গুরুংয়ের মরণপণ সংগ্রাম মাটি ফিরে পেতে, পাহাড় এখন অজয়-অনীতদের দিকেই
বিগত চার বছরে তাঁর পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে, তা যে কোনও মূল্যে তিনি ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন। পাহাড়ে প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে তিনি মরণপণ ‘সংগ্রামে’ নেমেছেন।
বিগত চার বছরে তাঁর পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে, তা যে কোনও মূল্যে তিনি ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন। পাহাড়ে প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে তিনি মরণপণ 'সংগ্রামে' নেমেছেম। আমরণ অনশনে চারদিনেই কাহিল হয়ে পড়লেও রণে ভঙ্গ দেওয়ার পাত্র নন তিনি। যতক্ষণ না রাজ্যের তরফে বার্তা আসে, তিনি এই লড়াই চালিয়েই যাবেন।
সমর্থন সরে গিয়েছে, পাহাড়-শাসনে অন্যমুখ
রাজ্যের প্রতি আস্থা রেখেই জিটিএ নির্বাচনের বিরোধিতা চালিয়ে যাচ্ছেন গোর্খা জনমুক্তি প্রধান বিমল গুরুং। আসলে তাঁর এই লড়াই তো শুধু জিটিএ নির্বাচনের বিরোধিতায় থেমে নেই। তিনি চাইছেন পাহাড়ে পুরনো গুরুত্ব ফিরে পেতে। বিগত চার বছরে আস্তে আস্তে তাঁর দিক থেকে সমর্থন সরে গিয়েছে। পাহাড়-শাসনে উঠে এসেছে অন্যমুখ।
বিমল গুরুংয়ের মোর্চা ভাগ হয়ে গিয়েছে পাহাড়ে
বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে ছিলেন যাঁরা, তাঁরা দু-ভাগ বা তিন ভাগ হয়ে গিয়েছেন। অনীত থাপা নতুন দল গড়ে পাহাড়ের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছেন। আর এক সঙ্গী বিনয় তামাং যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। বিনয় তামাং গোষ্ঠীর অনেকেই এখন তৃণমূলের সঙ্গে। অনেকে অনীত থাপার সঙ্গে। অনীত থাপা গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা গড়ে তিনি পাহাড়ের ভবিষ্যৎ নেতা হয়ে উঠেছেন।
লড়াই থেকে একেবারে ছিটকে গিয়েছেন বিমল গুরুং
পাহাড়ে সবথেকে বেশি উত্থান হয়েছে হামরো পার্টির। জিএনএলএফ ছেড়ে অজয় এডওয়ার্ড হামরো পার্টি গড়ার চার মাসের মধ্যেই পাহাড়ে বিপুল সাফল্য পেয়েছেন। তিন দার্জিলিং পুরসভা নির্বাচনে আশাতীত জনসমর্থন নিয়ে জিতে এসেছেন। দ্বিতীয় হয়েছে অনীত থাপার গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। আর লড়াই থেকে একেবারে ছিটকে গিয়েছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুং।
মন্ত্রীর আশ্বাসেও বরফ গলছে না বিমল গুরুংয়ের
এই অবস্থায় তিনি কোনও নির্বাচনে লড়তে চাইছেন না বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত। তিনি রাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়াতে আমরণ অনশনে বসেছেন। নির্বাচনের বিরোধিতা করে তাঁর অনশন চললেও রাজ্য সরকারের তরফে এখনও কোনও সাড়া মেলেনি। রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ ও আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী বুলুচিক বরাইক তাঁর সঙ্গে দেখা করে গেলেও বরফ গলছে না তাতে।
অনুরোধ-উপরোধেও সিদ্ধান্ত থেকে অনড় গুরুং
বিমল গুরুং তাঁকে সাফ জানিয়ে গিয়েছেন সরকারিভাবে কোনও বার্তা না এলে তিনি অনশনের পথ থেকে সরবেন না। হামরো পার্টি ও ভারতীয় গোর্খা সুরক্ষা পরিষদের সুপ্রিমোরা তাঁর সঙ্গে দেখা করলেও রাজ্যের পক্ষ থেকে যতক্ষণ না কোনও যোগাযোগ স্থাপন করা হচ্ছে, তিনি ঈন্দোলন চালিয়ে যাবেন। দার্জিলিংয়ের সিংমারিতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন গুরুং, কোনও অনুরোধ-উপরোধে তিনি সরছেন না এই সিদ্ধান্ত থেকে।
বিকল্প কোনও পথ নেই, গুরুংয়ের পাশে কেউ নেই
কিন্তু এই অনশন থেকে তাঁর কি অভীষ্ট সিদ্ধ হবে, তিনি মোক্ষলাভ করতে পারবেন? অন্তত পরিস্থিতি বলছে না। কারণ তাঁর ডাকে আগের মতো পাহাড় সাড়া দেয়নি, পাহাড় এগিয়ে আসেনি তাঁর সমর্থনে। আসবে পাহাড়ের মানুষ মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। তাঁরা এখন নতুন নেতৃত্ব চাইছে। হামরো পার্টির অজয় এডওয়ার্ডস ও গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার অনীত থাপার প্রতি তাঁরা আস্থাভাজন হয়েছেন। আসলে পাহাড় যে সময় নতুন নেতৃত্ব চাইছিল, সেই সময়ই দুই নেতার উত্থান হয়েছে। ফলে পাহাড়ের মন বদল হয়েছে। তাই গুরুং-রাজ ফিরবে কি না, তা চরম অনিশ্চিত। পরিস্থিতি যা অনষন তোলা ছাড়া বিকল্প কোনও পথ নেই গুরুংয়ের। কেননা গুরুংয়ের পাশে কেউ নেই।
ছবি সৌ:ফেসবুক
জিটিএ ভোটের প্রস্তুতির মধ্যে পাহাড়ে রাজ্যপাল, সঙ্কটে গুরুংয়ের শারীরিক অবস্থা