েছে ওষুধের প্রেসক্রিপশনও। নাম লেখা উজ্জ্বল হালদার। ইচ্ছা করলে ওই টাকা কুহেলি নিয়ে নিতে পারতেন।
অভাবের সংসারে তা অনেকটাই সাশ্রয় হত। কিন্তু তা না করেওই টাকা ফেরৎ দিতে কুহেলি খোঁজ শুরু করলেন উজ্জ্বল হালদারের। তাঁর কথায়, ওই টাকায় আমার কোনও অধিকার নেই। কেন তা গ্রহণ করব। যাঁর টাকা তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়াই উচিত বলে মনে হয়েছে। তাই ফিরিয়ে দিয়েছিল।
স্থানীয় বস্ত্র ব্যবসায়ী উজ্জ্বলবাবুও ছাত্রীটির এই সততায় আপ্লুত। উজ্জ্বলবাবুর কথায়, আজও যে সততা বলে কিছু রয়েছে, তার দৃষ্টান্ত রাখল ওই ছাত্রী। এদিন মোটবাইকে থেকে ব্যাগটি পড়ে গিয়েছিল। পরে খবর পেয়ে একানে এসে টাকা-সহ ব্যাগ ফেরত পেলাম। উপযুক্ত প্রমাণ দিতেই তার হাতে ব্যাগ তুলে দেন কুহেলি। কুহেলির এই কীর্তিতে গর্বিত মা-বাবাও।
উজ্বলবাবু বলেন, বলেন ব্যাগটা কখন পড়ে গিয়েছে, তা বুঝতেই পারিনি। টাকাটা না পেলে খুব সমস্যায় পড়ে যেতাম।কুহেলিও বলেন, আমার যদি এত টাকা হারিয়ে যেত, আমিও তো কষ্ট পেতাম, সমস্যায় পড়তাম। একজন মানুষ কতটা বপদে পড়তে পারে এতগুলো টাকা হারিয়ে গেলে, সেদিক চিন্তা করে টাকা ফেরতের জন্য আকুল হয়েছিলাম।
কুহেলির সঙ্গে প্রতুল বসাক নামে এক যুবক ব্যাগটি লক্ষ্য করেন। দু'জনে মিলেই ব্যাগটি ফেরতের জন্য চেষ্টা করেন। দু'জনকে দু'হাজার টাকা করে মিষ্টি খেতে দেন উজ্জ্বলবাবু।