Tokyo Paralympics : ভারতের সফলতম অভিযানের সমাপ্তিতে অবনীর হাতে তেরঙা, দেশে অভ্যর্থনা প্যারা অ্যাথলিটদের
টোকিও প্যারালিম্পিকের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ভারতের পতাকা বহন করলেন অবনী লেখারা।
করোনা ভাইরাসের আবহে যতটা ধুমধাম করে টোকিওয় শুরু হয়েছিল প্যারালিম্পিক, ততটাই উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে শেষও হল প্রতিযোগিতা। নানা রঙের আলোয় আলোকিত সন্ধ্যায় বিশ্ব প্রত্যক্ষ করল এক অন্য আবহ। যার মূল কথা সামাজিক ঐক্য এবং এগিয়ে চলা। জাপানের রাষ্ট্রনেতারদের উপস্থিতি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আতসবাজির ফোয়ারার ভেসে প্যারা অ্যাথলিটদের ফ্ল্যাগ মার্চে আমোদিত হল টোকিওর অলিম্পিক স্টেডিয়াম। নিজেদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি দিয়ে বিভিন্ন দেশের প্যারা-অ্যাথলিটদের বরণ করে নিল জাপান। চ্যাম্পিয়নদের প্রত্যক্ষ করল বিশ্ব। ভারতের সফলতম প্যারালিম্পিকের সমাপ্তিতে তেরঙা হাতে মার্চে অংশ নিলেন প্রতিযোগিতা থেকে দুই পদকজয়ী অবনী লেখারা। একই দিনে দেশে পৌঁছে রাজকীয় অভ্যর্থনা পেলেন ভারতীয় প্যারা অ্যাথলিটরা।
|
অবনীর হাতে ভারতের পতাকা
টোকিও প্যারালিম্পিকে মোট ১৯টি পদক জিতেছে ভারত। যা সর্বকালীন রেকর্ড। কারণ এর আগের কোনও প্যারালিম্পিকে এত সফল হয়নি দেশ। অন্যান্য সংস্করণে ভারত থেকে এত সংখ্যক অ্যাথলিটও প্যারা গেমসে নেয়নি। এ সফলতার অন্যতম অংশীদার অবনী লেখারাকে টোকিও প্যারালিম্পিকের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে দেখা গেল দেশের হয়ে প্রধান ভূমিকায়। টোকিও গেমস থেকে একটি সোনা এবং ব্রোঞ্জ জেতা শুটারকে দেশের পতাকা হাতে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেল। হুইল চেয়ারে বসে তেরঙা বহন করা অবনীকে অনুসরণ করলেন ১১ জন ভারতীয় সদস্য। যা দেখে আবেগতাড়িত হয়েছেন দেশের ক্রীড়াপ্রেমীরা।
আলোয় আলোকিত সন্ধ্যা
অলিম্পিকের রেশ নিয়ে গত ২৪ অগাস্ট রঙিন আলো ও আতসবাজির ভেলায় ভেসে টোকিওয় শুরু হয়েছিল প্যারালিম্পিক। করোনা ভাইরাসের আবহে বর্নাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাচ, গানের মুখরিত হয়েছিল দর্শকশূন্য স্টেডিয়াম। একই আবেগ চোখে পড়ল প্রতিযোগিতার সমাপ্তি অনুষ্ঠানেও। নিজেদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি দিয়ে বিভিন্ন দেশের প্যারা-অ্যাথলিটদের বরণ করে নিল জাপান। যাঁদের আবেগপূর্ণ ফ্ল্যাগ মার্চে সম্বৃদ্ধ হল পরিবেশ। চ্যাম্পিয়নদের প্রত্যক্ষ করল বিশ্ব। ভিআইপি বক্সে বসে অনুষ্ঠান উপভোগের পাশাপাশি সব দেশের প্যার-অ্যাথলিটদের হাত নাড়িয়ে অভিবাদন জানান জাপানের রাজা নারুহিতো ও প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা। এক বালকের কাহিনি দিয়ে শুরু হয় টোকিও প্যারালিম্পিকের সমাপ্তি অনুষ্ঠান। যে প্যারালিম্পিক গেমস প্রত্যক্ষ করার পর এর গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত হয়। এরপর নানা ঘটনাক্রমের মাধ্যমে সাজিয়ে তোলা হয় অপরূপ সন্ধ্যা। মঞ্চে তৈরি করা হল প্যারালিম্পিকের প্রতীক আজিতো।
