সাথিয়ানের সঙ্গে জুটিতে খেতাব জয় মনিকার, টিটি-র জন্য ছেড়েছিলেন লোভনীয় প্রস্তাব
টোকিও অলিম্পিকে ব্যর্থতা, সেই সঙ্গে বিতর্ক। এই দুইয়ের কারণে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না মনিকা বাত্রার। টেবিল টেনিস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া তাঁকে শোকজ করেছে। যার উত্তর মনিকা কী দেন, শাস্তি এড়াতে পারেন কিনা, সেদিকে সকলের নজর রয়েছে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক আসরে নতুন ভোরের সন্ধান পেলেন মনিকা বাত্রা। জি সাথিয়ানের সঙ্গে জুটি বেঁধে আন্তর্জাতিক ওয়ার্ল্ড ট্যুর খেতাব জিতে গড়লেন ইতিহাস।
|
মিক্সড ডাবলস খেতাব জয়
বুদাপেস্টে ওয়ার্ল্ড টেবিল টেনিস কনটেন্ডারে মিক্সড ডাবলস খেতাব জিতল মনিকা বাত্রা ও জি সাথিয়ান জুটি। মিক্সড ডাবলসে এই সাফল্য এক অন্য মাত্রা যোগ করেছে, কারণ সাথিয়ানের সঙ্গে খুব বেশি মিক্সড ডাবলস খেলেন না মনিকা। এশিয়ান গেমসে অচন্ত শরথ কমলের সঙ্গে জুটিতে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। এবার অলিম্পিকেও অভিজ্ঞ শরথ কমলের সঙ্গেই মিক্সড ডাবলসে নামেন মনিকা। কিন্তু প্রথমেই বিদায় নিতে হয়। কিন্তু বুদাপেস্টে ডব্লুটিটি কনটেন্ডারে মনিকা-সাথিয়ান জুটি হারাল হাঙ্গেরির ডোরা মাদারাজ ও নান্দোর এক্সেকি জুটিকে, ৩-১ ব্যবধানে। খেলার ফল ১১-৯, ৯-১১, ১২-১০, ১১-৬। ভারতীয় মিক্সড ডাবলস জুটির এটিই প্রথম আন্তর্জাতিক ট্যুর খেতাব। মনিকা-সাথিয়ানের এই সাফল্যে অভিনন্দন জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। যদিও টেবিল টেনিস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার টুইটে মনিকাদের সাফল্য নিয়ে কোনও পোস্ট করা হয়নি।
|
বুদাপেস্টে মনিকা
মিক্সড ডাবলসে ইতিহাস গড়লেও অলিম্পিকের পর বুদাপেস্টেও সিঙ্গলস খেতাব জিততে পারেননি মনিকা। তিনি এই প্রতিযোগিতায় ছিলেন ষষ্ঠ বাছাই। মনিকা বিশ্বের ৬০ নম্বর প্যাডলার। সেমিফাইনালে তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন বিশ্বের ৪১৫ নম্বর প্যাডলার তথা অনূর্ধ্ব ১৯ ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন অষ্টাদশী এলিজাবেথ আব্রামিয়ান। মনিকাকে তিনি হারান ১২-১০, ১১-৯, ১২-১০, ১১-৮-এ। মনিকা কোয়ার্টার ফাইনালে হারান বিশ্বের ১৫০ নম্বরে থাকা ভারতের সৃজা আকুলাকে। উল্লেখ্য, অলিম্পিকে তাঁর খেলার সময় নিজের কোচকে না পেয়ে ভারতীয় টিটি দলের কোচ সৌম্যদীপ রায়ের সাহায্য নিতে অস্বীকার করেছিলেন মনিকা। সৌম্যদীপকে তাই মনিকার খেলার সময় দেখা যেত না। মনিকার কোচ বসে থাকতেন গ্যালারিতে, সেখান থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতেন। এতেই শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে মনিকাকে শোকজ করে টিটিএফআই। এমনকী তিনি সদুত্তর দিতে না পারলে বড় শাস্তির মুখেও পড়তে পারেন।
