প্রকাশ্যে আঙুল দেখিয়ে আইসিকে ধমক রাজ্যপালের! এই তাণ্ডবনৃত্য দেখা যায় না, সাংবাদিকদের বললেন ধনখড়
রাজ্যপালের কোচবিহার সফর ঘিরে প্রথম থেকেই উত্তেজনা। বুধবারই তাঁর এই সফর ঘিরে প্রশ্ন তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে রাজ্যপালকে সরকারি প্রোটোকল মনে করান তিনি। পালটা রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানকে চিঠি দেন রাজ্যপালও।
রাজ্যপালের কোচবিহার সফর ঘিরে প্রথম থেকেই উত্তেজনা। বুধবারই তাঁর এই সফর ঘিরে প্রশ্ন তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে রাজ্যপালকে সরকারি প্রোটোকল মনে করান তিনি। পালটা রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানকে চিঠি দেন রাজ্যপালও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে আটকাতে পারেন না, কড়া চিঠিতে মমতাকে লেখেন। কার্যত রাজ্যপালের এই সফর ঘিরে তুঙ্গে নবান্ন-রাজভবন সংঘাত। এমনকি বৃহস্পতিবার সকালে কোচবিহার পৌঁছেও একের পর এক জায়গাতে রাজ্যপালকে দেখানো হয় কালো পতাকা। দেওয়া হয় স্লোগানও।
সংবিধান রক্ষা করতেই শীতলকুচিতে, মুখ্যমন্ত্রী মমতার অনুমতি নেওয়া প্রসঙ্গ বিস্ফোরক রাজ্যপাল ধনখড়
উত্তপ্ত দিনহাটা, আইসিকে ধমক রাজ্যপালের
সেনাবাহিনীর কপ্টারে এদিন কোচবিহার যান রাজ্যপাল। সেখান থেকে সড়ক পথেই একের পর এক সন্ত্রাস কবলিত এলাকাতে পৌঁছান ধনখড়। কিন্তু বিভিন্ন জায়গাতে তাঁকে লক্ষ্য করে গো ব্যাক স্লোগান দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তেমনই দিনহাটা পৌঁছতেই সেখানেও তৃণমূল কর্মীরা রাজ্যপালকে দেখে গো ব্যাক স্লোগান দিতে থাকেন। কার্যত তা দেখে মেজাজ হারান তিনি। গাড়ি থামিয়েই পথে নেমে পড়েন তিনি। দিনহাটা থানার আইসিকে ডেকে পাঠান। রাজ্যপালের সামনে আসতেই প্রকাশ্যে আইসিকে ধমক রাজ্যপালের। পুলিশ প্রশাসন থাকা স্বত্বেও কি হচ্ছে এটা? পালটা প্রত্যুত্তরে আইসি জানান, আমাদের কাছে খবর ছিল আপনি কোচবিহারের দিকে যাবেন। যা শুনে আরও রেগে যান রাজ্যপাল। বলেন, আপনাদের কাছে সবরকমের বক্তব্য রয়েছে। কিন্তু এগুলি সামাল দেওয়ার মতো ক্ষমতা নেই।
‘তাণ্ডবনৃত্য দেখা যায় না’!
সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। মানুষ বলছেন, তাঁরা গণতন্ত্রে শ্বাস নিতে চান। কোচবিহারের মাথাভাঙা এবং শীতলখুচি পরিদর্শন করে সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের। বৃহস্পতিবার কোচবিহারে পৌঁছে প্রথমে মাথাভাঙার ছাটখাটের বাড়ি এলাকা পরিদর্শন করেন ধনখড়। তার পর শীতলকুচি বিধানসভা কেন্দ্রের ছোট শালবাড়ি এলাকাও পরিদর্শন করেন তিনি। এর পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ''যখন এখানে আসার কথা ভাবছিলাম, তখন ভয়ঙ্কর সব তথ্য পেয়েছিলাম। এসে বুঝলাম, এই তাণ্ডব নৃত্য দেখা যায় না। পুলিশ পশাসনের ভূমিকা নিয়েও এদিন প্রশ্ন তোলেন মমতা! তিনি বলেন, ওরা বলছে, 'প্রশাসনের কেউ আসেনি। পুলিশে গেলে বরবাদ হয়ে যাব'। আমার মনে হচ্ছে, এখানে পুলিশ এবং প্রশাসনের হৃদয় নেই। আইনের শাসন নেই। ঘরে-বাইরে আতঙ্ক, সন্ত্রাসের বাতাবরণ। আমার নিজের উপর লজ্জা হচ্ছে। দেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলি কী করছে! ওরা কি দেখতে পায় না?''
পুলিশের সামনেই রাজ্যপালকে গো ব্যাক স্লোগান
শীতলকুচি যাওয়ার পথে বিক্ষোভের মুখে পড়লেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। তাকে লক্ষ্য করে উঠল 'গো ব্যাক' স্লোগান। ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। জানা যায়, সেনাবাহিনীর কপ্টারে এদিন কোচবিহারে যান রাজ্যপাল। সেখান থেকে সড়কপথে শীতলকুচির উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। মাথাভাঙা, শীতলকুচি, সিতাই ও দিনহাটার হিংসা কবলিত এলাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি। শীতলকুচি-সহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁকে লক্ষ্য করে 'গো ব্যাক' স্লোগান ওঠে। এমনকি রাস্তার ধারে একাধিক জায়গাতে তাঁকে লক্ষ্য করে কাল পতাকাও দেখানো হয় বলে অভিযোগ। এমনকি পুলিশের সামনেই কালো পতাকা দেখানো হয় বলে অভিযোগ। এই বিষয়ে কোনও ব্যবস্থাই পুলিশের তরফে নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
যে কোনও জায়গাতে যাওয়ার অধিকার আছে
স্বাধীন ভারতের নাগরিকদের দেশের যে কোনও জায়গায় যাওয়ার অধিকার আছে। এদিন বিএসএফ-এর হেলিকপ্টারে কোচবিহার বিমানবন্দরে নেমে এমনটাই মন্তব্য করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় (jagdeep dhankhar)। এদিন তিনি একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (mamata banerjee) নিশানা করেন। রাজ্যপাল যে শীতলকুচি যেতে চান তা রাজ্য সরকারকে জানিয়েছিলেন। এর পাল্টা মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বলেছিলেন তাঁর (মুখ্যমন্ত্রী) অনুমতি নিতে হবে। যা নিয়ে এদিন রাজ্যপাল চূড়ান্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, তাঁকে জিজ্ঞাসা করে যেতে হবে। কিন্তু তিনি বলে দিতে চান, স্বাধীন ভারতে প্রত্যেকটি নাগরিকের যে কোনও জায়গায় যাওয়ার অধিকার আছে।
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন
রাজ্যপাল বলেন, ১০ এপ্রিল শীতলকুচিতে গুলি চালনার দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন ঠান্ডা মাথায় খুন। কিন্তু সেই খুন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঘটছে। রাজনৈতিক উদ্দেশেই তা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, বাংলার পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার মানুষ উদ্বেগে রয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, এইসব ঘটনায় যেন সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। তিনি বলেন. প্রশাসনিক আধিকারিকদের হাতে মুঠোয় না রেখে তাঁদের কাজ করতে দেওয়া হোক। তিনি প্রশ্ন করেন, কিছু লোকের সাহস হয় কী করে, আইন হাতে তুলে নেওয়ার। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রীকে এব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে তিনি বলেছিলেন, কিন্তু তা এখনও পর্যন্ত তা নেওয়ার কোনও ভূমিকা তাঁর চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্যপাল।