প্যারিসের হাতে পতাকা
জাপানে প্যারালিম্পিক শেষ হতেই প্যারিসের অপেক্ষা শুরু হয়ে গেল। টোকিওর অলিম্পিক স্টেডিয়ামে উড্ডীয়মান প্যারালিম্পিকের পতাকা নামিয়ে তা প্যারিসের প্রতিনিধির হাতে তুলে দেওয়া হয়। দেখানো হয় এ সংক্রান্ত এক ভিজুয়াল প্রেসেন্টেশন। টোকিও গেমসের স্বেচ্ছাসেবকদের হাততালি দিয়ে অভিবাদন জানানোর পাশাপাশি সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ ও শিশুদের জন্য নিয়ত কাজ করে চলা ব্যক্তিদের আই অ্যাম পসিবল পুরস্কার দিল ইন্টারন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটি। প্যারা গেমসের অ্যান্থেম ও সমবেত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এই সন্ধ্যাকে আরও উজ্জ্বল করে।
করোনা বিধি মেনেই অনুষ্ঠান
করোনা ভাইরাসের আবহে দর্শক শূন্য স্টেডিয়ামেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল টোকিও প্যারালিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। একই নিয়ম বজায় থাকল সমাপ্তির প্রাঙ্গনেও। প্রতিযোগিতা চলাকালীন অলিম্পিকের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বে়ড়েছে। তাতে গেমসের চলনে কোনও বাধা আসেনি। অতিমারীর আবহে প্রশাসনের নির্দেশ মেনে কড়া বিধিতে নিজেদের আটকে রেখেছিলেন প্যারা অ্যাথলিটরাও। তাই গেমসের সমাপ্তি অনুষ্ঠানেও কোভিড প্রোটোকল মেনে তাঁদের মুখে মাস্ক পরেই টোকিওর অলিম্পিক স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে দেখা যায়। অতিমারীর আবহে সাবধনতা অবলম্বনে ফাঁকা রাখা হয় দর্শকাসনও।
বিদায় বন্ধু
সবশেষে মঞ্চে বিদায় সম্ভাষণ জানালেনে ইন্টারন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটির সভাপতি অ্যান্ড্রু পার্সনস। দুর্যোগ ও প্রতিবন্ধকতার আবহে টোকিওয় অনুষ্ঠিত হওয়া অলিম্পিকই যে সর্বকালের সেরা, তা তিনি সরাসরি জানালেন। প্যারা অ্যাথলিটদের আরও অনুপ্রাণিত করার পাশাপাশি অতিমারীর আবহে যে বীরত্বের সঙ্গে জাপান প্রতিযোগিতা সফলভাবে আয়োজন করে দেখিয়েছে, তাতে তাঁরা অনুপ্রাণিত হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন আইপিসি প্রধান। সবশেষে জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানালেন পার্সনস। ধন্যবাদ জানালেন আয়োজক কমিটিকে। বিশ্বকে আরিগাতো অর্থাৎ বিদায় জানাল টোকিও।
ভারতে প্যারা অ্যাথলিটদের নিয়ে উচ্ছ্বাস
টোকিও প্যারলিম্পিকে রুপোজয়ী ভাবিনা প্যাটেল, মারিয়াপ্পান থাঙ্গাভেলু সহ অ্যাথলিটদের আরও একটি দল। দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁদের ফুল, মালা, উপহার দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। তামিলনাড়ুর সালেমের বাসিন্দা মারিয়াপ্পানের সঙ্গে চেন্নাইয়ে দেখা করেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। চেন্নাই পৌঁছে আবেগ ও উচ্ছ্বাসে ভেসে যান টোকিও গেমসে রুপোজয়ী প্যারা হাই জাম্পার। মারিয়াপ্পানকে ছোঁয়ার জন্য বিমানবন্দরে ভিড় ছিল দেখার মতো।