চার বছরে খেলা শুরু
মনিকা টেনিস খেলছেন চার বছর বয়স থেকে। তিনিই ভাই-বোনদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। দাদা ও দিদিকে টিটি খেলতে দেখেই এই খেলার প্রতি আগ্রহ জন্মায়। সেখান থেকে শুরু করে প্রথম ভারতীয় টিটি খেলোয়াড় হিসেবে তিনি রাজীব গান্ধী খেলরত্ন সম্মানে ভূষিত হন গত বছর। মনিকা জানিয়েছিলেন, সন্দীপ গুপ্তার প্রশিক্ষণেই তিনি ধাপে ধাপে আন্তর্জাতিক স্তর অবধি পৌঁছেছেন। রাজ্য স্তরে পদক জেতার সঙ্গে সঙ্গেই মনিকা স্বপ্ন দেখতেন দেশের হয়ে পদক জেতার। দেশের হয়ে ক্রীড়াবিদদের পদক জয়ের খবর অনুপ্রাণিত করত মনিকাকে।
কেরিয়ার গ্রাফ
১৯৯৫ সালের ১৫ জুন দিল্লির নারায়ণা বিহারে জন্ম। জাতীয় স্তরের টিটি প্রতিযোগিতায় পদক প্রথম জেতেন ১৫ বছর বয়সে। এরপর হংসরাজ মডেল স্কুলে ভর্তি হন। সেখানেই কোচ হিসেবে পান সন্দীপ গুপ্তাকে। যাঁর প্রশিক্ষণে মনিকার প্রতিভা বিকশিত হতে থাকে। জেসাস ও মেরি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু টিটি খেলার কারণেই একটা বছর নষ্ট হয়। তবে এই ত্যাগ তার কাছে আশীর্বাদ হয়েই নেমে এসেছে বলে অনুভব করেন মনিকা বাত্রা। ২০১১ সালে চিলি ওপেনে অনূর্ধ্ব ২১ বিভাগে রুপো জেতেন মনিকা। ২০১৪ সালের এশিয়ান গেমসে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠেন। ২০১৫ সালের কমনওয়েলথ গেমসে জেতেন তিনটি পদক। ২০১৬ সালের সাউথ এশিয়ান গেমসে জেতেন ৩টি সোনা-সহ চারটি পদক জেতেন। রিও অলিম্পিকে অবশ্য বিদায় নিয়েছিলেন প্রথম রাউন্ড থেকেই। সেই তুলনায় টোকিওয় পদকের আরও কাছাকাছি পৌঁছালেও শেষরক্ষা হয়নি। বিদায় নিতে হয় তৃতীয় রাউন্ড থেকে। যদিও মনিকাই প্রথম ভারতীয় যিনি অলিম্পিক টিটির সিঙ্গলসে তৃতীয় রাউন্ড অবধি পৌঁছানোর কৃতিত্ব অর্জন করেন।
সোনালি সাফল্য
২০১৮ সালের কমনওয়েলথ গেমসে দুটি সোনা, একটি রুপো জিতেছিলেন। ব্রোঞ্জ জেতেন মিক্সড ডাবলসে। ২০১৮ সালের এশিয়ান গেমসেও মিক্সড ডাবলসে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। মিক্সড ডাবলসে সোনা জিতেছিলেন ২০১৬ সালের সাউথ এশিয়ান গেমসে।
মডেলিংয়ের প্রস্তাব
গ্ল্যামারাস মনিকা টেবিল টেনিস খেলার পাশাপাশি নানা সময় মডেলিংয়ের প্রস্তাব পেয়েছেন। কিন্তু টিটিতে মনঃসংযোগের কারণে প্রতিবারই সেইসব প্রস্তাব ফিরিয়েছেন। আইটিটিএফ ২০১৮ সালে তাঁকে ব্রেকথ্রু স্টার অ্যাওয়ার্ড দেয়। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ফেমিনা ম্যাগাজিনের কভারেও মনিকার ছবি ছাপা হয়। এরপর ওই বছরই ভোগ ম্যাগাজিনের নভেম্বর সংখ্যার কভারে স্থান পান মনিকা বাত্রা। কিন্তু খেলার দুনিয়া ছেড়ে এখনও গ্ল্যামার দুনিয়ায় পা রাখার কোনও ইচ্ছাই নেই মনিকা বাত্রার। দেশকে পদক জেতানোর লক্ষ্য নিয়েই আপাতত এগিয়ে চলেছেন।
(ছবি- সাই মিডিয়া)